সড়কের নিরাপত্তায় চসিকের ৩ উদ্যোগ

সমকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৪ | ০০:২৭
নগরের সড়কে শৃঙ্খলা ও পথচারীদের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। এর মধ্যে তিনটি উল্লেখযোগ্য। এগুলো হলো– ফুটপাত অবৈধ দখলদারমুক্ত করা, নগরের ৩১টি মোড়ে পদচারী সেতু নির্মাণ ও পে-পার্কিং চালু। এর মধ্যে ফুটপাত অবৈধ দখলদার মুক্ত করলেও তা আবারও হকারদের দখলে চলে গেছে। পদচারী সেতুর নির্মাণ চলছে ঢিমেতালে। চলতি মাসে নগরের আগ্রাবাদে পে-পার্কিং চালু হলেও এটি ব্যবহারে মানুষের মধ্যে তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি।
ফুটপাত থেকে অবৈধ উচ্ছেদ : গত ৮ ফেব্রুয়ারি নগরের নিউমার্কেট ঘিরে এক বর্গকিলোমিটারের বেশি এলাকাজুড়ে অবৈধ দখলে থাকা ফুটপাতে অভিযান চালিয়ে হাজারখানেক হকার উচ্ছেদ করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। উচ্ছেদের চার দিনের মাথায় ১২ ফেব্রুয়ারি ফুটপাত পুনর্দখল ঠেকাতে অভিযানকালে নগরের রেলস্টেশন এলাকায় ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরপরও ফুটপাত পুনর্দখল ঠেকাতে কয়েক দফা অভিযান চালিয়েছে সিটি করপোরেশন। অভিযান শেষ করে চলে যাওয়ার পর আবারও ফুটপাতে বসে যান হকাররা। ফুটপাত থেকে হকারদের পুনর্বাসনে হলিডে মার্কেট করার ঘোষণা দিয়েছিলেন সিটি মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করমি চৌধুরী। রেলওয়ের কাছে জায়গা ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে চিঠিও দেওয়া হলেছিল। কিন্তু বিষয়টি আর এগোয়নি।
পরিকল্পিত ফোরাম চট্টগ্রামের সহসভাপতি স্থপতি জেরিনা হোসেন বলেন, ‘ফুটপাত নাগরিকের অধিকার। অথচ ফুটপাতে নাগরিকদের হাঁটার কোনো সুযোগ নেই। ফুটপাতগুলো দখল করে রেখেছে পাশের দোকানদাররা। মাত্র ২ শতাংশ (গাড়ির মালিক ও দোকানদার) মানুষের জন্য নগরবাসী সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’
৩১ মোড়ে ৩৮ পদচারী সেতু: ২০২২ সালের ৪ জানুয়ারি ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতায় এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন সড়ক উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদন পায়। এতে দুই হাজার ৪৯০ কোটি ৯৬ লাখ ৬৯ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়। প্রকল্পটির আওতায় নগরের ৩১টি মোড়ে ৩৮টি পদচারী সেতু নির্মাণ করা হবে। এর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে নগরের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত পর্যন্ত সড়কে ১১টি পদচারী সেতু নির্মাণ করা হবে বলে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) উল্লেখ করা হয়েছিল। দুটি করে পদচারী সেতু নির্মাণ হবে টাইগারপাস, জিইসি, ষোলশহর ২ নম্বর গেট, অক্সিজেন, বহদ্দারহাট, অলংকার ও সিটি গেইট মোড়ে। এ ছাড়া লালখানবাজার, দেওয়ানহাট, চৌমুহনী, বাদামতলী, বারিক বিল্ডিং, নিমতলা, সল্টগোলা ক্রসিং, সিমেন্ট ক্রসিং, কেইপিজেড, কাঠগড়, মুরাদপুর, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, টেকনিক্যাল, একে খান, সাগরিকা, নয়াবাজার, রুবি গেট, কুলগাঁও স্কুলের সামনে, মনসুরাবাদ, এক্সেস রোডের মুখে, মহিলা কলেজের মোড়ে, সরাইপাড়া স্কুলের মোড়, আকবরশাহ ও সানোয়ারা স্কুলের মোড়ে পদচারী সেতু নির্মাণ করার কথা রয়েছে। এরমধ্যে ১৮টি পদচারী সেতুর টেন্ডার হয়েছে। গতবছরের ৯ সেপ্টেম্বর নগরের দুই নম্বর গেট ও চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি নগরীর জিইসি মোড়ে পিটিয়ে পদচারী সেতু নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়। অথচ কাজ এখনো শুরুই হয়নি।
আগ্রাবাদে চালু পে-পার্কিং : নগরের বাণিজ্যিক এলাকা আগ্রাবাদের সড়কে পে-পার্কিং (ভাড়ার ভিত্তিতে গাড়ি রাখা) চালু করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। গত ৩০ জুন নগরের আগ্রাবাদ হোটেলে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। যানজট কমাতে পরীক্ষামূলক এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে দাবি সিটি মেয়রে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বি-ট্র্যাক সলিউশন নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। প্রাথমিকভাবে আগ্রাবাদের সিলভার স্পুন রেস্তোরাঁর সামনে ও ডাচ-বাংলা ব্যাংকের সড়কে মোট ১৭৭ টি গাড়ির পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিন ও চার চাকার গাড়িগুলোকে ঘণ্টায় ৩০ টাকা করে দিতে হবে। আর সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত টানা রাখতে চাইলে দিতে হবে ২০০ টাকা। এছাড়া মোটরসাইকেল ঘণ্টায় দিতে হবে ১৫ টাকা। সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দিতে হবে ১০০ টাকা। পার্কিং ব্যবহারকারীরা ইয়েস পার্কিং অ্যাপসের মাধ্যমে অনলাইন এবং নগদ টাকা দুইভাবেই পার্কিংয়ের জায়গা ভাড়া নিতে পারবেন। এই পাইলট প্রকল্পের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে নগরে আরো পে-পার্কিং চালু করা হবে বলে জানিয়েছে মেয়র।
- বিষয় :
- উদ্যোগ