ঢাকা মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫

সমকালীন প্রসঙ্গ

মামদানির রাজনীতি বাংলাদেশ থেকে কীভাবে দেখব?

মামদানির রাজনীতি বাংলাদেশ থেকে কীভাবে দেখব?

আলতাফ পারভেজ

আলতাফ পারভেজ

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫ | ০০:২৭ | আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৫ | ০০:২৮

কোনো দেশের একটা শহরের মেয়র হতে চাওয়া ৩৩ বছর বয়সী এক তরুণের বিরুদ্ধে এমন আন্তঃমহাদেশীয় রাজনৈতিক মৈত্রীর নজির সমকালীন বিশ্বে বিরল। নিউইয়র্কের মেয়র পদপ্রার্থী জোহরান মামদানির বিরুদ্ধে ঠিক তা-ই হতে চলেছে। খোদ যুক্তরাষ্ট্রে রিপাবলিকানরা তাঁর বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে অনেকটা যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। আবেদন করা হচ্ছে তাঁর নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার। 

ভারতের কংগ্রেস ও বিজেপি উভয় দলের সমর্থকরা মামদানিকে চিহ্নিত করছেন প্রতিপক্ষ ‘পাকিস্তানের লোক’ হিসেবে। আর ইসরায়েল সমর্থক মিডিয়াগুলো তাঁর বিরুদ্ধে শুরু করেছে সমন্বিত প্রচার। যার মধ্যে ‘জুইস নিউজ নেটওয়ার্ক’ ৩ জুন লিখেছে, ‘মামদানি কেবল যে ইহুদিদের ঘৃণা করেন, তা-ই নয়; ইসরায়েলকে ধ্বংসও করতে চান।’
ইউরোপ-আমেরিকায় কাউকে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে ঘায়েল করতে ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ তকমা বেশ কার্যকর। মামদানিকে এখন সেই ইমেজ দেওয়ার কাজ চলছে। 
নিউইয়র্ক যেহেতু ডেমোক্র্যাট দলের ঘাঁটি, সে কারণে বাংলাদেশসহ দূরদূরান্তের দেশগুলোতে অনেকে ভাবছিলেন, দলীয় মনোনয়ন পেয়েই মামদানির বিজয় হয়তো নিশ্চিত হয়ে গেছে। বাস্তবতা হলো, তাঁর সামনে চ্যালেঞ্জ অনেক। প্রতিদিন সেটা বাড়ছেও। 

চূড়ান্ত ভোটের দিন মামদানির বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নিউইয়র্ক নগরীর এখনকার মেয়র তো থাকবেনই; দলীয় মনোনয়নযুদ্ধে প্রতিপক্ষ এন্ড্রু কুয়োমোর নামও ব্যালট পেপারে থাকবে। পাশাপাশি রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিজ স্লিওয়া আছেন। অর্থাৎ রিপাবলিকানরা ছাড়াও দু’জন ডেমোক্র্যাট তাঁর ভোট কাটবেন। সেই সঙ্গে এখন থেকে শুরু হয়েছে বৈশ্বিক জায়নবাদী ও হিন্দুত্ববাদীদের আক্রমণাত্মক প্রচার। 

