অতিবিশুদ্ধ পানি উৎপাদনে নতুন সম্ভাবনা

গবেষণাগারে সহকর্মীর সঙ্গে লাজিনা ইবনাত জামান (ডানে)
আসিফ খান
প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২৩:৫২ | আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১১:১৫
খাবার পানি থেকে অতিবিশুদ্ধ পানি উৎপাদনের ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন গবেষক লাজিনা ইবনাত জামান। যুক্তরাজ্যের কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনে তিনি কম খরচে অতিবিশুদ্ধ পানি উৎপাদনের ওপর গবেষণা পরিচালনা করেছেন। এ প্রযুক্তি বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যাল ও সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে এক বিপ্লব ঘটাতে পারে।
লাজিনা জামান জানান, মিনারেল ওয়াটার বা ভূগর্ভস্থ পানি থেকে অতিবিশুদ্ধ পানি উৎপাদন করলে ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে এটি ব্যবহার করা সম্ভব। এটি শুধু উৎপাদন খরচ কমাবে না; বরং স্থানীয় কাঁচামালের ওপর নির্ভরতা বাড়াবে। কুইন মেরি ইউনিভার্সিটির সহযোগিতায় পরিচালিত তাঁর গবেষণায় বিশেষত প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পে এই পানি ব্যবহৃত হয় মূলত ইনজেকশন, আইভি ফ্লুইড এবং অ্যান্টিবায়োটিক উৎপাদনের সময়। অন্যদিকে সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনে চিপ ধোয়া, মাইক্রোস্কোপিক কণা অপসারণ এবং ওয়েফার ক্লিনিংয়ে অতিবিশুদ্ধ পানি অপরিহার্য।
বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে ১ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্য নিয়েছে। বাংলাদেশ সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিএসআইএ) জানিয়েছে, এই শিল্পে ব্যবহৃত পানি ৯৯.৯৯ শতাংশ বিশুদ্ধ হতে হয়, যা সাধারণ পানির চেয়ে বহুগুণ বেশি প্রক্রিয়াজাত।
বাংলাদেশে ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিক এবং অন্যান্য খনিজ উপাদান বেশি থাকার কারণে এখান থেকে অতিবিশুদ্ধ পানি উৎপাদন সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল। তবে লাজিনা জামান উদ্ভাবিত প্রযুক্তির মাধ্যমে অল্প সময়ে এবং কম খরচে এ পানি উৎপাদন সম্ভব। ড্রিংকিং ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টগুলো ভূগর্ভস্থ পানি প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে জীবাণুমুক্ত ও নিরাপদ পানি সরবরাহ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, এসব প্লান্ট থেকে অতিবিশুদ্ধ পানি উৎপাদন করলে খরচ প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে।
ড্রিংকিং ওয়াটার প্লান্টে আগে অতিবিশুদ্ধ পানি উৎপাদনে খরচ হতো প্রতি গ্যালনে ১ থেকে ৩ ডলার। সেখানে রিভার্স অসমোসিস (আরও), আলট্রাফিলট্রেশন এবং ডিস্টিলেশন প্রক্রিয়া সংযোজন করলে খরচ কমে ০.৫ ডলারে নেমে আসে।
লাজিনা জামান বলেন, ‘সঠিক পদক্ষেপ নিলে বাংলাদেশ সেমিকন্ডাক্টর ও ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে বিপ্লব ঘটাতে সক্ষম হবে। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা আন্তর্জাতিক মানের শিল্প খাতে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করতে পারব।’
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক লাজিনা ইবনাত জামান যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যাডভান্সড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে এমফিল সম্পন্ন করেছেন এবং কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
- বিষয় :
- পানি
- বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ
- গবেষণা