শতভাগ বিদ্যুতায়ন
নবায়নযোগ্যের হার বাড়ান

ছবি: ফাইল
--
প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২০ | ১৫:০৭
মুজিববর্ষ শেষ হওয়ার আগেই দেশের সব এলাকা বিদ্যুতায়নের আওতায় আনা হবে- সরকারের এমন উদ্যোগের কথা আমরা আগেও শুনেছি। রোববার বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টার কাছ থেকে এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের বিস্তারিত জানা গেল। আমরা নিশ্চয়ই এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী স্মরণীয় করে রাখা কেবল নয়; বিদ্যুতায়নের সঙ্গে উন্নয়ন ও উৎপাদনের সম্পর্কও ভুলে যাওয়া চলবে না। আমরা যে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের স্বপ্ন দেখছি, তা বাস্তবায়নে শতভাগ বিদ্যুতায়নের বিকল্প নেই। কিন্তু জাতীয় গ্রিডের বাইরে থাকা প্রত্যন্ত গ্রাম, পার্বত্য এলাকা, চরাঞ্চল ও দ্বীপাঞ্চলগুলোতে প্রচলিত বিতরণ লাইন ছাড়াও সাবমেরিন কেবল ও পৃথক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের যে উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে, তা নিয়ে দ্বিতীয় চিন্তার অবকাশ রয়েছে। আমরা মনে করি, এর পরিবর্তে বিচ্ছিন্ন এলাকাগুলোতে সৌরবিদ্যুৎসহ নবায়নযোগ্য মাধ্যমসমূহে জোর দিতে হবে।
সন্দেহ নেই, আলোচ্য উদ্যোগেও সৌরবিদ্যুতের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আমরা দেখতে চাই, এখনও জাতীয় গ্রিডের বাইরে থাকা এলাকাগুলোতে শতভাগ নবায়নযোগ্য বিদ্যুতায়ন হোক। বস্তুত তা কেবল সাশ্রয়ী নয়, টেকসইও হবে। আমরা জানি, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার টানা তিন মেয়াদের প্রথম থেকেই বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিশেষ মনোযোগ দিয়ে এসেছে। আমরা দেখছি, দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ২২ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে গেছে। অথচ 'ফাইভ ডিজিট' উৎপাদনে পৌঁছার কথা মাত্র এক দশক আগেও ভাবা যেত না। বিশেষত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা চার হাজার মেগাওয়াটও ছুঁতে পারেনি। বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে আবাসন ব্যবসা এবং শিল্প স্থাপনেও এসেছিল স্থবিরতা। গ্রামীণ জনপদেও বিদ্যুতের অভাবে চাষাবাদ বিঘ্নিত হতে দেখা গেছে। কিছু সমালোচনা সত্ত্বেও বিদ্যুৎ খাতে সম্পূর্ণতা অর্জনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বর্তমান সরকার 'কুইক রেন্টাল' ও প্রতিবেশী দেশ থেকে বিদ্যুৎ আমদানির মতো উদ্ভাবনী পদক্ষেপ গ্রহণ করায় গুরুত্বপূর্ণ এই খাতে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পেরেছি। কিন্তু বিদ্যুতের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি সরবরাহ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও উন্নয়নে যতখানি মনোযোগ দেওয়া উচিত ছিল, সংশ্নিষ্টরা সম্ভবত তা দিতে পারেনি।
বিগত বছরগুলোতে ব্যাপক হারে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হলেও সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনের সক্ষমতা না বাড়ায় গ্রাহকদের কাছে নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ পৌঁছানো যাচ্ছে না। আমরা মনে করি, মুজিববর্ষ উপলক্ষে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ ব্যবস্থার মধ্যে ভারসাম্য তৈরি করার উদ্যোগও সংশ্নিষ্টরা নিতে পারে। একই সঙ্গে শতভাগ এলাকায় বিদ্যুতায়ন নিশ্চিত করতে নবায়নযোগ্য বিদ্যুতায়নে নেওয়া যেতে পারে জোর উদ্যোগ। বর্তমানে প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে সৌরবিদ্যুৎ সম্প্রসারিত হলেও বায়ু ও জলবিদ্যুতের ক্ষেত্রে আমরা রয়েছি অনেক পিছিয়ে। এদিকে জোর দেওয়া যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, নবায়নযোগ্য জ্বালানির যে লক্ষ্যমাত্রা আমরা নির্ধারণ করেছিলাম ২০১৫ সালের মধ্যে তা অর্জন করা সম্ভব হয়নি। নতুন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এটাকে ১০ শতাংশে নিতে হলে যেতে হবে আরও অনেকটা পথ।
- বিষয় :
- শতভাগ বিদ্যুতায়ন
- বিদ্যুতায়ন