অবস্থা দেখে ক্রমে যা মনে হচ্ছে, বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস মামদানিবিরোধী দেশ-বিদেশের সবার একক প্রার্থী হয়ে উঠবেন। আফ্রিকান-আমেরিকান এরিক একজন পুরোনো ডেমোক্র্যাট। ফলে মামদানিকে নিজ শিবিরেই অল্প-বিস্তর সংকটের মুখোমুখি হতে হবে সামনের দিনগুলোতে। ডেমোক্র্যাট দলের হাইকমান্ডের বড় অংশও মামদানিকে পছন্দ করছে না।
মামদানি বনাম বিবিধ শক্তির এই যুদ্ধ এবং তার ফল শুধু আমেরিকা নয়, পুরো বিশ্বের জন্যও কিছুটা তাৎপর্যবহ। তিনি যে দ্রুত এত প্রতিপক্ষ তৈরি করলেন, তার সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া সে জন্য খুবই দরকার। এর বেশ কিছু রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক দিক আছে। বিশেষ করে যখন স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে, উদীয়মান এই রাজনৈতিক তারকার চারদিকে ইসরায়েল লবি, বৈশ্বিক হিন্দুত্ববাদী ও শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীরা মিলে একটা যৌথ দেয়াল তুলছে। প্রশ্ন হলো, মামদানি কীভাবে এবং কেন সবার চক্ষুশূল হলেন? তা কি শুধু মুসলমান হওয়ার কারণে, নাকি অন্য কোনো কারণ আছে?
মামদানির রাজনীতি আড়াল করার চেষ্টা তিনি যখন ডেমোক্র্যাট প্রাইমারিতে  জিতলেন, তখনই দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মিডিয়া হেডিংগুলো বেশ কৌতূহলোদ্দীপক ছিল। কেউ কেউ লিখেছে, ‘লন্ডনের পর নিউইয়র্কও একজন মুসলমান মেয়র পেতে যাচ্ছে’। আবার কেউ বলেছে, এই প্রথম ‘ভারতীয় অরিজিন একজন নিউইয়র্কের মেয়র হচ্ছেন’। কোনো শিরোনামই আসলে নিরীহ কিছু ছিল না। এমনকি কেবল পাঠক-দর্শক বাড়ানোর ব্যাপারও না। মামদানির রাজনীতিটা আড়াল করার ব্যাপারও ছিল তাতে।

৩৩ বছর বয়সী মামদানি যে নিউইয়র্কে জনপ্রিয়, সেটা তাঁর রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক কর্মসূচির এবং মানবাধিকারমুখী দৃঢ় আদর্শবাদের কারণে; মুসলমান বা দক্ষিণ এশীয় হওয়ার কারণে নয়। তিনি কর ব্যবস্থার সংস্কার চান। ধনীদের ওপর কর বসিয়ে অল্প আয়ের মানুষের জন্য ফ্রি বাস সার্ভিস বাড়াতে চান; বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ করতে চান; শ্রমজীবীদের ঘণ্টাপ্রতি ন্যূনতম মজুরি ৩০ ডলার পর্যন্ত নিতে চান; রাজ্যজুড়ে ন্যায্যমূল্যের দোকান বাড়াতে চান। এগুলো তাঁর রাজনৈতিক লক্ষ্যের একেবারে গোড়ার কর্মসূচি। তিনি মুসলমান বলে ভোট চাননি কোথাও। তবে তিনি ফিলিস্তিনিদের জায়গায় ইহুদিদের বসতি বাড়ানোর কর্মসূচির বিরুদ্ধে। তিনি বাবরি মসজিদ ভেঙে সেখানে মন্দির বানানোর বিরুদ্ধেও রাস্তায় ছিলেন। ভারতের ওমর খালিদের মতো রাজবন্দির মুক্তি চান তিনি। খোলামেলাভাবে এও বলেছেন, তিনি মার্টিন লুথার কিংয়ের অনুসারী। 

এ রকম রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ভাবনা ও পছন্দের কারণেই নিউইয়র্কের বহু জাতির সমাজের তৃণমূলে মামদানি জনপ্রিয়। দেশটির জাতীয় রাজনীতিতে ঠিক কাছাকাছি আদর্শের কথা বলেন বার্নি স্যান্ডার্স, ওকাসিও কর্টেজ প্রমুখ। এরা সবাই ডেমোক্র্যাট হলেও দলটির হাইকমান্ডের পছন্দনীয় নন; বরং দলে সংখ্যালঘু। কিন্তু এরা তাদের সাংগঠনিক শক্তির চেয়েও বড় এক লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন। দলটির রাজনৈতিক আদর্শ এবং সাংগঠনিক কৌশলের মোড় বদলাতে তৎপর তারা। পরিচয়বাদী পপুলিজমকে মানুষের রুটি-রুজির রাজনীতি দিয়ে প্রতিস্থাপিত করতে চায় এই উপদল।

