খুশকি দূর করার ঘরোয়া ৯ উপায়

ছবি: সংগৃহীত
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৩:০৩ | আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৩:১৮
শীতে চুল পড়া ও খুশকির সমস্যায় কমবেশি সবাই ভোগেন। শীতকাল আসলে এটা বেড়ে যায়। তবে খুশকি কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। মাথার ত্বক থেকে বের হওয়া তেলজাতীয় এক ধরনের পদার্থ ফেবোরিয়া, বাইরের ধুলোবালি, শরীরে হরমোনের সমস্যা, চুলে অতিরিক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার ইত্যাদি কারণে খুশকি হতে পারে। আবহাওয়ার পরিবর্তন ও ত্বকের নানা সমস্যার কারণে মাথার ত্বকে এক ধরনের ফাঙ্গাস দেখা দেয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে সেবোরিক ডার্মাটাইটিস বলা হয়। শরীরের সোবিয়াম গ্রন্থির প্রদাহের ফলে সাধারণত খুশকি হয়। তবে এটা আবার জন্মসূত্রেও হতে পারে। খুশকির কারণে মাথার চুল ঝরে যায়, চুলকানির সমস্যাও হয়। তবে দামি-দামি পণ্য ব্যবহার না করে ঘরোয়া উপায়ে সহজেই এই খুশকির সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। খুশকি দূর করার ঘরোয়া কিছু উপায় এখানে তুলে ধরা হলো-
অ্যালোভেরা জেল
চুলের যত্নে অ্যালোভেরা অত্যন্ত উপকারী। অ্যালোভেরা জেল মাথার ত্বকে অতিরিক্ত তেল উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে রাখে, মাথার ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে এবং ব্যাকটেরিয়ার উৎপাদনকেও নিয়ন্ত্রণ করে। এতে খুশকি হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। এছাড়া অ্যালোভেরায় অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান রয়েছে, যা মাথার ত্বকে চুলকানি কমায়। অ্যালোভেরায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোষকে ক্ষয়ের হাত থেকে সুরক্ষিত রাখে।
নারকেল তেল
শীতকালে সপ্তাহে অন্তত একবার গরম নারকেল তেল দিয়ে মাথার ত্বক ম্যাসাজ করুন। এর ফলে মাথার ত্বকের কোষ ভালো থাকবে এবং চুলের রুক্ষভাবও কমবে। শুধু নারকেল না ব্যবহার করে এর সঙ্গে লেবুর রস, জোজবা অয়েল, এবং রোজমেরি ওয়েল ব্যবহার করা যায়। নারকেল তেলের তেমন কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। সব ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ নারকেল তেল ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন প্রণালী
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন প্রণালী ও সুষম আহার চুলে পুষ্টি যোগায়। পর্যাপ্ত পানি পান করুন। শরীরচর্চা,পর্যাপ্ত ঘুমানো ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া আমাদের দেহের জন্য উপকারী। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ভিটামিন, মিনারেল ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার রাখুন। মাংস ডিম, আমলকী, বাদাম, সবুজ শাকসবজি ও মাছ রাখুন।
লেবুর রস
লেবুর রস তেল ও খুশকি দূর করতে সাহায্য করে। লেবুর রসে থাকা সাইট্রিক এসিড মাথার ত্বকের পিএইচ লেভেল বাড়াবে। লেবুতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মাথার ত্বকের সংক্রমণ থেকে চুলকে রক্ষা করবে। তবে শুধু লেবুর রস না ব্যবহার করে নারকেল তেলের সঙ্গে ব্যবহার করতে পারেন।
চুল পরিষ্কার রাখা
মাথার তালু ও চুল সবসময় পরিষ্কার ও পরিপাটি রাখুন। ত্বক পরিষ্কার থাকলে ত্বকে আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারে এবং রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়। এর ফলে মাথার ত্বকের কোষগুলো স্বাভাবিক ক্রিয়ায় সচল থাকতে পারে। এতে করে সহজেই খুশকি দূর হবে এবং চুলের গোড়া মজবুত থাকবে। একই চিরুনি পরিবারের সবাই ব্যবহার করবেন না। চুল পরিষ্কারে নিয়মিত শ্যাম্পু করুন, তবে অতিরিক্ত নয়।
দইয়ের ব্যবহার
টক দইয়ের সাহায্যেও খুশকি দূর করতে পারেন। টক দই মাথায় লাগিয়ে ১০ মিনিট রেখে চুল ধুয়ে ফেলুন। টক দইয়ের ব্যবহার রুক্ষ চুলের ব্যাকটেরিয়া নির্মূলের পাশাপাশি শক্ত চুলকে নরম ও উজ্জ্বল করে।
তেল ও কন্ডিশনার ব্যবহার
শীতকালে বারবার চুল ধুলে এতে উপস্থিত প্রাকৃতিক তেল শেষ হয়ে যায়। সপ্তাহে অন্তত দুই-তিন দিন তেল ব্যবহার করুন। এক্ষেত্রে নারকেল, অলিভ বা অন্য কোনো তেল ব্যবহার করতে পারেন। শ্যাম্পুর পর চুল কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। এতে চুল রুক্ষ হবে না।
পর্যাপ্ত পানি পান
পানি আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। শীতকালে আমরা খুব কম পানি পান করে থাকি। এর ফলে শরীরে ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতার স্তর বৃদ্ধি পায় এবং খুশকি দেখা দেয়। তাই দিনে অন্তত ১০ থেকে ১২ গ্লাস পানি পান করুন।
তাপ থেকে চুলকে দূরে রাখুন
অতিরিক্ত তাপ আমাদের চুলের জন্য ক্ষতিকর। এতে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। চুল ধোয়ার পর হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে শুকিয়ে গেলেও খুশকি হতে পারে। কারণ ড্রায়ার ব্যবহার করলে ত্বক তাপের সংস্পর্শে আসে। ভেজা চুল বেঁধে রাখা ভালো নয়। আবার চুল বেশিক্ষণ ভেজা রাখাও উচিত নয়। তাই গোসলের পর তোয়ালে দিয়ে চুল মুছে স্বাভাবিকভাবে শুকাতে দিন।
চুল ঢেকে রাখুন
আমাদের পরিবেশে অসংখ্য ময়লা থাকে যেগুলো খালি চোখে দেখা যায় না। কিন্তু এগুলো আমাদের মাথার ত্বকে খুশকির সৃষ্টি করে। বাইরে বের হওয়ার সময় চুল যথাসম্ভব ঢেকে রাখুন। তাহলে বাইরের ধুলাবালি জমবে না ত্বকে। চুল সহজে রুক্ষ হবে না।
খুশকির প্রকোপ বেশি হলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আশার কথা হলো, খুশকি অস্বস্তির কারণ হলেও এটি দূর করা কঠিন নয়। প্রয়োজন শুধু সঠিক যত্ন আর নিয়মিত অভ্যাস। কাজেই নিজেকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে না ফেলতে চাইলে এই শীতে আপনিও আপনার মাথার ত্বকের একটু যত্ন নিন আর উপভোগ করুন শীতের দিনগুলো।