পর্তুগালে গণহত্যা দিবস পালিত

ছবি: সমকাল
শাহ মোহাম্মদ তানভীর, পর্তুগাল থেকে
প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২২ | ২২:০৪ | আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২২ | ২২:০৫
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ নিরস্ত্র বাঙালির ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরতা ও হামলার স্মরণে পর্তুগালে যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে ‘গণহত্যা দিবস’ দিবস পালন করেছে বাংলাদেশ দূতাবাস। এ উপলক্ষে দূতাবাসে সেমিনার, আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের আয়োজন করা হয়।
শুক্রবার সন্ধ্যায় দূতাবাসে আয়োজিত ‘৫১ বছরে বাংলাদেশ: স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং গণহত্যা’ শীর্ষক সেমিনারে মূল বক্তা হিসাবে উপস্থিত ছিলেন পর্তুগিজ সংসদ সদস্য ড. পাওলো নেভেস এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লিসবন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শিব কুমার সিং। এছাড়া শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, রাজনৈতিক দলের নেতা ও কর্মীবৃন্দ, প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ এবং দূতাবাসের কর্মকর্তারা অংশ নেন। সেমিনারের শুরুতে মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সকল শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
সেমিনারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারিক আহসান তার বক্তব্যের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
তিনি বলেন, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জয়লাভের পর বাঙালিদের সরকার গঠনের গণতান্ত্রিক অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার উদ্দেশেই ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কুখ্যাত ‘অপারেশন সার্চলাইট’-এর নামে গণহত্যা শুরু করে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণ এর আগ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ ৯ মাস জুড়েই হানাদার বাহিনীর এই হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠন অব্যাহত ছিল।
রাষ্ট্রদূত বলেন, সমগ্র বাংলাদেশ জুড়েই বধ্যভুমি এবং গণকববর ছড়িয়ে আছে এবং এখনও নতুন নতুন বধ্যভূমির সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বাংলাদেশে সংঘঠিত গণহত্যাটি সবচেয়ে ভয়াবহ হলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখনও এটিকে যথাযথভাবে স্বীকৃতি দেয়নি। আর আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এই গণহত্যার যথাযথ স্বীকৃতির অভাবই মূলত পরবর্তীতে সংঘঠিত গণহত্যাগুলোতে নিয়ামক হিসাবে কাজ করেছে বলেও রাষ্ট্রদূত মত প্রকাশ করেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সংগঠিত গণহত্যাকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি আহ্বান জানান।
ড. সিং বাংলাদেশের গণহত্যার বিভিন্ন দিক বিশেষ করে অমানবিকীকরণ, উচ্ছেদ এবং অস্বীকারের দিকগুলি বিশদভাবে বর্ণনা করেন এবং ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কৃতকর্মের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন। তিনি জাতিসংঘ সহ অন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহকে অবিলম্বে বাংলাদেশের গণহত্যাকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেবারও আহ্বান জানান।
সংসদ সদস্য ডা. পাওলো নেভেস তার বক্তব্যে ২৫ মার্চের ভয়াল কালরাতে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে সব শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের অসামান্য অর্জনের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই বিশ্ব মঞ্চে একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে সমর্থ হয়েছে। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ সহ অন্যান্য যে সকল দেশ গণহত্যার শিকার হয়েছে, তাদের সবার প্রতি গভীর সহমর্মিতা প্রকাশ কররেন।
সেমিনারে স্বাধীন বাংলাদেশের অর্জনসমূহ, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের যুদ্ধকালীন গণহত্যার ফুটেজ এবং বাংলাদেশের গণহত্যার স্বীকৃতির বিষয়ে কয়েকটি ভিডিও তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।