ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

সেনাসদরের ব্রিফিং

গুমসংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেলে সেনাসদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

মব ভায়োলেন্স ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে

গুমসংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেলে সেনাসদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

প্রেস ব্রিফিংয়ে কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম

 বিশেষ প্রতিনিধি 

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৫ | ০১:৪৮

গুমের ঘটনায় সেনাবাহিনীর কোনো সদস্যের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হলে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সেনাসদর। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সামরিক অপারেশনস পরিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম এ কথা জানান। 

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর বিভিন্ন সদস্য ডেপুটেশনে (প্রেষণে) বিভিন্ন সংস্থায় থাকেন। এ সংস্থাগুলো আমাদের সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। 
কর্নেল মো. শফিকুল বলেন, কিছু সেনাসদস্য যারা ডেপুটেশনে ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ আসায় তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্তে তাদের বিরুদ্ধে যদি গুমসংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে অবশ্যই সেনাবাহিনী আইনি ব্যবস্থা নেবে। সেনাবাহিনী এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছে, ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে।  

ভুক্তভোগী পরিবারদের উদ্দেশে শফিকুল বলেন, যদি কেউ নিজের নিরাপত্তা নিয়ে সেনাবাহিনীর কাছে সহযোগিতা চান, আমরা যথাযথভাবে সহযোগিতা করব।
নির্বাচন প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে কর্নেল শফিকুল জানান, জাতীয় নির্বাচন একটি রাষ্ট্রীয় বিষয়। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নীতিনির্ধারকরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন বলে আমরা মনে করি। নির্বাচন কমিশন থেকে এখনও কোনো নির্দেশনা পাইনি। নির্দেশনা পাওয়ামাত্র আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনার জন্য সব ধরনের সহায়তা করব। 

থানার অস্ত্র লুটের বিষয়ে তিনি বলেন, লুটের অস্ত্রের প্রায় ৮০ শতাংশ ইতোমধ্যে উদ্ধার  হয়েছে। বাকি ২০ শতাংশ নির্বাচনের আগেই উদ্ধার হবে বলে আশাবাদী। 
কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে কর্নেল শফিকুল ইসলাম জানান, সেনাবাহিনী এরই মধ্যে ৪০০ জনেরও বেশি কিশোর গ্যাং সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। অলিগলিতে সেনাবাহিনী সব সময় থাকতে পারে না, তবে তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছে। 

তিনি বলেন, গত দুই সপ্তাহে সেনাবাহিনী ২৬টি অবৈধ অস্ত্র ও ১০০ রাউন্ড গুলির খোঁজ পেয়েছে। আর গত আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত উদ্ধার করা হয়েছে ৯ হাজার ৬৯২টি অস্ত্র। একই সময়ে সেনাবাহিনী ১৫ হাজার ৬৪৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে এ কর্মকর্তা বলেন, মবের ঘটনা প্রত্যাশিত নয়। এ ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার আছি। পটিয়ার ঘটনায় সেনাবাহিনী দ্রুত সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। 
কথিত জনতার মাধ্যমে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদাকে হেনস্তা করার বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন ওঠে সংবাদ সম্মেলনে। জবাবে কর্নেল শফিকুল বলেন, এ ঘটনার পরের দিনই একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশে হস্তান্তর করি। এর পর যদি কেউ জামিন পেয়ে যায়, তাহলে সেনাবাহিনীর কিছু করার থাকে না। এ ধরনের ঘটনায় সেনাবাহিনী সব সময় সোচ্চার।
কুমিল্লার মুরাদনগরের একটি গ্রামে সংঘটিত নারী নির্যাতনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর সেনাবাহিনী স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে উল্লেখ করে ব্রিফিংয়ে বলা হয়, মূল আসামি ফজর আলী এবং আরও চার ভিডিও ধারণকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সেনাবাহিনী ভুক্তভোগী পরিবারের সুরক্ষা ও সামাজিক মর্যাদা রক্ষা কার্যক্রমে পূর্ণ সহযোগিতা করছে। 
গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে বান্দরবানের রুমার দুর্গম পাহাড়ে সেনা অভিযানে কেএনএর দু’জন নিহত হয়। এ ঘটনা পাহাড়ে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে মন্তব্য করে কর্নেল শফিকুল বলেন, কেএনএফের ভয়ে যেসব বম পরিবার চলে গিয়েছিল, তারা ফিরে আসতে শুরু করেছে। ১৩৮ জন তাদের বসতভিটায় ফিরে এসেছে। 
এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গুমের ঘটনা তদন্তে গত আগস্টে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠন করে সরকার। গুমের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর কার কী ভূমিকা ছিল, তা গত ৪ জুন জমা দেওয়া কমিশনের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। 


 

আরও পড়ুন

×