নিষ্ক্রিয় নেতাদের ব্যাপারে কঠোর হচ্ছে বিএনপি

কামরুল হাসান
প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০১৯ | ১৩:২১ | আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৯ | ২২:৪৯
নিষ্ক্রিয় নেতাদের ব্যাপারে কঠোর হচ্ছে বিএনপির হাইকমান্ড। দলের ষষ্ঠ
জাতীয় কাউন্সিল শেষে এসব নেতাকে সক্রিয় করতে নানা উদ্যোগ নিয়ে ব্যর্থ
হয়েছেন নীতিনির্ধারক নেতারা। তাই তাদের দলের সাইডলাইনে নিয়ে ত্যাগী আর
রাজপথের নেতাদের সামনে আনার পরিকল্পনা নিয়েছেন তারা।
বিএনপি নেতারা জানান, খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য শান্তিপূর্ণ আন্দোলন
কর্মসূচিতেও দলের বেশিরভাগ নেতা অনুপস্থিত থাকছেন। তাদের সক্রিয় করতে
বিভিন্ন কৌশল নিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন তারা। তাদের মধ্যে অনেকে রাগ-ক্ষোভ আর
অভিমানে দলীয় কার্যক্রম থেকে দূরে আছেন, অনেকে পদত্যাগ করেছেন, অনেকে
দলত্যাগ করেছেন। আবার অনেকে দলের মধ্যে কোণঠাসা থাকায় কর্মসূচিতে নিয়মিত
অংশ নিচ্ছেন না। অনেকের বিরুদ্ধে সরকারের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগও রয়েছে।
নেতাকর্মীরা জানান, বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল শেষে
ঢাউস আকৃতির কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়। যোগ্য-অযোগ্য অনেককেই তখন
পদ-পদবি দিয়ে খুশি করা হয়। কিন্তু পদ-পদবি পাওয়ার পর থেকেই নিষ্ফ্ক্রিয় হয়ে
পড়েছেন তারা। তৃণমূল নেতাকর্মীরা মনে করছেন, কেন্দ্রের দুই-তৃতীয়াংশ নেতাও
যদি রাজপথে সক্রিয় থাকতেন, তাহলে তাদের প্রত্যেক কর্মসূচি সফল হতো। দলের
চেয়ারপারসনকে বিশ মাস ধরে কারাগারে থাকতে হতো না। সরকারও বিএনপিকে দুর্বল
মনে করে অত্যাচার-নির্যাতন করার সুযোগ পেত না।
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির নির্বাহী
কমিটির সদস্য হাসান মামুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন,
বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর অভ্যন্তরে বিদ্যমান 'বে-ইনসাফ'ই
গণতন্ত্র ও খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের প্রধান অন্তরায়। একশ্রেণির
নেতাকর্মী শতভাগ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে নিজের জীবন ও সম্পদ বিসর্জন দিচ্ছেন,
আরেক শ্রেণির নেতাকর্মী শতভাগ কর্মসূচিতে অনুপস্থিত থেকেও সাংগঠনিক পদে
বহাল আছেন। সক্রিয় ও নিষ্ফ্ক্রিয় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিদ্যমান এই
'বে-ইনসাফই' সফল ও অংশগ্রহণমূলক গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রধান অন্তরায়।
তবে এবার এসব নিষ্ফ্ক্রিয় নেতার বিষয়ে কঠোর হচ্ছে বিএনপির হাইকমান্ড। তাদের
চিহ্নিত করার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কে, কোথায়, কী কাজ করছেন, কোন
কর্মসূচিতে অংশ
নিচ্ছেন, দলের নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পাশে আছেন কি-না, রাজপথে থাকছেন
কি-না, দলের নির্দেশনা মানছেন কি-না তার খোঁজ নেওয়া শুরু করেছেন। দলের
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় বেশ কয়েকটি টিম এ বিষয়ে
কাজ করছেন। আগামীতে দলের কাউন্সিলে কিংবা ভোটের রাজনীতিতে তাদের এ
আমলনামাকে সামনে নিয়ে আসা হবে।
২০১৬ সালের ১৯ মার্চ কাউন্সিলের কয়েক মাস পর বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটি
ঘোষণা করা হয়। নির্বাহী কমিটিতে তখন ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটির ১৭ জনের নাম
ঘোষণা করা হয়। তাদের মধ্যে তরিকুল ইসলাম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম
হান্নান শাহ ও এম কে আনোয়ার মারা গেছেন। খালেদা জিয়া ২০ মাস ধরে কারাবন্দি।
তারেক রহমান লন্ডনে চিকিৎসাধীন। ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, লে. জে.
(অব.) মাহবুবুর রহমান ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বয়োবৃদ্ধ হয়ে
পড়েছেন। মামলা জটিলতায় ভারতে রয়েছেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। স্থায়ী কমিটির
কোরাম পূর্ণ করতে সম্প্রতি ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও
সেলিমা রহমানকে মনোনীত করা হয়েছে। এর পরও স্থায়ী কমিটিতে তিনটি পদ শূন্য
রয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদে রয়েছেন ৮২ জন সদস্য। তাদের মধ্যে মারা
গেছেন ছয়জন। সরোয়ারী রহমান, অ্যাডভোকেট কবির হোসেন, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ,
একেএম মোশাররফ ও জাফরুল হাসান অসুস্থ। ভাইস চেয়ারম্যান ৩৭ জন। তাদের মধ্যে
দু'জনকে স্থায়ী কমিটিতে নেওয়া হয়েছে। মারা গেছেন একজন, দলত্যাগ করেছেন
একজন। অসুস্থ রয়েছেন সাদেক হোসেন খোকা, বেগম রাবেয়া চৌধুরী, প্রফেসর এম এ
মান্নান ও আবদুল মান্নান। কারাগারে আছেন আব্দুস সালাম পিন্টু। মামলা
জটিলতায় কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন (কায়কোবাদ) ও ড. ওসমান ফারুক অনেকদিন
দেশের বাইরে রয়েছেন।
কমিটিতে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব একজন ও যুগ্ম মহাসচিব সাতজন। তাদের মধ্যে
সবচেয়ে সক্রিয় রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। যুগ্ম মহাসচিবদের মধ্যে সৈয়দ
মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রতিটি কর্মসূচিতে, এমনকি টেলিভিশন টক শোগুলোতেও
সরব। দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে রয়েছেন আসলাম চৌধুরী। হারুন অর রশীদ গত
নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হয়ে সংসদে যোগ দেওয়ায় নেতাকর্মীরা বিব্রতকর
অবস্থায় আছেন। দলের কোনো কর্মসূচিতে দেখা যায় না তাকে।
নির্বাহী কমিটিতে বিভিন্ন বিষয়ে সম্পাদকীয় ১৬৩টি পদ রয়েছে। এর মধ্যে শূন্য
রয়েছে পাঁচটি। মারা গেছেন পাঁচজন। পদত্যাগ করেছেন দু'জন। অনেকে দেশের বাইরে
রয়েছেন। আর বাকিদের বেশিরভাগই নিষ্ফ্ক্রিয়।
নতুন-পুরনো মিলে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ২৯৩ জন। মারা গেছেন সাতজন,
দলত্যাগ করেছেন একজন, পদ স্থগিত রাখা হয়েছে দু'জনের, পদত্যাগ করেছেন একজন।
এর বাইরে বেশিরভাগ নেতাকে তৃণমূল কর্মীরা তেমন চেনেন না। নিষ্ফ্ক্রিয়তার
তালিকায় থাকা এসব নেতা কোনো কর্মসূচিতেই থাকেন না।
তবে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয়
কমিটির কোনো নেতা নিষ্ফ্ক্রিয় নন। যে-যার অবস্থান থেকে কাজ করছেন।
প্রত্যেকের সুনির্দিষ্ট কাজ রয়েছে। যদি কেউ তার দায়িত্ব পালন না করেন তাহলে
দল চলত না।
- বিষয় :
- বিএনপি