সাক্ষাৎকার: ইশরাক হোসেন
উপদেষ্টা সেবা বন্ধের নির্দেশ দিয়ে আমার ওপর দায় চাপাচ্ছেন

ইশরাক হোসেন
ইশরাক হোসেন
প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৫ | ০১:৩০ | আপডেট: ২০ জুন ২০২৫ | ০৭:৫০
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে অচলাবস্থা চলছে। নাগরিকরা সেবা পাচ্ছেন না। মেয়র নিয়ে মুখোমুখি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও ইশরাক হোসেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে গুলশানে নিজ বাসভবনে এ নিয়ে সমকালের সঙ্গে কথা বলেন ইশরাক হোসেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন অমিতোষ পাল সমকাল: নগর ভবনে সেবা বন্ধ থাকার দায় কার?
ইশরাক হোসেন: স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা (আসিফ মাহমুদ) ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের ফোন করে বলছেন, তারা যেন কার্যালয় না খোলেন। কোনো সেবা যেন না দেন। এমনকি যাতে বর্জ্য অপাসরণ করতে না পারে এ জন্য বর্জ্যবাহী গাড়িগুলোকে জ্বালানি তেল দিতেও নিষেধ করা হচ্ছে। এভাবে নাগরিক সেবা বন্ধ করে সেই দায় তারা আমার ওপর চাপাতে চাইছেন।
সমকাল: শপথ নেওয়ার আগে আপনি মেয়র হিসেবে ব্যানার টানিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। এটা কি আইনসিদ্ধ?
ইশরাক হোসেন: ব্যানারে তারা আমাকে মেয়র হিসেবে উল্লেখ করেছে। কিন্তু আমি এ ধরনের নির্দেশনা দেইনি। তারা মনে করেছে তাদের ভোটে আমি মেয়র হয়েছি। আদালতও রায় দিয়েছেন। এ নিয়ে কিছু ব্যক্তি ও গণমাধ্যম আমার সমালোচনা করছে। কিন্তু সরকার যে আদালতের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাল সেটা তারা সামনে আনছে না।
সমকাল: নগর ভবন ও আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতে তালা দিল কারা?
ইশরাক হোসেন: আদালতের রায়ের পরও যখন আমাকে মেয়র পদে শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা করা হচ্ছিল না, তখন এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা তাদের ক্ষোভ থেকে তালা মেরেছিল। আমিই সরকারকে বলেছি, তালাগুলো খুলে নাগরিক সেবাদান শুরু করেন। তারা সেটা না করে উল্টো সেবা বন্ধ রাখার জন্য চাপ দিচ্ছে।
সমকাল: আপনার বর্তমান আন্দোলন ও কার্যক্রমের বিষয়ে আপনার দল বিএনপির অবস্থান কী?
ইশরাক হোসেন: আমি যদি দলীয় কোনো সিদ্ধান্তের বাইরে কোনো কাজ করতাম, তাহলে এতদিন আমার বিরুদ্ধে দল অনেক কঠোর ব্যবস্থা নিত। দলই আমাকে জেলে ঢোকানোর ব্যবস্থা করত। একজন উপদেষ্টা বলেছেন, আমি নাকি ফৌজদারি অপরাধ করেছি। অপরাধ করে থাকলে তারা কেন আমার বিরুদ্ধে মামলা করছে না। আমাকে গ্রেপ্তার করছে না।
সমকাল: ২০২০ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচন তো আপনি ও আপনার দল বর্জন করেছিল?
ইশরাক হোসেন: আমি কখনও নির্বাচন বর্জন করিনি। আমার দলও বর্জন করেনি। বর্জন করলে তো আমি আইনের আশ্রয় নিতাম না। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার অবৈধভাবে তাপসকে (ফজলে নূর তাপস) মেয়র বানিয়েছিল। আদালতের রায়েও তা প্রমাণিত হয়েছে। এ জন্যই জনগণ মনে করে, আমিই তাদের নির্বাচিত মেয়র।
সমকাল: আদালতের রায়ের পর শপথ না পড়ানোর বিষয়ে আপনি কাকে দায়ী করবেন?
