ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

সকল বিচারবহির্ভূত হত্যার বিচার করতে হবে: মির্জা ফখরুল

সকল বিচারবহির্ভূত হত্যার বিচার করতে হবে: মির্জা ফখরুল

ফাইল ছবি

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ আগস্ট ২০২০ | ০৭:৫৩ | আপডেট: ১৩ আগস্ট ২০২০ | ০৮:২৮

গত এক দশকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিন হাজার মানুষকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে এসব ঘটনার বিচার দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, 'পুলিশ ও র‌্যাবের ওপর নির্ভরশীল হয়ে সরকার জনগণের অধিকার হরণ করে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে হত্যা-খুন-গুম করে ক্ষমতায় টিকে আছে। আজকের আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, সংবিধানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, গণতন্ত্রের বিপক্ষে গিয়ে স্বৈরাচারী পথে হেঁটে মানবতাবিরোধী একটা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে। সেই কারণে তারা এই ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে।'

বৃহস্পতিবার উত্তরার বাসা থেকে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি আরও বলেন, '২০০৯ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এই সরকারের অধীনে দেশে পুলিশ, র‌্যাব, ডিবির হাতে প্রায় তিন হাজার মানুষ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। এদের অধিকাংশই বিরোধীদলের নেতা-কর্মী। গত ১০ বছর সময়ের মধ্যে এই দেশের জেল হেফাজতে মারা গেছেন ৭৯৫ জন মানুষ, গুম হয়েছে ৬০১ জন, ধর্ষনের শিকার হয়েছেন ৭৮০৬ জন নারী, ১৯৩৪ জন শিশু নির্যাতিত হয়েছে, ১৮ জন শিশু হত্যার শিকার হয়েছে। অন্যদিকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামে এক লাখের উপরে রাজনৈতিক মামলা হয়েছে এবং সেখানে আসামি করা হয়েছে প্রায় ৩৫ লাখের উপরে মানুষকে। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে, লাখো মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত মহান স্বধীনতার মধ্য দিয়ে পাওয়া প্রিয় জন্মভূমি আজ মৃত্যুউপত্যকা, জল্লাদের রঙ্গমঞ্চ।'

গণমাধ্যমে প্রকাশিত আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিসংখ্যান তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'বিনা বিচারে মানুষ খুন-গুম কখনো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে যায় না। সংবিধান এটাকে সমর্থন করে না। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য, ভিন্নমতকে দমন করার জন্য এই ধরনের গুম-খুন-অত্যাচার-নিপীড়ন-নির্যাতন ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট ১৯৭৩ ধারা-২ (২) (ক) এর অধীনে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।'

কক্সবাজারে মেরিন ড্রাইভে পুলিশের গুলিতে নিহত অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'সিনহাকে পুলিশ হত্যা করেছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। গণমাধ্যম অত্যন্ত পেশাগত দায়িত্বে থেকে এর সংবাদগুলো সংগ্রহ করে পরিবেশন করেছে। সাধারণ মানুষেরা পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করতে সাহস পায় না। গর্বিত সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজরের এই ধরনের হত্যাকাণ্ডের জন্য অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা, সমগ্র জাতি যেভাবে প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছে তাতে মেজর সিনহার পরিবার সাহস পাচ্ছে, বিচার প্রার্থী হতে পারছে। আমরা অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই। একই সঙ্গে সকল বিনা বিচারে হত্যাের বিচার অবশ্যই চাই এবং দেশের মাটিতে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে সেই বিচার হবে বলে আস্থা রাখি, বিশ্বাস করি।'

তিনি আরও বলেন, 'এই সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সব কিছুকেই উপেক্ষা করছে, অবহেলা করছে। এই পুলিশকে ব্যবহার করেছে নির্বাচনে। রাতের অন্ধকারে ভোট দিতে হবে, প্রতিপক্ষকে শেষ করে দিতে হবে এবং তাদের এখন কী করে তারা নিয়ন্ত্রণ করবে? এই সরকার একটা দানবের পরিণত হয়েছে। আমরা এই অবস্থার অবসান চাই। আমরা বিশ্বাস করি- জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকার বিদায় নেবে এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে।'

করোনা ভাইরাস চিকিৎসা ব্যবস্থার ভঙ্গুর চিত্রকে সামনে এনেছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, 'প্রতিদিন মানুষ মারা যাচ্ছে, প্রতিদিন সংক্রমণের হার বাড়ছে, প্রতিদিন সরকারের লুটপাটেরও খবর বেরুচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন বিখ্যাত মানুষ মিঠু। সে বহাল তবিয়তে দেশ ছেড়ে বাইরে চলে গেছে। যারা লুণ্ঠন করেছে, যারা জনগণের কষ্টার্জিত টাকা লুট করে নিয়েছে তারা সহজেই দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে। আর সাধারণ মানুষ যারা এখানে লড়াই করবে বেঁচে থাকার জন্য, জীবিকার জন্যে, দেশের উন্নয়নের জন্য তারা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাবে ক্রসফায়ারে।'

আরও পড়ুন

×