পুলিশের ভোটের প্রস্তুতি শুরু, দেওয়া হবে প্রশিক্ষণ

.
সাহাদাত হোসেন পরশ
প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৫ | ০১:৫৯ | আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৫ | ১০:৩৩
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে পুলিশ। নির্বাচনে পুলিশের কর্মপরিধি, নির্বাচনী আইন ও বিধি সম্পর্কে ধারণা দিতে দেওয়া হবে প্রশিক্ষণ। আগস্ট থেকে দেশব্যাপী সব পুলিশ সদস্য ধারাবাহিকভাবে এর আওতায় আসবেন। এবারই প্রথম এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ সদরদপ্তর।
এদিকে এরই মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ ৩০ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভা থেকে সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের সমন্বয়ে দুটি মহড়া দিতে বলা হয়েছে। প্রথম মহড়া সেপ্টেম্বরে, অন্যটি নির্বাচনের আগে।
আগামী নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে পুলিশকে সব প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত মার্চে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি সভায় অংশ নেন। তখন প্রধান উপদেষ্টা পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য পুলিশের প্রস্তুতি ও করণীয় সম্পর্কে এখন থেকে উদ্যোগ নিতে হবে।’
পুলিশ সদরদপ্তরের মুখপাত্র সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) ইনামুল হক সাগর সমকালকে বলেন, নির্বাচনের সময় যাতে পেশাদারিত্বের সঙ্গে পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন, সে সম্পর্কে ধারণা দিতে প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হচ্ছে। প্রথমে কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় এটি হবে। এর পর প্রশিক্ষকরা সারাদেশে এটি করবেন। নির্বাচনকালীন কোন কাজটি কীভাবে কতটুকু আইন কাঠামোর ভেতর থেকে করবেন, প্রশিক্ষণে পুলিশ এর ধারণা পাবে। অভিজ্ঞ পুলিশ কর্মকর্তারা মাঠের সব সদস্যকে এ প্রশিক্ষণ দেবেন।
পুলিশের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কীভাবে আগামী নির্বাচনে বিতর্কমুক্ত থেকে নির্বাচন কমিশনকে পুলিশ সহায়তা করতে পারে– সেটি নিয়ে সভা হয়েছে।
ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তার পাশাপাশি পুলিশ কী কী পদক্ষেপ নিলে স্বচ্ছ নির্বাচনে সহায়ক হবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়। যখন যে ধরনের নির্দেশনা আসে, সেভাবে পুলিশ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পুলিশের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা সমকালকে জানান, নির্বাচন সামনে রেখে ২ লাখ পুলিশ সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। এটি সম্পন্ন করতে এরই মধ্যে একাধিক কমিটি গঠন করা হয়। পুলিশ একাডেমি সারদাসহ বাহিনীর অন্যান্য প্রশিক্ষণস্থলে চলবে এই কার্যক্রম। প্রশিক্ষণে কী কী বিষয় থাকবে, তার ওপর একটি কারিকুলাম তৈরি করা হচ্ছে।
নির্বাচনী আইন ও বিধির ব্যাপারে প্রথমে পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এর পর তারা নিজ নিজ জেলা ও মহানগর পুলিশের মাঠ পর্যায়ের সদস্যদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনবেন।
পুলিশের আরেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচনের আগে মাঠের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি কীভাবে করা যায়, তা নিয়ে চলছে নানা বৈঠক। বিভিন্ন মতামত উঠে আসছে। বেহাত অস্ত্র উদ্ধারের ওপর জোর দিচ্ছে পুলিশ। প্রয়োজনে অস্ত্র উদ্ধারে একাধিক বিশেষ অভিযানের কথা ভাবা হচ্ছে। অস্ত্রধারী ছাড়াও চিহ্নিত অপরাধীদের ধরতে তৎপরতা বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
আরেক কর্মকর্তা বলছেন, অনেক জায়গায় মব তৈরি করে আইন হাতে তুলে নিতে দেখা যাচ্ছে। হামলা ও আক্রমণের শিকার হচ্ছে পুলিশ। নির্বাচনের আগে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করার দিকে বাড়তি মনোযোগ দেওয়া দরকার। সিটিজেন পুলিশিংয়ের মাধ্যমে ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে উদ্বুদ্ধ করার বিষয়টি পরিকল্পনায় আছে পুলিশের।
নির্বাচন উপলক্ষে কী ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে– এ ব্যাপারে জানতে দুই জেলার পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা হয়। তারা বলেন, বিভিন্ন দল থেকে কারা সম্ভাব্য প্রার্থী হতে পারেন, তাদের ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে খোঁজ রাখা হচ্ছে। এ ধরনের তথ্য রাখা পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) রুটিন কাজ।
পুলিশের আরেক কর্মকর্তা জানান, কোনো কেন্দ্রে হঠাৎ সহিংসতা শুরু হলে কীভাবে সমন্বিতভাবে তা মোকাবেলা করা যাবে, সে ব্যপারে প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ। মহড়ায় এ বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হবে। পুলিশ বলছে, আগামী নির্বাচনে মাঠ পর্যায়ের পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ও নিরপেক্ষ থাকার বিষয়টি গুরুত্বে নিয়েছে সদরদপ্তর। এটি নিশ্চিত করতে পুলিশের জন্য কী ধরনের চ্যালেঞ্জ আসতে পারে, তা ভাবা হচ্ছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পুলিশকে কী ধরনের ভূমিকা নিতে হবে, এসব বিষয়ও পরিকল্পনায় নেওয়া হয়েছে।
গত ১৮ জুন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মে মাসের অপরাধ পর্যালোচনা সভায় ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের বিষয় উঠে আসে। ওই সভা থেকে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের সময় যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকার কথা বলা হয়। সেখানে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম জনগণকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে ডিএমপি কর্মকর্তাদের মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও জননিরাপত্তা বিধান পুলিশের দায়িত্বের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রত্যেক সদস্যকে দায়িত্ব আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে হবে। ডিউটি পোস্টে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যাবে না। অপরাধ পর্যালোচনা সভায় ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, জাতীয় স্বার্থে অবাধ, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর পরিবেশে জনগণকে সফল নির্বাচন উপহার দিতে হবে। শতভাগ নিরপেক্ষভাবে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করে এ প্রক্রিয়া সফল করতে হবে। নির্বাচনের সময় যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সবসময় প্রস্তুত থাকবে।
- বিষয় :
- পুলিশ