প্রাথমিকে বেতন বৈষম্য
যেই লাউ সেই কদু

--
প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ১৩:৫২
দীর্ঘ আন্দোলনের ফসল হিসেবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য ঘোষিত নতুন বেতন স্কেলে যে বৈষম্যের চিত্র মঙ্গলবার প্রকাশিত সমকালের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, তাতে শিক্ষকদের ভাগ্য যেন একই তিমিরে। অর্ধযুগেরও বেশি সময় ধরে এই শিক্ষকরা যেভাবে বেতন বৈষম্যের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছিলেন, যে অনশন-লাঠিপেটা সহ্য করেছিলেন, তার ফল যদি যে লাউ সেই কদুই হয়, সেটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা দেখে আসছি, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যখনই আন্দোলনে নেমেছেন, তখনই সরকারের তরফ থেকে বৈষম্য বিলোপে বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের বিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। অবশেষে এই ফেব্রুয়ারিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের স্কেল এক ধাপ বাড়ানো হয়েছে। তাতে উল্টো ১০ ধরনের বৈষম্য তৈরি হয়েছে বলে আলোচ্য প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে। আমাদের মনে আছে, ২০১৪ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদমর্যাদা দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করে নতুন বেতন স্কেল নির্ধারণের ফলে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেলে পার্থক্য অনেক বেড়ে যায়। প্রধান শিক্ষকের ১১তম গ্রেড আর সহকারী শিক্ষকের ১৪তম গ্রেডে থাকাটা স্পষ্ট বৈষম্য। সে বৈষম্য কমাতে প্রধান শিক্ষকের দশম গ্রেড আর সহকারী শিক্ষকের ১১তম গ্রেডের আন্দোলন করেন তারা। এখন তাদের কাঙ্ক্ষিত গ্রেড তো দেওয়া হয়ইনি, উপরন্তু নানা অবাঞ্ছিত শর্ত জুড়ে দেওয়ায় অনেকের বেতন আগের চেয়ে বরং কমে যাবে। সবচেয়ে অবমাননাকর শর্ত, নতুন স্কেলে বেতন পেতে নূ্যনতম দ্বিতীয় শ্রেণিতে স্নাতক হতে হবে। তাহলে নিয়োগকালে শিক্ষাগত যোগ্যতা কেন উচ্চ মাধ্যমিক চাওয়া হয়েছিল? এতে সারাদেশের তিন লাখ ৭৫ হাজার সহকারী শিক্ষকের অন্তত সোয়া লাখই নতুন স্কেলের সুবিধা পাবেন না। বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা জানি, প্রাথমিক স্তরে মোট শিক্ষকের ৬০ শতাংশ যে নারী রয়েছেন, এ শর্তের কারণে তারাই বেশি বঞ্চিত হবেন। এর বাইরে, এতদিন ১৪তম গ্রেডে চাকরি করলেও যে শিক্ষকের বেতন ১৩তম পার হয়ে ১২তম গ্রেডে চলে গেছে, এখন ১৩তম গ্রেডে নতুন করে বেতন নির্ধারণ করতে গেলে ওই শিক্ষকরা যাবেন কোথায়! এভাবে আরও কিছু জটিলতা রয়ে গেছে। আমরা বিস্মিত, এতদিন পর যখন একটা স্কেল ঘোষণা হলো, সেটা কেন ভেবেচিন্তে করা হলো না? তাহলে শিক্ষকদের কি আবার সেই মাঠেই নামতে বাধ্য করা হচ্ছে! নতুন বেতন স্কেলে শিক্ষকরা তো আনন্দিত হওয়ার বদলে উল্টো অসন্তুষ্ট ও ব্যথিত। এমনকি তারা নতুন করে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারেন। আমরা মনে করি, নতুন স্কেল যেহেতু দেওয়া হচ্ছে, সেটি সব শিক্ষককেই দিতে হবে। নিয়োগের সময় যে শর্ত ছিল না, এখানে নতুন করে সে শর্ত আরোপ করা যুক্তিগ্রাহ্য নয়। সব শিক্ষকের নতুন বেতন স্কেল নিশ্চিত করতে শর্ত তুলে দেওয়া হোক।
- বিষয় :
- বেতন বৈষম্য