দুই তরুণের ব্যতিক্রম উদ্যোগ
ঝামেলাহীন কেনাকাটার জন্য এলো ‘ইয়্যামেজিং’

নওশাদ আরেফিন, এস এম রিফাত
শৈবাল আচার্য্য
প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৫ | ০০:৪৯
অনলাইন শপিং অভিজ্ঞতায় নতুন এক ধারণা নিয়ে হাজির হয়েছে ইয়্যামেজিং। ইয়্যামেজিং মূলত একটি লয়ালটি ক্যাশব্যাক-ভিত্তিক সাশ্রয়ী স্মার্ট প্ল্যাটফর্ম, যা একইসঙ্গে ব্যবহারকারী ও ব্যবসায়ীদের জন্য খুলে দিচ্ছে সুবিধা ও সম্ভাবনার নুতন দুয়ার। চট্টগ্রামের দুই তরুণ এস এম রিফাত ও নওশাদ আরেফিন এই প্ল্যাটফর্ম উদ্ভাবন করেছেন। তারা দু’জনই চট্টগ্রামের নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইস্পাহানী স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। নিজেদের মেধা ও বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় ব্যতিক্রমী এই ধারণাটি গড়ে তুলেছেন তারা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীরা এতটাই সন্তুষ্ট যে, তারা বলছেন ইয়্যামেজিং কেবল একটি অ্যাপ নয়, এটি একটি ‘অ্যামেইজিং’ অভিজ্ঞতা। এটি দেশের শপিং সংস্কৃতিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে আশা তাদের।
ইয়্যামেজিং-এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা অ্যাপে লগইন করে দেখতে পাবেন প্রতিদিনের ডিল, চ্যাট করতে পারেন মার্চেন্টদের সঙ্গে, অর্ডার দিতে পারেন, এমনকি ইন-স্টোর কেনাকাটার পরও পেতে পারেন ক্যাশব্যাক। সবচেয়ে বড় কথা, এই ক্যাশব্যাক সরাসরি চলে যাবে ব্যবহারকারীদের বিকাশ অ্যাকাউন্টে। এটির আরেকটি বড় দিক হলো ইয়্যামেজিং নিজে কোনো পণ্য মজুত করে না, টাকাপয়সাও নিয়ন্ত্রণ করে না। ব্যবসায়ীরা সরাসরি গ্রাহকদের থেকে টাকা পান এবং নিজেরাই ইনভেন্টরি ও ডেলিভারি কন্ট্রোল করেন। ফলে তারা তাদের মূলধন আটকে না রেখে ব্যবসার গতি ধরে রাখতে পারেন। এই অভিনব উদ্যোগের পেছনে আছেন কানাডিয়ান-বাংলাদেশি উদ্যোক্তা এস এম রিফাত। গাজীপুরের বিশেষায়িত ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) থেকে স্নাতক শেষে কানাডায় পাড়ি জমান তিনি। সে দেশে স্নাতকোত্তর শেষে চাকরিও শুরু করেছিলেন এই তরুণ। এরই মধ্যে একবার দেশে বেড়াতে এসে রিফাত উপলব্ধি করেন বাংলাদেশে লয়ালটি মার্কেটের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। এর পর শৈশবের বন্ধু, আইবিএ ও বুয়েট থেকে পড়াশোনা করা নওশাদ আরেফিনকে সঙ্গে নিয়ে শুরু করেন কঠিন ও চ্যালেঞ্জের এই পথচলা।
দুই বন্ধুর যোগাযোগটা চট্টগ্রামের নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইস্পাহানী স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকেই। কলেজের বারান্দায় সহপাঠীরা যখন হইচই করতে ব্যস্ত থাকত, তখন দুই বন্ধুর ঝোঁক ছিল প্রযুক্তির প্রতি। রিফাতের বাবা ছিলেন সরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা। থাকতেন নগরের নাসিরাবাদে। চট্টগ্রামের আলো-বাতাসে প্রায় ১৬ বছর কেটেছে রিফাতদের। আর নওশাদের বাবা ছিলেন চট্টগ্রাম ওয়াসার ইঞ্জিনিয়ার। তাদের বাসা নগরের জামালখানে। প্রতিদিন বিকাল হলেই দুই বন্ধু মিলে পরিকল্পনা করতেন একদিন প্রযুক্তির বদৌলতে তরুণদের জন্য কিছু করবেন। হয়েছেও তাই। এ নিয়ে নানা চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হয়েছে তাদের। তবে কিছুতেই স্বপ্ন পূরণ করা থেকে পিছপা হতে রাজি নন তারা। এ কারণে দীর্ঘ প্রস্তুতির পর চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি শুরু হয় দুই বন্ধুর স্বপ্নের উড়ান। ওইদিন থেকে গুগল প্লে স্টোর ও অ্যাপল স্টোরে পাওয়া যাচ্ছে ইয়্যামেজিং-অ্যাপটি। শুরুতে ব্যাপক সাড়াও মিলেছে অ্যাপটিতে। মাত্র এক মাসের মধ্যেই অ্যাপটি এক হাজারেরও বেশি ডাউনলোড হয়েছে। বর্তমানে এ সংখ্যা পার করেছে কয়েক হাজারের ঘর।
ইয়্যামেজিং-এর এগিয়ে যাওয়ার গল্প শুনিয়ে এস এম রিফাত বলেন, ‘চট্টগ্রাম আমার ভালো লাগার; ভালোবাসার শহর। এই শহরে আমার অনেক স্মৃতি। এখানে পড়ালেখা করে বিদেশে বেশ ভালো চাকরি করলেও মনটা পড়ে থাকত দেশেই। একবার দেশে ঘুরতে এসে দেশেই কিছু করার তাগাদা অনুভব করি। সেই ভাবনার সঙ্গে যুক্ত করি বন্ধু নওশাদ আরেফিনকেও। ইয়্যামেজিং মূলত একটি লয়ালটি ক্যাশব্যাক-ভিত্তিক সাশ্রয়ী স্মার্ট প্ল্যাটফর্ম, যা একইসঙ্গে ব্যবহারকারী ও ব্যবসায়ীদের জন্য এনে দিচ্ছে সুবিধা ও সম্ভাবনার নুতন দিগন্ত। এটি চালুর শুরুতেই আমরা ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। আর এই সাফল্যই প্রমাণ করে, বাংলাদেশে লয়ালটি প্ল্যাটফর্মের বিশাল চাহিদা রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের যাত্রা কেবল শুরু হলো। এটির কার্যক্রম সম্প্রসারণ, ব্যবহারকারীদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি এবং প্রিমিয়াম মার্চেন্টদের যুক্ত করা আমাদের এখন প্রধান লক্ষ্য। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করে এটিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ায় স্বপ্নও আছে আমাদের।’
মেধাবী এই দুই প্রাক্তন শিক্ষার্থীর এমন অনন্য উদ্যোগে আনন্দিত ও গর্বিত ইস্পাহানী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাসহ সংশ্লিষ্টরা। দুই তরুণের এমন সাফল্যের গল্প অন্যদের জন্য দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য করেছেন তারা।
- বিষয় :
- উদ্যোগ