ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

এনসিটিবির কমিটি

পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জনে শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ কোথায়?

পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জনে শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ কোথায়?

শিক্ষাবিজ্ঞান নিয়ে সরাসরি যারা কাজ করেছেন, কমিটিতে তাদের অন্তর্ভূক্তি জরুরি

শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটগুলোর শিক্ষকদের উদ্বেগ

প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১২:৫১ | আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১৮:৫৪

এই বিবৃতিতে একাত্মতা প্রকাশ করে স্বাক্ষর করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট ও শিক্ষা বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ। 

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্তৃক প্রণীত ও মুদ্রিত সকল পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের লক্ষ্যে একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে এক অফিস আদেশে এ কমিটি গঠনের বিষয়টি আমরা জানতে পারি। যাদের অন্যতম প্রধান কাজ হচ্ছে, শিক্ষাক্রমের নিরিখে পাঠ্যপুস্তক বিশ্লেষণ করা। কিন্তু আমরা অত্যন্ত বেদনা ও আশ্চর্যের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, সেখানে ১০ সদস্যের কমিটিতে শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ আছে কী? কমিটির সদস্যগণ প্রাজ্ঞ এ বিষয়ে সন্দেহ নেই, কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ না হলে কীসের ভিত্তিতে প্রদত্ত কাজ সম্পন্ন করবেন?


বিশেষজ্ঞ হিসেবে পাঠ্যপুস্তকে শিক্ষাক্রমের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য প্রতিফলিত হয়েছে কিনা, তা যেভাবে যাচাই করা সম্ভব, অন্যরা সেটা করতে গেলে সমস্যা তৈরি হতে পারে। শিখন-শেখান কৌশলের সঙ্গে পাঠ্যপুস্তকে প্রদত্ত কাজের সামঞ্জস্যতা পর্যবেক্ষণ করার মতো পারদর্শিতা ব্যতিত এ কাজ অন্যদের দ্বারা যথাযথভাবে সম্পন্ন হওয়া নিয়ে সন্দেহ থাকাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশের যেসব শিক্ষাবিজ্ঞানী সুনির্দিষ্টভাবে কারিকুলাম স্টাডিজ বা সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে উচ্চতর অধ্যয়ন করেছেন, গবেষণা করেছেন, তাঁরাই বিশেষভাবে এ কাজের যোগ্য বলে আমরা মনে করি। কয়েক দশক ধরে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যাঁরা শিক্ষাবিজ্ঞানে অধ্যয়ন করেছেন, শিক্ষাবিজ্ঞান নিয়ে সরাসরি কাজ করেছেন তাদের বাদ রেখে এমন কমিটি কোনো পরিমাপেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। 


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট ষাটের দশকের গোড়া থেকে শিক্ষা ও গবেষণায় বিশেষভাবে কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষা বিষয়ে স্নাতক (সম্মান), স্নাতকোত্তর এবং উচ্চতর ডিগ্রি কার্যক্রম পরিচালনা, শিক্ষা সম্প্রসারণ ও গবেষণা কর্ম নিয়োজিত। শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ পেশাগত দায়িত্ব পালনের উপযোগী বিশেষজ্ঞ ও মানবসম্পদ তৈরি এবং শিক্ষা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা পরিচালনায় এ প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা অপরিসীম। পাশাপাশি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট বা শিক্ষা অনুষদ এসব কাজ করে যাচ্ছে। অতীতে শিক্ষা, শিক্ষানীতি, শিক্ষাক্রম কিংবা পাঠ্যপুস্তক সংক্রান্ত যে কোনো কমিটিতে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কিংবা বিশেষজ্ঞদের রাখা হলেও এবার কেন তাদের রাখা হলো না?


বিশেষজ্ঞ ব্যতিত হাতুড়ে ডাক্তারের চিকিৎসায় যেমন রোগী ভালো হতে পারে না, শিক্ষার বিষয়টিও অনুরূপ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মানেই শিক্ষাবিদ বা শিক্ষা বিশেষজ্ঞ নয়। তারা তাদের সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞ যেমন- অর্থনীতিবিদ, সমাজবিজ্ঞানী বা কৃষিবিদ হতে পারে। শিক্ষা টেকনিক্যাল বিষয়। যারা এ বিষয়ের বিশেষজ্ঞ এবং যাদের এ বিষয়ে ডিগ্রিসহ কাজ রয়েছে তাদেরকে এ ধরনের কমিটিসহ শিক্ষাসংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে রাখা জরুরি বলে আমরা মনে করি।

 

ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা ইতিবাচকভাবে লক্ষ্য করেছি, অন্তবর্তী সরকার বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য নিয়োগসহ প্রায় সব ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ও যোগ্যদের পদায়ন ও মূল্যায়ন করছে। দেশকে নতুনভাবে ঢেলে সাজাতে এবং শিক্ষার সংস্কারে সরকারের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। এটা সত্য যে, শিক্ষাক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় যে কোনো কাজে পূর্বে শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের সে অর্থে মূল্যায়ন করা হয়নি। সেজন্যেই শিক্ষার নানামুখী সংকট আমরা দেখছি। আমরা প্রত্যাশা করি, বর্তমান সরকার তার নীতির আলোকে যোগ্যদের যথাস্থানে বসানোর অঙ্গীকার থেকেই এনসিটিবির পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জন কমিটির পুনর্মূল্যায়ন করবে এবং শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভূক্ত করবে।   

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের অন্যতম

১. ড. মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ: অধ্যাপক, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২. ড. মোহাম্মদ মনিনুর রশিদ: অধ্যাপক, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৩. ড. খালেদুজ্জামান মিজান: অধ্যাপক, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
৪. মো. শাহনেওয়াজ খান চন্দন: সহকারী অধ্যাপক, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
৫. তাসনিম মুশাররাত: সহকারী অধ্যাপক, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
৬. জি এম রাকিবুল ইসলাম: সহকারী অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত), শিক্ষা প্রশাসন বিভাগ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
৭. মো সাব্বির হোসেন: সহকারী অধ্যাপক, শিক্ষা স্কুল, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।
৮. মোঃ আশরাফুজ্জামান: সহকারী অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, এডুকেশনাল টেকনোলজি এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ
৯. ড. কাজী শহীদুল্লাহ: সহকারী অধ্যাপক: কারিকুলাম ডেভেলাপমেন্ট, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালস

বিবৃতিতে ৩০ জন শিক্ষক স্বাক্ষর করেছেন, পুরো তালিকা এই লিংকে 


 

আরও পড়ুন

×