অ্যাথলেটিকসের নতুন প্রাণ ইমরানুর

ইমরানুর রহমান ছবি : অনলাইন
সমকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২৪ | ০৭:২০ | আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৪ | ১১:৩৯
১ মার্চ স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে শুরু হওয়া ওয়ার্ল্ড ইনডোর অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেন বাংলাদেশের দ্রুততম মানব ইমরানুর রহমান। ৬০ মিটার ইভেন্টে ৬ দশমিক ৬৪ সেকেন্ড সময় নিয়ে নিজের হিটে তৃতীয় হয়েছেন তিনি। যেখানে তাঁর সঙ্গী ছিলেন বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে ