ভোটের আগে 'মোচড়' দিতে চায় হেফাজত

সারোয়ার সুমন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ১৬ মে ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১৬ মে ২০২২ | ১৩:৫৪
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে চায় কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। কর্মকৌশলে পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা। এ জন্য সম্প্রতি রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন তাঁরা। কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের প্রায় সাড়ে ৯ মাস পর অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে সংগঠনকে পুনর্গঠিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জাতীয় নির্বাচনের আগেই সারাদেশে ইউনিয়ন, থানা ও জেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন করতে চান তাঁরা।
পাশাপাশি সংগঠনটির কারাবন্দি নেতাদের মুক্ত করতে পাঁচ সদস্যের একটি সাব-কমিটি গঠন করেছে হেফাজতে ইসলাম। কোন প্রক্রিয়ায় ভোটের আগে নেতাদের মুক্তি মিলবে, তা নিয়ে কাজ করবে এই কমিটি। সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে কেন্দ্রীয় কমিটিতে যুক্ত করা হয়েছে নতুন দু'জন নায়েবে আমির। একই সঙ্গে 'ইসলামী আইন বাস্তবায়ন' নামে নতুন আরেকটি প্ল্যাটফর্মও গঠন করা হয়েছে। এতে কওমি মাদ্রাসার সাবেক শিক্ষার্থীদেরও সংগঠিত করা হচ্ছে।
গত বছরের ৭ জুন ৩৩ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করে হেফাজতে ইসলাম। এরপর চলতি বছরের ২৩ মার্চ প্রথম চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে নীতিনির্ধারণী বৈঠক করে হেফাজতে ইসলাম। এতে সভাপতিত্ব করেন হেফাজতে ইসলামের আমির মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী।
হেফাজতে ইসলামের আমির মহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, 'নতুন কমিটি গঠনের পর আমরা একটি বৈঠক করেছি। তাতে হেফাজতকে সাংগঠনিকভাবে আরও শক্তিশালী করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমাদের যেসব আলেম-ওলামা কারাবন্দি আছেন তাদের মুক্ত করাটাই আমাদের প্রধান কাজ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ ব্যাপারে কথা দিয়েছেন, আশা করি তিনি সেটা রাখবেন।'
নীতিনির্ধারণী বৈঠকে উপস্থিত থাকা একজন নায়েবে আমির বলেন, 'রাজনীতি নিয়ে আমাদের কোনো আগ্রহ নেই। কিন্তু রাজনীতির বাইরে থাকলে আবার কেউ কোনো গুরুত্ব দেয় না। আমাদের অনেক আলেম-ওলামা কারাবন্দি। আমরা নানাভাবে তাঁদের মুক্ত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছি। তাই কৌশলে কিছুটা পরিবর্তন আনা দরকার। আমাদের সাংগঠনিক শক্তিও বাড়ানো দরকার। লাখো কণ্ঠ এক হলে দাবি আদায়ও সহজ হবে।'
নানামুখী চাপে পড়ে গত বছরের ২৬ এপ্রিল গভীর রাতে কমিটি বিলুপ্ত করে পাঁচ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন তখনকার আমির জুনায়েদ বাবুনগরী ও মহাসচিব নূরুল ইসলাম জিহাদী। এর দেড় মাস পর ৭ জুন ৩৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির আমির ও মহাসচিব দু'জনই এরই মধ্যে মারা গেছেন। বর্তমানে আমিরের দায়িত্ব পালন করছেন মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী। মহাসচিবের দায়িত্বে আছেন মাওলানা সাজিদুর রহমান।
গত ২৩ মার্চ চট্টগ্রামের জামিয়া ইসলামিয়া আজিজুল উলুম বাবুনগর মাদ্রাসায় অনুষ্ঠিত সভায় ৩৩ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নেতারা। সভায় মাওলানা ফোরকানুল্লাহ ও মাওলানা মোবারকুল্লাহকে হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির করা হয়।
সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যেসব উপজেলায় এখন কমিটি আছে, সেখানে ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠনের কাজ শুরু করা হবে। বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন তাজুল ইসলাম, আব্দুল আওয়াল, মাওলানা ফুরকানুল্লাহ খলীল, মুফতি মুহাম্মদ আলী, মাওলানা আইয়ুব বাবুনগরী, মাওলানা জহুরুল ইসলাম, মাওলানা মুবারকল্লাহ ও মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম সোবহানী।
সাংগঠনিক শক্তি বাড়িয়ে সরকারকে একটা নতুন বার্তা দিতে চায় হেফাজতে ইসলাম। আর এই বার্তা দিয়ে তারা মুক্ত করতে চায় কারাবন্দি সব আলেমকে। কারাবন্দিদের দ্রুত মুক্ত করার উপায় বের করতে পাঁচ সদস্যের সাব-কমিটি করা হয়েছে এই বৈঠকে। এতে আছেন সংগঠনের নায়েবে আমির অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী, মহাসচিব সাজিদুর রহমান, ইয়াহইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মীর ইদ্রিস ও প্রচার সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী। আইনি সহায়তা ও মুক্তির ব্যাপারে কাজ গতিশীল করার জন্য কাজ করবে এ কমিটি।
নেতারা জানিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন ইস্যুতে এখন থেকে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরবে হেফাজত। এরই অংশ হিসেবে কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের সাম্প্রতিক তৎপরতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংগঠনটি। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি নিয়েও কথা বলছে সংগঠনটি। এ ছাড়া গত বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে তারা গণকমিশনের প্রতিবাদ জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে হেফাজত আমির মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, 'আমরা আজ ঘাদানিকের সমন্বয়ে গঠিত তথাকথিত গণকমিশনের করা অভিযোগ সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এই ভুঁইফোঁড় সংগঠনটি বরাবরের মতোই নিজেদের ইসলামবিদ্বেষী চেহারা জাতির সামনে উন্মোচিত করেছে। তাদের এই শ্বেতপত্র যে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বানোয়াট এবং মিথ্যা তথ্যে ভরপুর, এটি সমগ্র দেশবাসীর সামনে দিবালোকের ন্যায় পরিস্কার।'
প্রসঙ্গত, জঙ্গি অর্থায়ন ও দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টে কাজ করছে এমন অভিযোগ এনে ১১৬ ধর্মীয় বক্তার একটি তালিকা দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) জমা দিয়েছে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গঠিত 'গণকমিশন'। এর বিরুদ্ধে সরব হয়েছে হেফাজতে ইসলাম।
- বিষয় :
- হেফাজত
- 'মোচড়' দিতে চায় হেফাজত