প্রেরণা
যে কোনো পরিস্থিতিতে এগিয়ে নেবে আত্মবিশ্বাস

পিনা বুশ ছবি : অনলাইন
মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ
প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২৪ | ০৭:১৭ | আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৪ | ১১:৪৬
১৯৫৮ সালে ফোকওয়াং পারফরম্যান্স অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনয়ন পেলাম। এ জন্য নিজের একটি ছোট প্রোগ্রাম করার দরকার ছিল আমার। প্রেজেন্টেশনের দিনটি চলে এলো। মঞ্চে গিয়ে দাঁড়ালাম। আমি পজিশন নিতেই আলো জ্বলে উঠল। কিন্তু কিছুই ঠিক নেই। পিয়ানিস্ট তখনও আসেননি। পুরো হলে চরম উত্তেজনা; অথচ কোথাও পিয়ানিস্টের দেখা নেই। নিজের পোজ নিয়ে, মঞ্চে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম আমি। নিজেকে যতটা সম্ভব শান্ত রাখলাম। পিয়ানিস্টকে যতক্ষণে খুঁজে পাওয়া গেল, তাতে সময় বয়ে গেছে অনেকক্ষণ। এতক্ষণ ধরে পোজ দিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকার ফলে নিজের মধ্যে ধৈর্যের এক অন্য রকম গুণ আবিষ্কার করলাম। মিউজিক যখন শুরু হলো, নাচতে শুরু করে দিলাম। আর বুঝে গেলাম, যে কোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে শান্ত রাখার আত্মবিশ্বাস আমাকে এগিয়ে নেবে। আর এ গুণটির প্রতি সারাজীবন ভরসা রেখেছি আমি।
যে পরিচয় জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়!
১৪ বছর বয়সে ফোকওয়াং স্কুলে নাচের ওপর পড়াশোনা করতে এসে গেলাম আমি। সেখানে স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা এবং অন্যতম শ্রেষ্ঠ কোরিওগ্রাফার কুর্ট জোসের সঙ্গে পরিচয় হওয়াটা আমার জন্য ছিল বড় পাওয়া। পড়াশোনার সময় ভয়ানক রকম পিঠের ব্যথায় ভুগলাম আমি। নিয়মিতই ছুটে যেতে হতো ডাক্তারের কাছে। ফলে তক্ষুনি নাচ থামিয়ে দিতে বলা হলো আমাকে। নয়তো ছয় মাসের জন্য বিছানায় পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। কী করব আমি? ঠিক করলাম, নাচ থামাব না। এটি আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ছিল।
ভয়াবহ দিন
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অভিজ্ঞতা কখনোই ভোলার নয়। ভয়াবহ বিধ্বংসের ভেতর পড়েছিল জার্মানির সুলিঙ্গান শহর। বিমান হামলার সাইরেন কানে এলে আমাদের বাগানের ছোট্ট শেল্টারটিতে আশ্রয় নিতাম আমরা। একবার আমাদের বাড়িতেও বোমা পড়ল। যদিও আমরা সবাই অক্ষতই ছিলাম। এরপর মা-বাবা আমাকে ভুপার্টাল শহরে পাঠিয়ে দিলেন, আমার আন্টির কাছে; কেননা, সেখানে বড় শেল্টারের ব্যবস্থা ছিল। তারা ভাবলেন, সেখানেই আমি নিরাপদে থাকব। সাদা সাদা বিন্দু আঁকা, ছোট্ট কালো একটা ব্যাগ ছিল আমার। সেটি সব সময়ই জরুরি জিনিসপত্রে ভরে রাখা হতো; যেন সাইরেন বেজে উঠলে সঙ্গে নিয়ে শেল্টারে ছুটতে পারি।
আহা শৈশব!
নিজের শৈশব, তারুণ্য, শিক্ষাজীবন আর নৃত্যশিল্পী ও কোরিওগ্রাফার হিসেবে কাটানো নিজের দিনগুলোর দিকে যখন ফিরে তাকাই, তখন সব ছবি হয়ে ভেসে ওঠে মনে। এসব ছবি গন্ধে আর সুবাসে ভরা। আর অবশ্যই সেসব মানুষেও ভরা; যারা আমার জীবনকে ঘিরে ছিলেন ও আছেন। অতীত থেকে আসা স্মৃতির এ ছবিগুলো নতুন একটা জায়গা খুঁজে নিতে চায়। ফলে শৈশবের অভিজ্ঞতার অনেক অংশই আমি বড় হয়ে মেলে দিয়েছি মঞ্চে। তাই শৈশবের কথা বলা যাক কিছুক্ষণ।
প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা
প্রথম দিনেই যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল, সেটি কোনো দিনই ভুলব না। পেটের ওপর ভর দিয়ে, হাত-পা ছড়িয়ে দিয়ে, তারপর মাথার ওপর দিয়ে পা ঘুরিয়ে আনছিল শিশুরা। সব শিশুই যে এ কাজটা করতে পারছিল ঠিকমতো তা নয়, তবে আমার কোনো অসুবিধা হলো না। আমার শিক্ষক তখন বললেন, ‘তুমি একজন সত্যিকার কনশর্টনিস্ট।’ এ কথাটার তাৎপর্য তখন বুঝিনি ঠিকই, তবু মনে হলো, যে ভঙ্গিমায় তিনি বললেন, তাতে এটির বিশেষ কোনো অর্থ রয়েছে। এর পর থেকে সেখানে নিয়মিতই হাজির থাকার তাগাদা অনুভব করলাম।
নাচের প্রতি টান...
মঞ্চে আমি প্রথম উঠি পাঁচ কি ছয় বছর বয়সে। সুলতানের হারেম ও তাঁর প্রিয় স্ত্রীদের নিয়ে ছিল সেই সন্ধ্যার ব্যালেটি। দামি দামি খাবার আর পরিষদ নিয়ে আয়েশ করছেন সুলতান। নিগ্রোর মতো পোশাক আর সাজসজ্জা করলাম আমি; আর পুরো পারফরম্যান্সে তাঁকে বাতাস করে আনন্দ দিলাম। আমার উপস্থিতি হয়তো কারও নজরে পড়ত না বিশেষভাবে, তবু আমার ভালো লাগত খুব। এরপর নানা অপেরা, ড্যান্স ইভেনিং, বিশেষ করে ড্যান্স ইভেনিংয়ের গ্রুপ নাচে অংশ নেওয়ার সুযোগ বাড়ল আমার। একটা ব্যাপার আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল, থিয়েটারে সম্পৃক্ত থাকা ছাড়া আর কোনো কিছুই ভালো লাগত না। আর কিছু নয়, বরং নাচের প্রতিই ছিল এ টান। n
- বিষয় :
- আত্মবিশ্বাস