এমপি কামরুল ও চেয়ারম্যান শাহীনের অনুসারীদের সংঘর্ষে নিহত ১

সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২৩ | ১৬:০৯ | আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২৩ | ১৯:৪৯
রাজধানীর গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে রেজাউল করিম নামে এক যুবক নিহত ও অন্তত চারজন গুরুতর আহত হয়েছেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় শান্তি সমাবেশ থেকে ফেরার পথে এ ঘটনা ঘটে। অস্ত্রের আঘাতে নিহত যুবক দলীয় কর্মী কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
আহত চারজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলেন- কেরাণীগঞ্জের যুবলীগ কর্মী নোমান হোসেন রনি (৩২), স্কুলছাত্র জুবায়ের হোসেন (১৬), দিনমজুর মোবাশ্বের (২৩) ও রাজমিস্ত্রি আরিফুল ইসলাম (১৮)। তারা কেউই শঙ্কামুক্ত নন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-২ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম এবং কেরাণীগঞ্জ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদের অনুসারীর মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়। শাহীন আহমেদের অভিযোগ, তার কর্মীদের ওপর হামলা চালান সংসদ সদস্যের অনুসারীরা। তবে এমপি জানিয়েছেন, তার কর্মীদের সঙ্গে কারও সংঘর্ষ হয়নি।
পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার হায়াতুল ইসলাম খান সমকালকে বলেন, দু’পক্ষের সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল ও হাসপাতালে যায়। তবে তারা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী কিনা তা নিশ্চিত নয়। হত্যাকাণ্ড ও হামলায় জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ ফটকে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে যোগ দিতে কেরাণীগঞ্জ থেকে এসেছিলেন নেতাকর্মীরা। তাদের একটি অংশ এমপি কামরুল ইসলাম এবং অপর অংশ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদের নেতৃত্বে আসে। ফেরার পথে দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপানোর ঘটনা ঘটে। এতে দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও পথচারীরা আহত হন। তাদের উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হয়।
পুলিশ সূত্র জানায়, নিহত যুবকের পকেটে থাকা মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় জানা যায়, তার নাম রেজাউল করিম। বাবার নাম আব্দুস সাত্তার ও মা রেনুজা বেগম। তার বাড়ি শেরপুরের নকলা উপজেলার পশ্চিম নারায়ণ খোলা গ্রামে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে রাখা হয়েছে।
কেরাণীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শাহীন আহমেদ সমকালকে বলেছেন, ‘প্রায় ৫ হাজার নেতাকর্মী নিয়ে আমি সমাবেশে যোগ দিই। ফেরার পথে গুলিস্তানের গোলাপশাহ মাজার এলাকায় পেছন থেকে আমার সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীর ওপর হামলা চালানো হয়। এমপি কামরুল ইসলাম ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেনের অনুসারীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপায়। কাউন্সিলর নিজেই হামলায় নেতৃত্ব দেন। সেখানে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখলেই সত্যতা পাওয়া যাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি আগামী নির্বাচনে ঢাকা-২ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। জনগণ আমাকে সমর্থন জানিয়েছে। এ কারণে বর্তমান সংসদ সদস্য কামরুল ইসলাম আমার ওপর ক্ষিপ্ত। তাই এ হামলা চালানো হয়েছে।’
এ বিষয়ে সংসদ সদস্য কামরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘হামলার অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা। আসলে তিনি (শাহীন আহমেদ) এমপি হতে চান। এজন্য নোংরামি করছেন ও টাকা ছড়াচ্ছেন।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন সমকালকে বলেন, ‘অনুষ্ঠান শেষে কর্মীদের নিয়ে আমরা ফিরে গেছি। কারও সঙ্গে বিরোধ হয়নি। আমি এমপির অনুসারী বলে উনি (শাহীন আহমেদ) কিছু হলেই আমার ওপর দোষ চাপান। কার সঙ্গে তাদের মারামারি হয়েছে তা জানা নেই।’
কেরাণীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি জানান, দীর্ঘ ১০ বছর ধরে বিরোধ চলছে সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদের মধ্যে। দীর্ঘদিন ধরে কেরাণীগঞ্জ মডেল থানা, কামরাঙ্গীরচর, সাভারের ভাকুর্তা, আমিনবাজার ও তেঁতুলঝোড়া এলাকায় পাল্টাপাল্টি উঠান বৈঠকসহ মতবিনিময় করছে দু’পক্ষ। আট মাস আগে ভাকুর্তা এলাকায় শাহীন আহমেদের নির্বাচনী মতবিনিময় সভা ও ঈদসামগ্রী বিতরণ মঞ্চে আগুন ধরিয়ে দেয় কামরুল সমর্থকরা। তিন বছর আগে কামরাঙ্গীরচরে শাহীন আহমেদের ইফতার মাহফিল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
জানা গেছে, কেরাণীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি কমিটি ছিল। দু’জনের মধ্যে বিরোধ নিয়ে কেরাণীগঞ্জ দক্ষিণ থানা ও কেরাণীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগের দু’টি কমিটি হয়। উপজেলা কমিটির সময় শাহীন আহমেদ আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন।
কেরাণীগঞ্জ মডেল থানা কমিটি নিয়েও দীর্ঘদিন ধরে কোন্দল চলছিল। একপর্যায়ে কামরুল ও শাহীনের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নেয়। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে একে অপরের বিরুদ্ধে তারা বক্তব্য দিয়ে থাকেন। কামরুল ইসলাম গ্রুপ শাহীন আহমেদের বিরুদ্ধে একাধিকবার পোস্টার ছাপিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে একাধিক অভিযোগও গেছে। কিছুদিন আগেও রাজধানীতে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে কামরুল ও শাহীন গ্রুপের মধ্যে চেয়ার ছোড়াছুড়ি হয়।
পিটুনিতে বিএনপি কর্মী আহত: বিএনপির মহাসমাবেশে এসে নটর ডেম কলেজের সামনে মারামারিতে আহত হয়েছেন নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন দীপু।
ইউনিয়ন সভাপতি জহির ফকির জানান, তারা সমাবেশে যোগ দিতে ঢাকায় আসেন। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ৪-৫ জন নটর ডেম কলেজের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় ২৫ থেকে ৩০ জনের একটি দল তাদের মারধর করে। হামলাকারীরা কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি কবির হোসেনের সমর্থক।
- বিষয় :
- আওয়ামী লীগ
- শান্তি সমাবেশ
- নিহত
- গুলিস্তান