নিউইয়র্কের লড়াইয়ের ছাপ ভারতেও ডেমোক্র্যাট দলের ভেতর বামপন্থি উপদলের মতো কাজ করা স্যান্ডার্স-ওকাসিও-মামদানিরা এমন এক আমেরিকা চান, যে দেশে দেশে আগ্রাসন চালাবে না; যুদ্ধের 
ক্ষুধা কমাবে; দেশের ভেতরে অর্থনৈতিক বৈষম্যের সমাধান দেবে। এসব কারণে ডেমোক্র্যাট এই উপদল বিলিয়নেয়ারদের চক্ষুশূল। যে বিলিয়নেয়াররা ভাগাভাগি করে দেশটির প্রধান দুটি দলের হাইকমান্ডকে নিয়ন্ত্রণ করছে। 

বর্তমানে আট শতাধিক বিলিয়নেয়ার রয়েছে আমেরিকায়। যাদের হাতে ছয় ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি সম্পদ। তারা কীভাবে বড় দলের বড় নেতাদের নিয়ন্ত্রণ করে, তার নজির বিগত নির্বাচনে ট্রাম্পের সঙ্গে ইলন মাস্কের জুটি। ফলে বিলিয়নেয়ারবিরোধী মামদানি যে ট্রাম্প শিবিরের ক্ষোভের কারণ হবেন, সেটা অস্বাভাবিক নয়। তবে রিপাবলিকানদের সঙ্গে মামদানি-বিরোধিতায় যুক্ত হয়েছেন সুদূর ভারতের রাজনীতিবিদরাও। তার ছাপ পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরকার ‘ইন্ডিয়ান-আমেরিকান’ কমিউনিটিতে। এসবের কারণ কী?

ভারতে বিজেপি এবং কংগ্রেসের শক্তির জায়গা এখানকার বিলিয়নেয়াররা। বৈশ্বিক বিলিয়নেয়ার তালিকায় ভারত এখন তৃতীয়। আড়াইশর ওপর বিলিয়নেয়ার সেখানে। অথচ দেশটিতে বিপুল দারিদ্র্যও লুকোছাপা নেই। দারিদ্র্য লুকিয়ে আদানি-আম্বানি-লক্ষ্মী মিত্তালদের মতো ধনকুবের বাড়াতে হলে এক ধরনের আড়াল দরকার। সেই আড়াল তৈরির কাজ করে দেশটিতে হিন্দুত্ব ও হিন্দি শ্রেষ্ঠত্ববাদ এবং মুসলমান-খ্রিষ্টান-কমিউনিস্ট বিদ্বেষ। অনেকে মনে করেন, এসব শুধু আরএসএস-বিজেপি পরিবারের আদর্শ। কংগ্রেসও যে নরম সুরে একই রাজনীতি করতে চায়, তার নজির মামদানির বিরুদ্ধে এই দলের রাজ্যসভার সদস্য অভিষেক মানুর বক্তব্য। বিজেপি এমপি কঙ্গনা রানাউত যে ভাষায় মামদানিকে আক্রমণ করছেন, অভিষেকের ভাষাও অনেকটা এক রকম। তারা কেন এত দূরের দেশে থেকেও মামদানির বিরুদ্ধে? কারণ খুব সোজা। মামদানির রাজনীতিকে তরুণদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করে দেওয়া। লোকটাকে কলঙ্কিত হিসেবে দেখানো। ট্রাম্পও একই স্টাইলে মামদানিকে বলছেন, ‘কমিউনিস্ট’। সাধারণ শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের কাছে মামদানিকে ভীতিকর করে তুলতেই সচেতন ওই শব্দচয়ন। এ ক্ষেত্রে মামাদানিবিরোধী রাজনৈতিক লড়াইয়ের ক্ষেত্রে নিউইয়র্ক, নয়াদিল্লি একাকার। 
মামদানিকে প্রশংসার বাংলাদেশি ধরন