ইশরাক হোসেন: স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা চাননি আমি মেয়র পদে বসি। তারা উত্তর সিটি করপোরেশনে একজনকে ধরে এনে মেয়র পদে বসিয়ে দিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে দেখেন, সেটা নিয়ম মেনে হয়েছে কিনা। এখানেও তারা তা করতে চেয়েছেন। এর জন্য আমি উপদেষ্টাকেই দায়ী করব। বিষয়টি নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদেও আলোচনা হয়েছে।
সমকাল: শপথ না পড়ানোর বিষয়ে কি আবার আদালতের আশ্রয় নেবেন?
ইশরাক হোসেন: বিএনপির একটি দক্ষ আইনজীবী প্যানেল রয়েছে। এটা নিয়ে আমরা আলোচনা করব। আর ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা চলছে। আমরা সেটাও দেখব, সেখানে কী হয়।
সমকাল: নগর ভবনে আবার কবে যাবেন?
ইশরাক হোসেন: আইনগতভাবে এখনও মেয়র হিসেবে আমার শপথ হয়নি। কিন্তু সেবা যাতে বিঘ্নিত না হয়, সে জন্য আমি তিনটি সভা করে সেবা কার্যক্রম চালু করার চেষ্টা করেছি। সরকারকে বলছি, আপনারা সেবা কার্যক্রম চালু করেন। আমি প্রতীকী প্রতিবাদ করতেই নগর ভবনে গিয়েছি।
সমকাল: শপথ নেওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে গেলেও আপনি আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন কেন?
ইশরাক হোসেন: আমাকে মেয়র পদে না বসানোর যে ষড়যন্ত্র ছিল, তা নগরবাসী ও সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বুঝতে পারেন। আমি কিন্তু কাউকে আন্দোলনে নামতে বলিনি। যখন দেখলাম হাজার হাজার মানুষ রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে দিনের পর দিন রাজপথে থাকছেন; সপ্তাহখানেক পর আমি তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে সেখানে গিয়েছি। কারণ তারা আমাকে ভোট দিয়েছিল। সে সময় সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও সংহতি জানিয়ে এ আন্দোলনে নেমে আসেন। তারা তখন ক্ষুব্ধ হয়ে বিভিন্ন কক্ষে তালা মেরে দেন। এখন তাদের চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে শাস্তি দিলে আমি তা হতে দেব না। প্রয়োজনে আমি রাজপথে নামব। আমি বরাবরই বলেছি, আমার মেয়র পদে বসার কোনো ইচ্ছে নেই। কিন্তু সরকার আমাকে মেয়র পদে না বসাতে যে নাটক করল তা পরিষ্কার হওয়া দরকার ছিল। আমার নামের সঙ্গে মেয়র কেন লেখা হলো, সেটা প্রচার করে এখন তারা তাদের ষড়যন্ত্রটা আড়াল করতে চাইছে।
সমকাল: সম্প্রতি জনগণের ট্যাক্সের টাকায় আপনি মশক নিধন কার্যক্রম উদ্বোধন করলেন। এটা করার নৈতিক অধিকার কি আপনার আছে?
ইশরাক হোসেন: মন্ত্রণালয় নাগরিক সেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। এদিকে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। আর জনগণের টাকায় কেনা ওষুধ আমি আমার ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করলে, এটা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারত। এর পরও যদি সরকার মনে করে, আমি এটা করে অন্যায় করেছি, তাহলে সরকার মামলা করতে পারে। আমি আইনিভাবে লড়ব।
সমকাল: আপনাকে ধন্যবাদ।
ইশরাক হোসেন: সমকালকেও ধন্যবাদ।
- বিষয় :
- ইশরাক হোসেন