রাজপথে ফের সংঘাত আগুন

সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০
দফায় দফায় সংঘর্ষ, হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় ফের উত্তপ্ত রাজপথ। হঠাৎ রাজনীতি সংঘাতময় হয়ে ওঠায় জনমনে দেখা দিয়েছে নতুন আতঙ্ক। গেল শনিবার রাজধানীর প্রবেশমুখে বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে মাতুয়াইল, ধোলাইখাল, গাবতলী, উত্তরাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে হাঙ্গামা হয়েছে। সংঘর্ষে জ্বালাও-পোড়াওয়ের ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পরস্পরকে দায়ী করছে। আর পুলিশ বলছে, নিষেধাজ্ঞার পরও বিএনপি কর্মসূচি পালন করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার
চেষ্টা করেছে।
মাতুয়াইলে বিএনপির কয়েকশ নেতাকর্মী লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক আটকে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। এরপর পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। তবে ঢাকার অন্য প্রবেশমুখে বিএনপির নেতাকর্মীরা শক্ত অবস্থান নিতে পারেননি। আগে থেকেই ওই সব প্রবেশ পয়েন্টে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও পুলিশ।
এদিকে মাতুয়াইলে ছয়টি ও উত্তরা হাউস বিল্ডিং এলাকায় একটি বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটলেও জড়িতদের চিহ্নিত কিংবা গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্তের চেষ্টা করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক দল। ইগল পরিবহনে আগুনের ঘটনার একটি ফুটেজে একজনকে দৌড়ে পালাতে দেখা গেছে। সেটি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
শনিবার কোথাও দ্বিমুখী, আবার কোথাও আওয়ামী লীগ ও পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে হাঙ্গামায় জড়ায় বিএনপির নেতাকর্মীরা। এ সময় ভাঙচুর করা হয় বেশ কিছু যানবাহন। আহত হয় উভয় পক্ষের শতাধিক নেতাকর্মী। এদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আমান উল্লাহ আমানও রয়েছেন। গয়েশ্বর কর্মসূচি চলাকালে ধোলাইখালে পুলিশের পিটুনিতে আহত হন। আর গাবতলীতে কর্মসূচি পালনকালে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে আমানকে পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করে।
সহিংসতা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ২০১৩-১৪ সালেও অগ্নিসন্ত্রাস ও জ্বালাও-পোড়াও করেছিল বিএনপি। নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে, এতে গরু-ছাগলও বাদ যায়নি। গাড়ি-ঘোড়া, মানুষের বাড়িঘর পুড়িয়ে তারা জনবিচ্ছিন্ন হয়েছে। তারা যদি এই কাজটি আবারও করে, তারা জনবিচ্ছিন্ন হবে। দেশের জনগণ আর কোনো দিন তাদের সমর্থন করবে না।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা সরকারের নাটক। ২০১৪-১৫ সালেও আওয়ামী লীগ এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। আর দায় চাপানোর চেষ্টা করেছে বিএনপির ওপর। তারা গানপাউডার দিয়ে বাসে অগ্নিসংযোগ ঘটিয়েছিল। ফলে এসব জনগণ গুরুত্ব দেয় না।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে হবে আলোচনার মাধ্যমে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শক্তি বা দলীয় পেশিশক্তির মাধ্যমে বল প্রয়োগে এসব সমস্যার সমাধান কখনোই ইতিবাচক হবে না। এতে পরিস্থিতি যে কোনো সময় বেসামাল হতে পারে।
এদিকে বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন এক যৌথ বিবৃতিতে এ ধরনের ধ্বংসাত্মক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।
টুকু, নিপুণসহ আসামি ৬২৮
