ঢাকা সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫

পল্টনে অবরোধের চেষ্টা, দুই নেতাকে শোকজ বিএনপির

পল্টনে অবরোধের চেষ্টা, দুই নেতাকে শোকজ বিএনপির

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২০ | ১০:২৬ | আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২০ | ১৩:৪২

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে রাজধানীতে অবরোধ কর্মসূচি পালনের অভিযোগে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও শওকত মাহমুদকে শোকজ করেছে দলটি। গতকাল সোমবার দুপুরে আকস্মিকভাবে পল্টন মোড়ে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিএনপিসহ আরও কয়েকটি দলের সহস্রাধিক নেতাকর্মী রাস্তায় বসে পড়েন। এ পরিস্থিতিতে ওই এলাকার আশপাশের সড়কগুলোতে ব্যাপক যানজট ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা রাস্তা অবরোধ রাখার পর পুলিশের লাঠিচার্জে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় তারা। পূর্বঘোষণা ছাড়া হঠাৎ এ ধরনের কর্মসূচির কারণ অনুসন্ধান করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। একই সঙ্গে রাজনৈতিক অঙ্গনেও আলোচিত হচ্ছে ঘটনাটি।

বিএনপি সূত্র জানায়, শোকজ পাঠানো দুই নেতার মধ্যে মেজর (অব.) হাফিজ পল্টনের কর্মসূচিতে সরাসরি অংশগ্রহণ না করলেও তার প্রচ্ছন্ন সমর্থন ছিল। অন্যদিকে শওকত মাহমুদ দলের নির্দেশনা অমান্য করে সরাসরি নিজে অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দলের হাইকমান্ড এ ধরনের অঘোষিত কর্মসূচিকে 
হঠকারী ও আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন। অবশ্য দুই নেতার শোকজে বা আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে নেতারা সরাসরি পল্টন মোড়ের অবরোধের বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেননি।

তবে দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ এনে তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। গত রাতে এই নোটিশ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দলের নামে নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত করে সংগঠনের শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে কেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, সেজন্য শওকত মাহমুদকে ৭২ ঘণ্টা এবং হাফিজ উদ্দিন আহমেদকে পাঁচ দিনের মধ্যে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে লিখিত জবাব দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তার স্বাক্ষরে এই নোটিশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান রিজভী আহমেদ।

অবশ্য গতকাল রাতে দুই নেতার বক্তব্যের জন্য যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি। দু'জনের মোবাইলই বন্ধ পাওয়া গেছে। দলীয় সূত্র জানায়, সরকারবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ক্ষুদ্র একটি অংশ সরকার পতনের দাবিতে এক দফা আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়। এর মধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের কয়েকটি শরিক দল রয়েছে। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস সামনে রেখে ওই পক্ষ আন্দোলনের দিনক্ষণ নির্ধারণ করে।

সোমবার রাজধানীর পল্টনে সড়ক অবরোধকারীদের ধাওয়া করে পুলিশ- সমকাল

বিএনপিসহ অন্যান্য দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে 'অঘোষিত' এ কর্মসূচিকে নিয়ে ভেতরে ভেতরে গুঞ্জন ও উত্তেজনা দেখা দেয়। এ ধরনের গোপন ও হঠকারী কর্মসূচির সংবাদে দ্রুত পদক্ষেপ নেন দলের হাইকমান্ড। এ কর্মসূচিতে বিএনপির কোনো পর্যায়ের নেতাকর্মী যাতে সম্পৃক্ত না হয় সেজন্য রোববার রাত থেকে ব্যাপক তৎপরতা চালান সিনিয়র নেতারা। ফলে রাজধানীর আরও কয়েকটি পয়েন্টে অবরোধের পরিকল্পনা থাকলেও তা ব্যর্থ হয়ে যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত রোববার রাতে রাজধানীতে বিএনপির প্রতিটি শাখায় এ কর্মসূচিতে অংশ না নিতে কঠোর বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়। এমনকি এদিন পল্টন ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের কোনো কর্মসূচিতে না যেতেও বলা হয় ওই বার্তায়।

আন্দোলনে জড়িত বিএনপির পদধারী নেতাদেরও এ পথ থেকে সরে আসার জন্য নির্দেশনা দেন দলের সর্বোচ্চ হাইকমান্ড। এতে অনেকে কর্মসূচি থেকে নিজেদের বিরত রাখলেও কয়েকজন সম্পৃক্ত ছিলেন। দলের নির্দেশনা অমান্য করে তৃণমূল নেতাকর্মীদের একটি অংশকে কর্মসূচিতে নেওয়ার বিষয়েও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন শীর্ষ নেতারা। আর এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দলের দুই শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিচ্ছে দলটি।

জানা গেছে, প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা পর পুলিশের একটি দল তাদের ধাওয়া দিলে বিক্ষোভকারীরা সরে যায়। এ সময় কোনো গ্রেপ্তার কিংবা আহত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি। পল্টন থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক সমকালকে বলেন, কিছু নেতাকর্মী পল্টন এলাকায় জড়ো হয়ে অবরোধের চেষ্টা চালায়। এ সময় তারা সরকারের পদত্যাগ দাবি করে। তাদের অবস্থানের কারণে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছিল বলে ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিএনপি সমর্থিত পেশাজীবী পরিষদের আলোচনা সভা শেষে দুপুর সোয়া ২টার দিকে প্রায় এক হাজার নেতাকর্মী মুক্তাঙ্গনে জড়ো হন। বায়তুল মোকাররম মসজিদ ও এর আশপাশ থেকে একই সংখ্যক নেতাকর্মী মাথায় ক্যাপ ও হাতে জাতীয় পতাকা নিয়ে সেখানে আসেন। এতে হেফাজতে ইসলামের শতাধিক নেতাকর্মীও যোগ দেন। এ সময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান ছাড়া বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের পদধারী উল্লেখযোগ্য কোনো নেতাকে দেখা যায়নি। কিছু সময়ের জন্য গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া উপস্থিত থেকে চলে যান।

আরও পড়ুন

×