বাংলাদেশে মামদানিকে নিয়ে যা হলো, সেটাও খেয়াল করার মতো। মুসলমান মামদানি এখানে প্রশংসায় ভাসলেও তাঁর মজুরি বাড়ানো, ন্যায্যমূল্যের দোকান খোলা, ধনীদের ওপর কর বসানোর রাজনৈতিক আলাপ একদম অনুপস্থিত। বাংলাদেশে জনপ্রিয় বক্তাদের পছন্দের বিষয় নয় এগুলো। এখানে ‘মুরুব্বি’দের বয়ানে সচরাচর ফ্রি বাস সার্ভিসের দাবির কথা শোনা যায় না। শিগগির শুনব বলেও আশা নেই।
মামদানির ভোট ক্যাম্পেনের মাঝেই বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী অভ্যুত্থানের এক বছর হলো এবং অভ্যুত্থানের সরকার প্রথম বাজেট দিয়েছিল। সেখানে অর্থনৈতিক বৈষম্য কমানোর কোনো উল্লেখযোগ্য বড় পদক্ষেপ ছিল না। তার জন্য গণঅভ্যুত্থান-সংগঠক-শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকেও বড় আকারের চাপ ছিল না। সে রকম লক্ষ্যে এখানে ‘যমুনা ঘেরা’ও করেনি কেউ। কিন্তু অনেক তরুণ এখানে মামদানির ছবিসহ ফেসবুকে লিখেছেন। মামদানিকে পছন্দ তাদের। তাঁর ধর্মীয় পরিচয় তুলে ধরে পত্র-পত্রিকায় অনেক লেখাজোখা হয়েছে। কিন্তু রাজনীতিবিদ মামদানি কীভাবে তৈরি হলেন, সেই প্রক্রিয়াটুকু আলোচনা ও মনোযোগের বাইরেই থাকল।

আসলে মামদানির রাজনীতি ক্রিকেটের টি-টোয়েন্টি বা ওয়ানডে ম্যাচের মতো নয়। বরং তা যেন পাঁচ দিনের টেস্ট ইনিংস। ক্যাপিটালিজমের ভরকেন্দ্রে বসে আমেরিকার র‌্যাডিক্যালরা ‘ডেমোক্র্যাট-সোশালিস্ট অব আমেরিকা’ (ডিএসএ) নামে একটা সংগঠন করে দেশজুড়ে তৃণমূল পর্যায়ে রুটি-রুজি, পরিবেশ, বর্ণবাদ, আবাসন সমস্যাসহ নানা বিষয়কে কেন্দ্র করে নিজেদের সংগঠিত করছে। এরা কোনো পার্টি নয়। বরং এখানে বিভিন্ন পার্টির কর্মী একসঙ্গে কাজ করতে পারেন, বিশেষ করে যারা এসব সমস্যা সমাধানে পরিবর্তনবাদী-সংস্কারবাদী। এরা দেশজুড়ে তাদের আদর্শের রাজনীতিবিদদের স্বপ্রণোদিতভাবে সমর্থন করে। 

মামদানি ডিএসএ থেকে এভাবেই সহায়তা পাচ্ছেন। তাঁর সাংগঠনিক জাদুর এটা হলো বড় রহস্য। ডেমোক্র্যাট হাইকমান্ড তাঁর বিষয়ে শীতল থাকলেও ডিএসএ মামদানির জন্য যে শেষ পর্যন্ত কাজ করবে, এটাই ট্রাম্প শিবিরকে ভাবনায় ফেলেছে। নিউইয়র্কে কেউ মেয়র হলে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সি মোটেই হুমকিতে পড়বে না। আর নিউইয়র্কই আমেরিকা নয় এবং তেলআবিব ও নয়াদিল্লিও নিউইয়র্ক থেকে বহু দূরের জায়গা। কিন্তু এদের সবার জন্য মামদানিকে থামানো জরুরি হয়ে পড়েছে। যেভাবে ৫৭ বছর আগে মার্টিন লুথার কিংকে থামানো জরুরি ছিল। 

