ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

কর্ণফুলীর ৩০০ সাম্পান মাঝির অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত

কর্ণফুলীর ৩০০ সাম্পান  মাঝির অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত

চট্টগ্রাম থেকে ফেনী গিয়ে পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার ও ত্রাণ বিতরণ কাজে অংশ নেন কর্ণফুলীর এই সাম্পান মাঝিরা সমকাল

 আকরাম হোসেন রানা, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০২৪ | ২৩:১৫

ফেনীর বন্যাদুর্গতদের সহায়তায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার ৩০০ সাম্পান-মাঝি। সারাজীবন কর্ণফুলী নদীর পরিচিত পথে সাম্পান বাওয়া মাঝিরা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়ে ছুটে গিয়েছেন অপরিচিত ও অনিশ্চিত গন্তব্যে। বন্যাকবলিত দুর্গম এলাকায় হাজারো পানিবন্দি পরিবারকে উদ্ধার করে চরম পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন তারা।
ফেনীর বিভিন্ন এলাকায় প্রবল বন্যা দেখা দিলে চট্টগ্রাম থেকে কয়েকশ’ স্বেচ্ছাসেবী বন্যাকবলিত এলাকায় উদ্ধার তৎপরতা এবং ত্রাণ পৌঁছে দিতে ছুটে যান। এ সময় নৌযানের অভাব ও পানির তীব্র স্রোতের কারণে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাদের। মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়া জনপদে একমাত্র চলার বাহন হয়ে পড়ে নৌযান। এ সময় বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে কর্ণফুলী নদীর মাঝিদের সহায়তা চান স্বেচ্ছাসেবীরা। তাদের ডাকে ইঞ্জিনচালিত সাম্পান নিয়ে ফেনী ছুটে যান কর্ণফুলীর তিন শতাধিক সাম্পান মাঝি।
গত ২২ আগস্ট থেকে শুরু করে কর্ণফুলী নদীর সদরঘাট, অভয়মিত্রঘাট, বাংলাবাজার ঘাট, ফেরিঘাটসহ বিভিন্ন খেয়া পারাপারের ঘাট থেকে কয়েকশ ইঞ্জিনচালিত সাম্পান ও স্পিডবোট ট্রাকে করে বন্যাকবলিত এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। নামমাত্র ভাড়ায় বন্যাকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়ান সাম্পান মাঝিরা। কর্ণফুলী নদী সাম্পান চালক কল্যাণ সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি এসএম পেয়ার আলী সমকালকে বলেন, ‘পানিবন্দি মানুষের জীবন বাঁচাতে আমাদের সাম্পান-মাঝিদের কাছে ডাক আসে। এ সময় মাঝিরা ছুটে গিয়ে স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পানিবন্দিদের উদ্ধার ও ত্রাণ বিতরণ কাজে লেগে পড়েন।’
ফেনীর পরশুরাম, ঘোপাল, মুহুরীগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধারকাজে অংশ নেন কর্ণফুলীর ব্রিজঘাট, বাংলাবাজার ঘাট এবং ইছানগর ঘাটের মাঝি নুরুল আবছার, নুর আকতার এবং আবদুন নবী। তাদের সবার বাড়ি কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা গ্রামে। উদ্ধার তৎপরতার অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে আবদুন নবী বলেন, ‘২২ আগস্ট সকালে অপরিচিত এক যুবক এসে ফেনীতে উদ্ধার তৎপরতায় যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। সঙ্গে সঙ্গে আমি রাজি হই। এরপর ঘাট থেকে সরাসরি আমার সাম্পানটি ট্রাকে তোলা হয়। ফেনীর ঘোপাল ও মুহুরীগঞ্জে টানা তিন দিন উদ্ধারকাজ এবং ত্রাণ বিতরণে অংশ নিই আমি।’


উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়া আরেক মাঝি নুরুল আবছার বলেন, ‘কর্ণফুলী নদীতে চিরচেনা পথে ঘড়ি ধরা সময়ে নৌকা চালাই। তবে ফেনীর বন্যাদুর্গত এলাকায় গিয়ে টানা তিনদিন সাম্পান চালিয়েছি। ঘুম ও খাবারের ঠিক না থাকলেও মনের আনন্দে এসব কাজ করেছি।’
 

আরও পড়ুন

×