সৈয়দ ইকবালের টরন্টো স্টুডিও পরিদর্শন করলেন হাইকমিশনার

টরন্টো স্টুডিও পরিদর্শনে কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার ড. খলিলুর রহমান
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০২১ | ১৩:২৫ | আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২১ | ১৩:৩২
শিল্পী সৈয়দ ইকবালের চিত্রকর্ম দেখতে তার টরন্টো স্টুডিও পরিদর্শন করেছেন কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার ড. খলিলুর রহমান। একটি চিত্রপ্রদর্শনীর জন্য তাৎপর্যপূর্ণ দুইটি ছবি আঁকা হয়েছে শুনে অটোয়া থেকে টরন্টোর এই স্টুডিওতে আসেন হাইকমিশনার।
এসময় তার সঙ্গে ছিলেন, টরন্টোর বাংলা সাপ্তাহিক ‘বাংলা মেইল’ সম্পাদক ও বাংলা টিভি ‘এনআরবি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শহিদুল ইসলাম মিন্টু, টরন্টোর বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী সারওয়ার রহমান ও রিয়েলটর শেখ ইউসুফ।
ছবি দুটি নিজের চোখে দেখার পর মুগ্ধতার সঙ্গে হাইকমিশনার বলেন, আমরা যারা সরকারি চাকরি করি কাজের চাপে ছবি বা ধ্রুপদ সংগীত নিয়ে বোঝাপড়া হয়ে ওঠে না। এক্ষেত্রে আমি ব্যতিক্রম কিছুটা। দেড় দশক আগে দিল্লিতে বাংলাদেশ দূতাবাসে তখনকার আমার বস হাইকমিশনার ফারুক সোবহান শুধু ছবি বোঝার জন্য এক মাসের ক্লাসে পাঠিয়েছিলেন আমাকে। দিল্লি মডার্ন আর্ট মিউজিয়ামে। তখন বিরক্ত হলেও এখন বুঝি বাংলাদেশের এই নামি আর্ট কালেক্টর আমার কত বড় উপকার করেছিলেন। এখন আমি যে দেশেই যাই, সে দেশের আর্ট নিয়ে আগ্রহ দেখালে, কিছু কথা বললে, তারা অন্য এক সম্মানের চোখে দেখে।
আগামী ১৮ নভেম্বর গ্রেটার টরন্টোর মিসিসাগা আর্ট গ্যালারিতে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক চিত্রপ্রদর্শনী। প্রদর্শনীটি কিউরেট করবেন টরন্টোর সাউথ এশিয়ান আর্ট স্পেশালিস্ট খ্যাত আলি আদিল খান। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি নিয়ে এ রকম আয়োজন দেশের বাইরে উন্নত বিশ্বে এই প্রথম। যদি ঠিকঠাকভাবে সব হয়, তাহলে ঐতিহাসিক ব্যাপার হবে এটি।

বাংলাদেশের প্রধান সব শিল্পীর ছবি ও বাংলাদেশি কানাডিয়ান প্রধান শিল্পীদের চিত্রকর্ম থাকবে এ প্রদর্শনীতে।
মিসিসাগা আর্ট গ্যালারির আগামী প্রদর্শনীতে শিল্পী সৈয়দ ইকবালের ক্লাইমেট চেঞ্জ থিম নিয়ে আঁকা বিশাল ছবি ‘টিয়ার্স অব নেচার-১২২’ থাকবে ( ১৮x৬ ফুট) থাকবে। ক্লাইমেট চেঞ্জ গ্লোবাল ওয়ার্মি বাংলাদেশকে সর্বনাশ করছে দুইভাবে, নিচের দিকে বঙ্গোপসাগর গিলে নিচ্ছে জমি, আর মধ্যভাগে নদী শুকিয়ে হচ্ছে মরুভূমি- এরই প্রতিফলন ‘প্রকৃতির কান্না-১২২’ ছবিটিতে। মূলত এই ছবি দেখতে আসেন হাইকমিশনার।
