ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

স্বৈরাচারী সরকারকে বিদায় দিতে হবে: ড. মঈন খান

স্বৈরাচারী সরকারকে বিদায় দিতে হবে: ড. মঈন খান

নয়পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শুক্রবার বিকেলে শোভাযাত্রাপূর্ব সমাবেশে বক্তব্য দেন ড. আব্দুল মঈন খান। ছবি: মামুনুর রশীদ

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৪:৫২ | আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৪:৫৯

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, ‘আমরা এই র‌্যালির অনুষ্ঠান করলেও আমাদের মূল মাত্র লক্ষ্য একদফা আন্দোলন। একদফা আন্দোলনের মাধ্যমে আজকে দেশে যে ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারী সরকার এদেশের ১৮ কোটি মানুষের ওপর চেপে বসেছে তাকে বিদায় দিতে হবে সেটাই আমাদের এক দফা আন্দোলন।’ শুক্রবার বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনে দলের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রাপূর্ব সমাবেশে এ কথা বলেন তিনি।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শোভাযাত্রা ছাড়াও সকালে নয়াপল্টন ও গুলশানের কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়। বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় অংশ নিতে বাদ জুমা থেকে নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করেন। ঢাকা দুই মহানগরে বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে বড় আকৃতির জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকার পাশাপাশি রঙ-বেরঙের ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে নয়াপল্টনে জড়ো হতে থাকেন নেতাকর্মীরা। তারা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নামে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে নয়াপল্টন। র‌্যালি শুরুর আগে কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল রেস্তারাঁ মোড় থেকে শুরু করে নয়া পল্টনের দীর্ঘ সড়কে নেতা-কর্মীদের তিল পরিমান ঠাই ছিলো না। এই বর্ণাঢ্য র‌্যালিতে ছিল ঘোড়ার গাড়িও।

শোভাযাত্রাপূর্ব সমাবেশে ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘মনে রাখতে হবে বিএনপি কেনো সৃষ্টি করেছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তিনিই দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, এদেশের মানুষের হাতে ভোটের অধিকার। আজকে আওয়ামী লীগ সরকার এদেশে অলিখিত বাকশাল মানুষের ওপরে হামলা-মামলা-জেল-জুলুম-অত্যাচার-নির্যাতন-গুম-খুন দিয়ে তাদের ক্ষমতাকে তারা দীর্ঘ স্থায়ী করতে চায়। কিন্তু দেশের মানুষ তা হতে দেবে না। রাজপথে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে এই অগণতান্ত্রিক সরকারকে বিদায় দিয়ে এদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। এটাই আজকে দলের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমাদের শপথ।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আজকে কৃষক শ্রমিকদেরকে অসম্মান করা হয়। পথে পথে প্রবাসী শ্রমিকদের ওপর হয়রানি করা হয়। তাদের কাছে চাঁদাবাজি করা হয়। দ্রবমূল্যের ঊধ্বগতির ফলে কৃষক, শ্রমিক, মজুরদের পিষ্ট করে ফেলা হয়েছে। এই সরকারের দল হলো বাংলাদেশের কোটিপতিরা। আমরা এই সরকারের পরিবর্তন চাই। আমরা এদেশে কৃষক, শ্রমিক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষ, বেকার যুবক তাদের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আর সেজন্য একদফা দাবি আদায় করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নাই।’

প্রধান বিচারপতির বিদায়কালের কথা তুলে ধরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “প্রধান বিচারপতি বলেছেন, ‘হস্তক্ষেপমুক্ত না হলে বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে না।’ এ কথা কি উনার আসার সময় মনে ছিল না? যাওয়ার সময় মনে হয়েছে। এখন বলে লাভ কী হবে। তবে এই বার্তা সব বিচারপতির জন্য, এই বার্তা দেশের সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য, এই বার্তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য। মনে রাখতে হবে যে বাংলাদেশ বিচার বিভাগকে, বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগকে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে, বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তাদের তাদের রাজনীতির উর্ধ্বে থাকার শপথ রয়েছে। বিদায়ী প্রধান বিচারপতি সেই শপথের কথাই বলেছেন। তাদের সকলকে রাজনীতির উর্ধ্বে থাকতে হবে। আর এটা মনে না রাখলে দেশের মানুষ ছাড় দিবে না। প্রত্যেকটি অপকর্মের বিচার হবে এই দেশে।”

আমানুল্লাহ আমান বলেন, ‘বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র‌্যালিতে ঢাকাবাসী নেমে এসেছে কারণ ভোটচোর সরকারকে আর দেখতে চায় না।’

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আমাদের গণতন্ত্রকে ফিরে আনতে হবে। এর জন্য অনেক মূল্য দিয়ে বিজয় নিয়ে ঘরে ফিরে যেতে হবে।’

আবদুস সালাম বলেন, ‘বর্তমান সরকারের কাছে দুটি পথ খোলা আছে। হাসপাতালে গিয়ে অসুস্থ খালেদা জিয়ার ক্ষমা চাওয়া। আর তত্ত্ববধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন। আর আমাদের একটাই শপথ, গুলি খাব জেলে যাব সরকারকে উৎখাত করে ঘরে ফিরব।’

মহানগর বিএনপি উত্তরের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসজিব রুহুল কবির রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, যুব দলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, ছাত্র দলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল বক্তব্য দেন।

র‌্যালিতে বিএনপির খোলা ট্রাকের করে স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, হাবিবুর রহমান হাবিব, শাহজাদা মিয়া, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, আবদুস সালাম আজাদ, শিরিন সুলতানা, কায়সার কামাল, মীর সরাফত আলী সপু, নাসির উদ্দিন অসীম, রফিকুল ইসলাম, রাকিবুল ইসলাম বকুল, সেলিমুজ্জামান সেলিম, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েলসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা অংশ নেন।

নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে এই র‌্যালি শুরু করে ফকিরাপুল মোড়, নটর ডেম কলেজ সড়ক, মতিঝিলের শাপলা চত্বর, ইত্তেফাক মোড়, হাটখোলা হয়ে রাজধানীর সুপার মার্কেটের কাছে শেষ হয়। র‌্যালি উপলক্ষে নয়াপল্টন থেকে হাটখোলা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা ছিল।

আরও পড়ুন

×