নিউইয়র্কে এফবিআইয়ের ‘ধরিয়ে দিন, পুরস্কার নিন’ ঘোষণায় তৎপর বাংলাদেশিরা

আসামি রুহেল চৌধুরী
নিউইয়র্ক (যুক্তরাষ্ট্র) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২৪ | ১১:২৯
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একজন বাংলাদেশি অপহরণকারীকে ধরিয়ে দিতে এফবিআইয়ের ঘোষিত পুরুস্কার পেতে তৎপর হয়ে উঠেছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। দেশটির বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের অভ্যন্তরে চাঞ্চল্যকর এ অপহরণ মামলার সর্বশেষ আসামি রুহেল চৌধুরীকে (৩৪) ধরতে গত শুক্রবার (১ মার্চ) ওয়েবসাইটে ২০ হাজার মার্কিন ডলার যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২২ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণার পোষ্টার প্রকাশের পর নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসী বাংলাদশিদের মাঝে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। শুধু পুরুস্কারের আশায় নয়, একজন প্রকৃত আসামিকে ধরিয়ে বা সন্ধান দেওয়া বাংলাদেশিদের নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করছেন অনেকেই।
জানা গেছে, নিউইয়র্কের যে এলাকায় বাংলাদেশি অপহরণের ঘটনাটি ঘটেছিলো সেটি জ্যামাইকার হিলসাইড এভিনিউয়ে। এ এলাকার একজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আমরা এ ব্যাপারে খোঁজখবর রাখছি। কোনো সন্ধান পেলেই জায়গামতো খবর পৌঁছে দেবো। প্রবাসে এ ধরনের অপরাধের জন্য আমরা অনেকটাই লজ্জাবোধ করি। তাই অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস এলাকার প্রবাসী বাংলাদেশি আসিফ আলী জানান, এ ধরনের অপরাধীদের জন্য গোটা বাংলাদেশি কমিউনিটি কলুষিত হচ্ছে। এদেরকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য প্রত্যেক বাংলাদেশিদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
গত ১০ জানুয়ারি নিউইয়র্কে বাংলাদেশিকে অপহরণ মামলার ৬ আসামিকে গ্রেপ্তারের পর একই মামলার সর্বশেষ আসামি রুহেল চৌধুরীকে ধরিয়ে দিতে শুক্রবার ২০ হাজার ডলার পুরষ্কার ঘোষণা করে এফবিআই। তার বিরুদ্ধে নিউইয়র্কে দুজনকে অপহরণ, নির্যাতন, যৌন নিপীড়ন এবং মুক্তিপণের জন্য হুমকি দেওয়ার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে প্রবাসী বাংলাদেশিকে অপহরণের অভিযোগে অপহরণকারী চক্রের ছয় বাংলাদেশি সদস্যকে অভিযুক্ত করেছে নিউইয়র্কের ব্রুকলিন ফেডারেল আদালত। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দুই ব্যক্তিকে অপহরণ, মারধর ও যৌন নিপীড়ন অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে আইনজীবিরা জানিয়েছেন। তারা সকলেই নিউইয়র্ক সিটির কুইন্স বরোর জামাইকায় অধিবাসী।
গত বছরের ২৭ মার্চ জ্যামাইকার হিলসাইড এভিনিউয়ের কাছে ১৮১তম প্রিসেন্ট থেকে এ অপহরণকারীরা এক ব্যক্তিকে তুলে নেয়। এ মামলার গ্রেপ্তার হওয়া ৬ আসামিকে গত ১০ জানুয়ারি আদালত অভিযুক্ত করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ইউনাইটেড ষ্টেটস এটর্নীর অফিস থেকে মিডিয়া অফিসগুলোতে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়। অভিযুক্তরা হলেন- সৈয়দ রুবেল আহমেদ (৪৩), শাহেদ আলম (২৯), আবু চৌধুরী (২৮), আনজু খান (২৮), সুলতানা রাজিয়া (৩৮) ও ইফফাত লুবনা (২৪)। এদের মধ্যে আবু চৌধুরী ও লুবনা স্বামী-স্ত্রী।
