কফির উষ্ণতায় ‘একান্ত সময়’

কাজী অহনা
প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২৩ | ০৯:৩৮ | আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২৩ | ০৯:৩৮
দিনের শুরুটা যদি হয় ধোঁয়া উঠা এক কাপ কফি হাতে পছন্দের গান শুনতে শুনতে তাহলে কেমন লাগবে? নিশ্চয়ই অসাধারণ। আবার বিকেলের অবসরে পছন্দের বই পড়তে পড়তে কফির কাপে চুমুক কিংবা অলস দুপুরে সিনেমা দেখার ফাঁকে ফাঁকে কফি পান আপনাকে দেবে অন্য এক অনুভূতি। কফির উষ্ণতায় আপনার একান্ত মুহূর্তগুলো হয়ে উঠবে আরও মোহনীয়।
আজ ১ অক্টোবর। আন্তর্জাতিক কফি দিবস। পানীয় হিসেবে বিশ্বে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে কফি। চমৎকার এই পানীয় হতে পারে আপনার একান্ত সময়ের দারুণ সঙ্গী।
কোলাহলপূর্ণ ব্যস্ত এই নগরজীবনে নিজের সাথে সময় কাটানোর ‘সময়’যেন বিলুপ্তির পথে। পড়ালেখা, কর্মজীবন, পরিবার, বন্ধু সবার জন্য আমরা সময় বের করলেও নিজের জন্য দিনশেষে কতটুকু সময়ই বা বের করতে পারি? শেষ কবে নিজেকে সময় দিয়ে, নিজের পছন্দের কোনো কাজ করেছেন মনে পড়ে কী?
‘মি টাইম’কিংবা ‘নিজের সাথে একান্ত সময়’ বলতে মূলত বোঝানো হয় দিনের কিছু নির্দিষ্ট সময় যা একান্তভাবেই নিজের জন্য আলাদা করে রাাখ। এই সময়টুকুতে শুধুমাত্র নিজের পছন্দের কাজ করবেন। সেটা হতে পারে পছন্দের বই পড়া, সিনেমা দেখা, রূপচর্চা করা, মেকাপ করা, ইয়োগা করা, বেকিং, গাছের পরিচর্যা, শপিং , যেকোনো শখের কাজ, কিংবা ঘুমানো বা পছন্দের জায়গায় কফি খেতে খেতে একান্তে নিরিবিলি সময় কাটানো। সেটা হতে পারে আপনার নিজের রুম, বাসা কিংবা কোনো নিরিবিলি বুকশপ ক্যাফে।
আজকাল শহরে বেশকিছু বুকশপ ক্যাফে খুলেছে, যেখানে কফির পাশাপাশি পাওয়া যাচ্ছে দারুন সব বই, সাথে থাকে ইন্সট্রুমেন্টাল মিউজিক। ‘মি টাইম’ কাটানোর জন্য এই ধরণের বুকক্যাফে গুলো কিংবা কফিশপ গুলো অসাধারণ। পছন্দের কফি নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দেওয়া যায় নির্দ্বিধায়। ‘মি টাইম’ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বারবার কফির কথা বলছি কিছু বিশেষ কারণে, যা কফির গুণাগুণের সাথে সম্পর্কিত। চলুন জেনে নেওয়া যাক কফির কিছু গুনাগুণ সম্পর্কে-
• কফিতে থাকা ক্যাফেনাইন এনার্জি বর্ধক- এই উপাদান শারীরিক ও মানসিক এনার্জি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। কফি পান করলে মস্তিষ্ক ভালো কাজ করে। সারাদিন কাজের মাঝে ক্লান্ত মস্তিষ্কে ১০ মিনিটের বিরতি নিয়ে এক কাপ কফি খেতে খেতে ‘মি টাইম’ কাটালে তা আপনার শারীরিক ও মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করে আপনাকে পুনরায় কাজে ফেরার মনোবল জোগাবে।
• কফিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস আপনার মন রাখে ভালো ও মেজাজকে রাখে ফুরফুরে। ‘মি টাইম’ কাটানোর পর আপনার মন-মেজাজ ভালো রাখতে জুড়ি নেই কফির।
• শরীর ও মনকে অবসাদমুক্ত রাখতে সহায়তা করে ক্যাফেইন
• যাদের অতিরিক্ত মুড সুইংয়ের সমস্যা রয়েছে তাদের কফি খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
• কফির ক্যাফেইন মানুষের মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটার অ্যাডেনোসাইনকে ব্লক করে। ফলে নোরপাইনফ্রাইন ও ডোপামিন নিঃসরণ বেড়ে যায়। যা নিউরনের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয়। কফি পান করলে এই ক্যাফেইন রক্তে মিশে মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌঁছে যা আমাদের মেজাজের উন্নতিতেও সাহায্য করে। এ সব কারণে কফি খেলে আপনি তুলনামূলক কম ক্লান্ত অনুভব করবেন।
• কফি মনকে রাখে প্রফুল্ল। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ এক পরীক্ষায় প্রমাণ করেছে, যারা প্রতিদিন চার বা ততোধিক কাপ কফি পান করেন তাদের বিষন্নতা হওয়ার সম্ভাবনা যারা কখনও পান করেনি তাদের চেয়ে ১০ ভাগ কম। কফিতে উচ্চমাত্রায় ক্যাফেইন নামে এক প্রকার উপাদান থাকার কারণেই এটি হয়।
• আত্মহত্যার ঝুঁকি কমাতে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিভাগ পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ২-৪ কাপ কফি পান করলে ছেলেদের আত্মহত্যার ঝুঁকি হ্রাস পায়। আর মেয়েদের আত্মহত্যার ঝুঁকি অর্ধেকে নেমে আসে।
• মানসিক কমাতে সহায়তা করে কফি। দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল ন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটিতে ইঁদুরের মস্তিষ্কের উপর চালানো এক পরীক্ষায় দেখা গেছে, নিদ্রাহীনতার ফলে মস্তিষ্কের যে চাপের সৃষ্টি হয় কফি সে চাপ লাঘবে সাহায্য করে।
কফির বহুমুখী এইসব গুণের কারণে ‘মি টাইম’ কাটানোর ক্ষেত্রে কফি হতে পারে চমৎকার একটি সঙ্গী। যা একই সাথে আপনার মন, মেজাজ ও শরীরকে করে তুলবে প্রফুল্ল। আনন্দে কাটবে আপনার একান্ত ব্যক্তিগত সময়।