ভিজিট ভিসার ফাঁদে পা না দিতে বিদেশগামীদের অনুরোধ

ছবি: সমকাল
ইউএই প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২২ | ১১:৩৪ | আপডেট: ০৩ জুন ২০২২ | ১১:৩৪
কর্মসংস্থানের সন্ধানে গত দুই-তিন বছরে কয়েক লাখ বাংলাদেশি ভ্রমণ ভিসায় পাড়ি দিয়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরাত। এদের অধিকাংশই ভিজিট তথা ভ্রমণ ভিসা নিয়ে দেশটিতে প্রবেশ করেছে। দালালদের ফাঁদে পা দিয়ে অনেকে মাথায় তুলে নিয়েছেন ঋণ বোঝা। আমিরাত গমনের পূর্বে কর্মসংস্থানের আশ্বাস পেলেও দেশটিতে প্রবেশের পর দেখা মিলছে তাদের চরম বাস্তবতার। কর্মহীন দিনযাপন, আবাসন বিহীন রাত্রি যাপন এমনকি ন্যূনতম খাবারের টাকাও জোগাড় হচ্ছে না অনেকের। প্রতিদিন এমন অভিযোগ নিয়ে দুবাই বাংলাদেশ কনস্যুলেটে হাজির হচ্ছেন বাংলাদেশিরা। যাদের অধিকাংশই দালাল দ্বারা প্রতারিত। তাই বিদেশ গমনের পূর্বে চাকরির নিশ্চয়তা সহ আরও বেশি সচেতন হতে আহবান জানিয়েছেন দুবাইস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল বিএম জামাল হোসেন।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ প্রেসক্লাব ইউএই’র নবনির্বাচিত কমিটির সঙ্গে মতবিনিময় কালে তিনি এই আহবান জানান। এসময় প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য যাবতীয় কনস্যুলেট সেবা আরও সহজে পৌঁছে দিতে বাংলাদেশ প্রেসক্লাব ইউএই’র সহযোগিতা চান কনসাল জেনারেল।
ভিজিট ভিসায় আমিরাতে এনে প্রবাসীদের দুর্বিষহ জীবনে ছেড়ে দেয়া দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের উপর জোর দিয়ে কনসাল জেনারেল বিএম জামাল হোসেন বলেন, গতদিন ঝিনাইদহের দুইজন প্রবাসী এসে অভিযোগ করলেন তারা দালালের প্রতারণার শিকার। এরা ভিজিট ভিসায় দুবাই আসেছেন। কাজের ভিসা করে দেওয়ার নামে দালালরা চার লাখ টাকা করে নিয়েছে। কিন্তু এখন সেই দালাল ধরা ছোঁয়ার বাইরে। দালালদের দ্বারা প্রতারণার শিকার হয়ে প্রতিদিন এরকম দুই-তিনজন প্রবাসী অভিযোগ নিয়ে কনস্যুলেটে আসেন। তাই বিদেশগামীদের ভিজিট ভিসার ফাঁদে পা না দিতে অনুরোধ করছি।
তিনি আরও বলেন, এখন থেকে ঘরে বসেই পাসপোর্ট পাবেন দুবাই প্রবাসীরা। প্রবাসীদের কর্মস্থল থেকে ছুটি নেওয়া, যাতায়াত ভাড়ার বিড়ম্বনা কমাতে দুবাই ও উত্তর আমিরাতে বসবাসরত বাংলাদেশিদের ঘরে ঘরে পাসপোর্ট পৌঁছে দেওয়ার এই উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ কনস্যুলেট। ইতিমধ্যে একটি ডেলিভারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা সম্পন্ন হয়েছে। সবঠিক থাকলে চলতি মাস থেকেই এই সেবার আওতায় আসবেন প্রবাসীরা।
এর আগে মতবিনিময়কালে বাংলাদেশ প্রেসক্লাব ইউএই’র নেতৃবৃন্দ প্রবাসীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বেশকিছু দাবি তুলে ধরেন। এরমধ্যে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের অভ্যর্থনা প্রাঙ্গণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রণে আনা, সময়ের দূরত্ব কমিয়ে নবায়নকৃত পাসপোর্ট হোম ডেলিভারি প্রদান, বাংলাদেশ মিশনে পাসপোর্ট ছাপার মেশিন স্থাপন, অবৈধ লেনদেন তথা হুন্ডি বন্ধে উদ্যোগ গ্রহণ ও ভিজিট ভিসায় প্রবাসে এনে দুর্বিষহ জীবনে ছেড়ে দেয়া দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কনস্যুলেট বরাবর দাবি করেন সাংবাদিক নেতারা।
এসব দাবির প্রেক্ষিতে কনসাল জেনারেল বিএম জামাল হোসেন বলেন, ‘দুবাই প্রবাসীদের এসব সমস্যার শিগগিরই অবসান হবে। আমরা দুয়ারে কনস্যুলেট নামে যে সেবার উদ্যোগ নিয়েছি এটি ধীরে ধীরে বাস্তবায়িত হচ্ছে। মিশন কেন্দ্রিক পাসপোর্ট ছাপার জন্য মন্ত্রণালয়ে মেশিনের আবেদন করা হয়েছে। কনস্যুলেটে ছাপার মেশিন এসে গেলে প্রবাসীদের সময়ের দূরত্ব কমে যাবে। পাশাপাশি প্রবাসীদের অবৈধ পথে লেনদেন বন্ধের জন্যে রেমিট্যান্স মেলার আয়োজন, সাহিত্য-সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে প্রবাসীদের অংশগ্রহণের লক্ষ্যে বইমেলার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’
মতবিনিময়কালে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের প্রথম সচিব (পাসপোর্ট) মোহাম্মদ কাজী ফয়সাল, বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি শিবলী আল সাদিক, সিনিয়র সহ সভাপতি মামুনুর রশীদ, সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান জনি, যুগ্ম সম্পাদক মোদাচ্ছের শাহ, অর্থ সম্পাদক মুহাম্মদ ইছমাইল, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল্লাহ আল শাহীন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শাহজাহান, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ, সদস্য ওসমান চৌধুরী, শামসুল হক, সাজন আহমদ সাজু, আশরাফুল ইসলাম ভূঁইয়া, খোরশেদুল আলম জাসেদ ও আরিফ সিকদার বাপ্পী উপস্থিত ছিলেন।