ঢাকার প্রবেশমুখে সংঘর্ষ, গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় রাজধানীর ৯ থানায় ১৩টি মামলা হয়েছে। গতকাল রোববার পুলিশ বাদী হয়ে এসব মামলা করে। এতে এজাহারনামীয় আসামি ৬২৮ জন। এর মধ্যে তিনটি মামলায় কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, একটি মামলায় কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী এবং অপর একটি মামলায় কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরীকে আসামি করা হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত ১৪৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ডিএমপির মুখপাত্র উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) ফারুক হোসেন বলেন, যারা গাড়িতে আগুন দিয়েছে, তাদের শনাক্তে সিসি ক্যামেরা ফুটেজ বিশ্লেষণ ছাড়াও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। বিএনপির হামলায় পুলিশের ৩১ সদস্য আহত হয়েছেন। নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরও বিএনপি কর্মসূচি পালন করে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়েছে।
মাতুয়াইল রণক্ষেত্র
যাত্রাবাড়ীর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মাতুয়াইলে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীর সংঘর্ষ হয়। বিএনপি নেতাকর্মীকে সড়ক থেকে উঠিয়ে দিতে গেলে এ সংঘর্ষ বাধে। দনিয়া কলেজের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা ছিল বিএনপির। তবে সেখানে আগে থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীর ব্যাপক উপস্থিতির কারণে মাতুয়াইলে জড়ো হন বিএনপি নেতাকর্মীরা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিশু-মাতৃ ইনস্টিটিউটের সামনে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীর মধ্যে প্রথম সংঘর্ষ শুরু হয়। বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশের দুটি এপিসিতে হামলা চালান। এরপর কাঁদানে গ্যাসের শেল, রাবার বুলেট ও শটগানের গুলির পর তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে গলিতে ঢুকে যান। থেমে থেমে দুপুর পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা আবার মহাসড়কে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও পুলিশের ধাওয়ায় তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। বিএনপি নেতাকর্মীরাও এ সময় আওয়ামী লীগ ও পুলিশ কর্মীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। সর্বশেষ দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটের দিকে বিএনপি নেতাকর্মীরা শিশু-মাতৃ ইনস্টিটিউটের সামনের গলি এবং মহাসড়কের অন্য পাশের গলি থেকে বের হয়ে মহাসড়কে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের সদস্যরা লাঠিসোটা নিয়ে আবারও তাদের ধাওয়া দেন।
এদিকে সংঘর্ষের সময় শিশু-মাতৃ ইনস্টিটিউটের আশপাশের এলাকায় কাঁদানে গ্যাসের অতিরিক্ত ধোঁয়ায় নারী, শিশুসহ অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। সংঘর্ষের কারণে সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। সংঘর্ষের সময় সাড়ে ১২টার দিকে মাতুয়াইল মেডিকেল মোড়ে গুলিস্তানগামী স্বদেশ পরিবহনের একটি বাস, দুপুর ১টার দিকে মেডিকেল মোড়ে তুরাগ পরিবহনের আরেকটি মিনিবাস ও সান্টু ফিলিং স্টেশনের সামনে ১টা ৪৫ মিনিটে তিশা ট্রাভেলসের একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। এ সময় ঘটনাস্থলে থাকা প্রাইভেটকার চালক নয়ন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের একটি মিছিল ফিলিং স্টেশনের সামনে দিয়ে যাওয়ার পরপর একটি মোটরসাইকেলে তিন যুবক আসেন। তাদের দু’জন বাসে আগুন দিয়ে ভিডিও করে মোটরসাইকেলেই পালিয়ে যান। এ সময় ফিলিং স্টেশনের আশপাশে বিএনপির মিছিলে দেখা যায়নি।’