প্রতিপক্ষ আপাতত মামদানির নাগরিকত্ব বাতিলের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে জনমত গড়ায় মন দিয়েছে। আর তাতে বাতাস দিতে স্থানীয় ইহুদি লবি বলছে, ইসরায়েলের বিরোধিতার নামে মামদানি আসলে সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দিয়েছেন। মামদানির অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক অবস্থানের মোকাবিলায় তাঁর এই বিরুদ্ধবাদীরা কেউই তেমন বক্তব্য রাখছেন না। কারণ তারা বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থাটা রক্ষা করতে চান। ঠিক একই চিত্র আমরা দেখলাম গত এক বছরের বাংলাদেশে। এখানে বহু ধরনের সংস্কার নিয়ে বহুজন কথা বললেও সমাজ দাঁড়িয়ে থাকে যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও উৎপাদন সম্পর্কের ওপর; তার সংস্কার বিষয়ে চুপ থাকার প্রশ্নে জাতীয় ঐকমত্য হয়ে আছে। 

বলা হচ্ছে, আমরা বৈষম্যবিরোধী সরকারের আমলে আছি এবং তারা বৈষম্য কমাতে বিবিধ সংস্কার কাজে ব্যস্ত। কিন্তু পুরোনো ধাঁচের উৎপাদন সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বহাল রেখে কীভাবে কোনো সমাজে বৈষম্য কমানো সম্ভব? গত ১২ মাসে আদৌ সমাজে ধনবৈষম্য কমেছে?
এ রকম প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আপাত এটুকু বলাই যায়, জোহরান মামদানি অন্তত বাংলাদেশের চলমান সংস্কারপন্থিদের মতো স্ববিরোধী নন। 
‘উগান্ডা’ বদলে নেওয়া সহজ নয়।

বাংলাদেশে গত ১৫ বছর মানুষ কুখ্যাত সাইবার অ্যাক্ট থেকে বাঁচতে নিজেদের স্বৈরতান্ত্রিক উগান্ডার নাগরিক পরিচয় দিয়ে আর্থসামাজিক বিপন্নতার কথা লিখতেন সামাজিক মাধ্যমে। জোহরান মামদানির 
জন্ম ও শৈশব কেটেছে উগান্ডায়। বাংলাদেশের মতো উগান্ডাও একদা ব্রিটিশ কলোনি ছিল।
উগান্ডায় থাকার দিনগুলোতে নিশ্চয় মামদানি বুঝেছেন, স্বৈরতন্ত্রের গোড়া পুষ্ট হয় অসম অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও জাতিবাদী সংস্কৃতিতে। হয়তো সে কারণেই সফলভাবে স্বৈরাচারকে উৎপাটন শেষেও বাংলাদেশিরা শনাক্ত করতে পারছে না– ‘উগান্ডা’কে কীভাবে বাংলাদেশ বানাতে হবে। বাংলাদেশে অনেক মামদানি দরকার। একইভাবে ‍উগান্ডারও সে রকম দরকার। উভয় দেশ ঔপনিবেশিক আইনকানুনের ভারে ধুঁকছে আজও।

আসন্ন মাসগুলোতে আন্তঃমহাদেশীয় প্রতিপক্ষ জোটের হাতে নিউইয়র্কের মামদানি রাজনৈতিকভাবে শহীদ হলেও এই লক্ষণ বেশ স্পষ্ট যে, বৈশ্বিক পুঁজিতন্ত্রের ভরকেন্দ্রে বিকল্প খোঁজার চেষ্টা বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। পরিবর্তনের আকুতি তৈরি হয়েছে আমেরিকার তৃণমূলেও। এটা হয়তো অন্যরকম একটা বিশ্ব গড়ার সূচনাবিন্দু। সন্দেহ নেই, বৈশ্বিক ‘৩৬ জুলাই’ থেকে আমরা অনেক দূরে এখনও, কিন্তু শত্রু-মিত্রের ভেদরেখা কিছুটা হলেও চেনা যাচ্ছে। 
মামদানিকে ধন্যবাদ। বিশ্বজুড়ে ‘৩৬ জুলাই’ নেমে আসুক।

আলতাফ পারভেজ: গবেষক ও লেখক

আরও পড়ুন

×