আদালতের নথিতে দেখা যায়, এক ব্যক্তিকে অপহরণ ও অপহরণের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ রয়েছে এ ছয় জনের বিরুদ্ধেই। আর আবু চৌধুরী ও তার স্ত্রী লুবনার বিরুদ্ধে পৃথক আরেকটি অপহরণের অভিযোগ রয়েছে। আসামি রুহেল চৌধুরী এখনও পলাতক রয়েছেন। গত বছর কুইন্সের রাস্তা থেকে দু’জনকে অপহরণের ঘটনায় জড়িত সাতজন সন্দেহভাজনের মধ্যে ৩৪ বছর বয়সী রুহেল চৌধুরী হচ্ছে শেষ ব্যক্তি।
এফবিআইয়ের তথ্য অনুসারে, ৩৪ বছর বয়সী আবু চৌধুরী এবং তার স্ত্রী ২৪ বছর বয়সী ইফফাত লুবনাসহ আরও ছয়জন ষড়যন্ত্রকারীকে গত বছর এবং চলতি বছরের জানুয়ারিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ফেডারেল প্রসিকিউটরদের অভিযোগ, গত বছরের ২৭ মার্চ জ্যামাইকার হিলসাইড এভিনিউয়ের কাছে ১৮১তম প্রিসেন্ট থেকে অপহরণকারীরা প্রথম এক ব্যক্তিকে তুলে নেয়। রুহেল চৌধুরী ব্যবহৃত গাড়ির ব্যবসা করেন এবং তার সরবরাহ করা একটি হোন্ডা এসইউভিতে জোর করে ভুক্তভোগীকে তুলে নেন আবু চৌধুরী। পরে আবু চৌধুরী ভুক্তভোগীকে গাড়ির মধ্যে মারধর করেন এবং রুহেল চৌধুরী এসময় নিজেই ওই গাড়িটি চালাচ্ছিলেন বলেও জানিয়েছেন প্রসিকিউটররা।
প্রসিকিউটররা বলছেন, সন্দেহভাজন সৈয়দ রুবেল আহমেদ, শাহেদ আলম, আনজু খান এবং সুলতানা রাজিয়াকে সঙ্গে নিয়ে রুহেল চৌধুরী সারারাত ভিকটিমকে মারধর করার পাশাপাশি হুমকিও দেন।
এফবিআই জানায়, অভিযুক্ত লুবনা গত বছরের ১১ মে কুইন্সের উডসাইডে একটি রেস্তোরাঁয় দ্বিতীয় এক ভুক্তভোগীকে ডেকে আনে। ফেডারেল তদন্তকারীরা বলছেন, সেখানে লুবনার স্বামী লোকটিকে অতর্কিত আক্রমণ করে এবং তাকে একটি মিনিভ্যানে জোর করে নিয়ে যায়। এই গাড়িটিও রুহেল চৌধুরী সরবরাহ করেছিলেন এবং তিনি নিজেই সেটি চালাচ্ছিলেন। পরে রুহেল চৌধুরী ভিকটিমকে একটি হোটেলে নিয়ে গেলে তার সহযোগীরা ভিকটিমকে মারধর করে। এছাড়া হোটেলে আবু চৌধুরী ওই ব্যক্তিকে যৌন হয়রানি করেছিলেন বলেও দাবি করেছেন প্রসিকিউটররা।
অপহরণের এক পর্যায়ে আবু চৌধুরী ভিকটিমের বাবাকে ফোন করে ২০ হাজার মার্কিন ডলার মুক্তিপণ দাবি করেন। তদন্তকারীর অভিযোগ, ফোন কলের সময় আবু চৌধুরী টেলিফোনের মাধ্যমে তার চিৎকার যেন শোনা যায়, তা নিশ্চিত করতে ভিকটিমকে প্রচণ্ড মারধর করেন। গত বছরের জুলাই মাসে প্রথম কথিত অপহরণের অভিযোগে অভিযুক্ত হন আবু চৌধুরী ও ইফফাত লুবনা।
আর এফবিআইয়ের নোটিশে রুহেল চৌধুরীকে বাংলাদেশের বাসিন্দা বলে উল্লেখ করে কুইন্সের হলিস, কুইন্স ভিলেজ এবং জ্যামাইকা এলাকায় তার যাতায়াত রয়েছে বলে জানানো হয়। তার উচ্চতা ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি, ওজন ১৫০ পাউন্ড এবং চোখের রঙ বাদামী বলেও জানানো হয়েছে। কেউ তাকে দেখতে পেলে সঙ্গে সঙ্গে তাদের স্থানীয় এফবিআই অফিস বা নিকটস্থ আমেরিকান দূতাবাস বা কনস্যুলেটে যোগাযোগ করতেও বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এফবিআই ও নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের ডিটেকটিভ শাখার অফিসারদের সমন্বয়ে গঠিত ‘জয়েন্ট ভায়োলেন্ট টাস্ক ফোর্স’ দীর্ঘদিন তদন্ত শেষে আদালতে প্রতিবেদন দেয়।