তিশা বাসের চালক মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘তিনজন লোক মোটরসাইকেলে এসে তাঁকে বাস থেকে নামিয়ে দিয়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয়। ওরা বলে, আপনি কি নিজে থেকে নামবেন, নাকি আপনাকেসহ আগুন দেব।’ চালক সঙ্গে সঙ্গে বাস থেকে লাফ দিয়ে প্রাণ বাঁচান। চালক দাবি করেন, বাসে আগুন দেওয়ার সময় ঘটনাস্থলের দুই দিকে চার-পাঁচ হাত দূরত্বে পুলিশের উপস্থিতি ছিল। স্বদেশ পরিবহনের বাসটির চালক ইমরান হোসেন সাংবাদিকদের জানান, তিনি যাত্রী নিয়ে গুলিস্তানের দিকে যাচ্ছিলেন। মাতুয়াইল মেডিকেল মোড়ে পুলিশ গাড়ি আটকে তাঁকে ঘুরিয়ে দেয়। তিনি মেডিকেল মোড়ে ইউটার্ন নিয়ে যাত্রী নামানোর জন্য দাঁড়াতেই কয়েকজন হেলমেট পরিহিত ব্যক্তি এসে বাসের পেছনের দিকে পেট্রোলজাতীয় কিছু ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। তারা চালক ইমরানকে মারধর করে বাসের চাবিও ছিনিয়ে নেয়। শনিবার দুপুর ২টার দিকে শান্ত ফিলিং স্টেশনের সামনে পরিস্থিতি দেখতে এসে ডিএমপি ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার জিয়াউল আহসান তালুকদার বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা বেরিয়ে এসে বাসে আগুন দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত তারা সাত-আটটি গাড়িতে আগুন দিয়েছে। তিনটি বাস পুরোপুরি পুড়ে গেলেও অন্য বাসের আগুন দ্রুত নেভানো গেছে।
বিএনপির কর্মসূচি, সড়ক আ’লীগের দখলে
রাজধানীর প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচির অংশ হিসেবে কল্যাণপুরের এস এ খালেক বাস টার্মিনালের সামনে ফুটপাতে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। সকাল ১১টায় কর্মসূচির কথা থাকলেও অনুমতি না থাকায় পুলিশ মাইক ও চেয়ার নিয়ে যায়। শুক্রবার রাতে ডিএমপি জানিয়েছিল, জনদুর্ভোগ এড়াতে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ কাউকে সড়কে অবস্থান নিতে দেওয়া হবে না। তবে বিএনপির কর্মসূচিস্থল থেকে ৫০ ফুট পশ্চিমে আওয়ামী লীগের কয়েকশ নেতাকর্মী লাঠি ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অবস্থান নেয়। সেখানে পুলিশ থাকলেও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের জমায়েত হতে নিষেধ করেনি। বরং পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ছিলেন পাশাপাশি। বিএনপির পাঁচজন কর্মীকে মারধর করে পুলিশের গাড়িতে তুলে দেয় আওয়ামী লীগ কর্মীরা। সকাল সোয়া ১১টার দিকে শখানেক নেতাকর্মী পরিবেষ্টিত হয়ে গণ-অবস্থানস্থলে আসেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ। কর্মসূচি পালনের অনুমতি নেই জানিয়ে পুলিশ তাঁকে এবং বিএনপি নেতাকর্মীকে সড়ক থেকে সরে যেতে বলে। আমান উল্লাহ জবাবে বলেন, সড়ক থেকে সরে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। এর পর শুরু হয় ধস্তাধস্তি। এক পর্যায়ে সড়কে লুটিয়ে পড়েন আমান উল্লাহ। তাঁকে গাড়িতে তুলে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে হাসপাতালে আমানের জন্য খাবার ও ফলমূল পাঠানো হয়।
পরে অনেকক্ষণ বিএনপি নেতাকর্মীকে গাবতলী-কল্যাণপুর এলাকায় দেখা যায়নি। দুপুর সোয়া ১টার দিকে শ্যামলী শিশু মেলার দিকে বিএনপির কয়েকশ নেতাকর্মীর একটি মিছিল আসে। তাদের হাতে লাঠিসোটা ছিল। প্রত্যক্ষদর্শী মেহেদি হাসান সাদ্দাম জানান, মিছিলকারীরা বিভাজক টপকে সড়কের পশ্চিম পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাস ভাঙচুর করে। শ্যামলী বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের একটি জিপে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়।
দুপুর দেড়টার দিকে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডের পশ্চিমে বিআরটিসি ডিপোর সামনে থেকে বিএনপির শখানেক নেতাকর্মী লাঠি হাতে মিছিল করে যাচ্ছিল। সড়কে অবস্থানের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সেখানে রাস্তায় মঞ্চ তৈরি করে অবস্থান নেয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। তাদের পাশেই ছিলেন পুলিশ এবং আনসারের শখানেক সদস্য। বিএনপি মিছিলটি গাবতলী গরুর হাটের মুখে প্রথমে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। একই সময়ে পেছন থেকে তাদের ওপর মিছিলে হামলা করে আওয়ামী লীগের কর্মীরা।