শিল্পীর আরও একটি ছবি দেখে মুগ্ধ হন হাইকমিশনার। ছবিটি ১২x৬ ফুট ক্যানভাসে একরিলিক রং দিয়ে আঁকা। একেবারে নিচের দিকে পঁচিশে মার্চে নিরীহ মানুষ হত্যা। রক্ত মাখা লাশের সারি দিয়ে এলোমেলোভাবে পড়ে থাকা। এরপরের সারিতে একপাল দাঁতাল শুয়োর। দাঁতে রক্ত মাখা মাথায় পাকিস্তানি আর্মির হেলমেট। এর পরের সারিতে ১৬ ডিসেম্বরের বিজয়। সারি-সারি অস্ত্র হাতে মুক্তিযোদ্ধা আর ভারতীয় সৈন্য বাহিনীর কাছে অসহায়ভাবে পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয়। ছবির ঠিক মধ্যখানে যিশুর মতো ক্রশে আটকে আছেন বঙ্গবন্ধু। তার দুই হাত দুই দিকে মেলে দেওয়া, তালুতে পেরেক দিয়ে আটকানো, রক্তাক্ত। মুখে বাঘের মতো গর্জন। নয়টি মাস তার প্রিয় বাংলার জনতা থেকে তাকে দূরে রাখার ক্ষোভ। মন পড়ে আছে তারই এক কথায় মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া প্রাণপ্রিয় বাঙালির প্রতি। ঠিক এর নিচে তার ডানহাত খ্যাত বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ। হাত উঁচিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের নির্দেশ দিচ্ছেন, ‘কিলড দ্যাম অল ওয়াইল্ড পিগ!’
তাজউদ্দিনের ডানে-বাঁমে বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক ওসমানী ও মানিকশ। ক্রশে দাঁড়ানো সাদা পাঞ্জাবির ওপর কালো মুজিব কোট পরা বঙ্গবন্ধুর পেছনে আকাশ রক্তবর্ণ লাল। এক সাগর রক্ত শুধু নয়, যেন এক আকাশ রক্ত। বাঁয়ে আকাশে উড়ন্ত মনোস্টার বা ড্রাগন রূপি শকুন সঙ্গী নিয়ে জুলফিকার আলী ভুট্টো। ডানে তখনকার মুক্তিযুদ্ধকালে শান্তির সাক্ষাৎ দেবী যাকে বলা হত, সেই ইন্দিরা গান্ধী।
এ নিয়ে শিল্পী সৈয়দ ইকবাল বলেন, তখনই আমার মাথায় এসেছিল বিষয়টি। শৈশবে দেখা পথে পথে গলিতে ঘাড়ে বাক্স নিয়ে ঘোরা সিনেমাওয়ালাদের কথা। একআনা দিলে বাক্সে গোল গোল খোপের ঢাকনা খুলে মুখ-চোখ লাগিয়ে ভেতরে একের পর এক ঘুরন্ত ছবি দেখা যেত। সিনেমাওয়ালা হাতল ঘুরিয়ে ছবি রোল করতেন, আর পুঁথি গানের মতো সুর করে ছবির বর্ণনা শুনাতেন। সেই সহজ সরল ধারায় মুক্তিযুদ্ধের প্রধান ঘটনা ক্যানভাসে আনতে চেষ্টা তারপরেই শুরু করি। ছবিটি খুবই সারল্যের সঙ্গে আগুন রঙে আঁকা। সব বয়সের সব স্তরের মানুষ যাতে মর্মার্থ নিমিষেই বুঝতে পারে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বিশ্ব ব্যক্তিত্ব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার সহযোগীদের।
হাইকমিশনার ড. খলিলুর রহমান সৈয়দ ইকবালের বড় দুইটি ছবি ‘টিয়ার্স অব নেচার-১২২’ ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে ‘ফাদার গিভ আস এ নিউ নেশন’ খুবই পছন্দ করেন। এ নিয়ে কিছু পরামর্শও দেন তিনি। এছাড়া তার সঙ্গে থাকা অন্যরাও ছবি দুটির প্রশংসা করেন। আগামী চিত্রপ্রদর্শনীতে যেন এই দুই ছবি দেখা হয়, এর জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে আহ্বান জানান তারা।
- বিষয় :
- কানাডা
- চিত্রকর্ম
- টরন্টো
- শিল্পী সৈয়দ ইকবাল