যা ঘটেছিল পুরান ঢাকায়
বাবুবাজার এলাকার নয়াবাজারে নির্ধারিত স্থানে দাঁড়াতেই পারেনি বিএনপি নেতাকর্মীরা। শনিবার সকাল থেকে এই স্থানে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয় বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আবার রাস্তার অপর পাশে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা চেয়ার নিয়ে সতর্ক অবস্থান নেয়। বিচ্ছিন্নভাবে বিএনপি নেতাকর্মীরা এ এলাকায় আসার চেষ্টা করলে এখান থেকে পাঁচ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। নির্ধারিত স্থানে জড়ো হওয়া সম্ভব নয় মনে করে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে ধোলাইখাল এলাকায় তিন রাস্তার মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এর কিছুক্ষণ পর সেখানে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনসহ আরও অনেক নেতা উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দেন। শুরুতে এ এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি না থাকলেও আধাঘণ্টার মধ্যে সেখানে হাজির হয়। এর পর শুরু হয় দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। একদিকে নেতাকর্মীরা ইটপাটকেল ছোড়ে, অন্যদিকে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা ইটপাটকেলের সঙ্গে টিয়ার গ্যাসের শেল, রাবার বুলেট মারতে থাকেন। একসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পিছু হটে। বিএনপি নেতাকর্মীরা আবারও মূল সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। কিছু সময় পর পুলিশ এপিসিসহ আরও বেশি সদস্য নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে গয়েশ্বর দুই হাত তুলে রাস্তার মাঝে অবস্থান নিয়ে পুলিশের মনোযোগ আকর্ষণ করেন। পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাতে সাড়া দিয়ে গয়েশ্বরের কাছে যান। এ সময় দু’পক্ষে ইটপাটকেল মারতে থাকে। পুলিশ কর্মকর্তা গয়েশ্বরের সঙ্গে কথা বলার মুহূর্তে আরও কিছু পুলিশ সদস্য গয়েশ্বরের পাশে থাকা আবদুস সালামকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে লাঠিপেটা শুরু করেন। আরেক সদস্য গয়েশ্বরকেও লাঠিপেটা করেন। একজনের ধাক্কায় তিনি রাস্তায় পড়ে যান। এ সময় তাঁর মাথা ফেটে রক্ত ঝরতে দেখা যায়। গয়েশ্বরকে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নেওয়া হয়। ডিবির প্রধান হারুন অর রশীদের সঙ্গে ডিবি কার্যালয়ে মধ্যাহ্নভোজ করেন গয়েশ্বর। এর পর তাঁকে পুলিশই বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নামিয়ে দিয়ে আসেন। ডিবিপ্রধান বলেন, ‘বিএনপির নেতাকর্মীর হামলা থেকে বাঁচাতে গয়েশ্বরকে ডিবিতে আনা হয়।’
উত্তরায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া
বিএনপির নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে উত্তরার হাউজ বিল্ডিং এলাকায় বিএনএস টাওয়ারের সামনে যায়। তাদের মহাসড়ক থেকে সরাতে তিনটি সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ। পুলিশের সঙ্গে তারা সংঘর্ষে জড়ায়। এক পর্যায়ে পালিয়ে যায় নেতাকর্মীরা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মালেকা বানু আদর্শ বিদ্যানিকেতনের গলি থেকে মূল সড়কের দিকে আসে। পরে বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশ ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। এ সময় পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
- বিষয় :
- রাজপথ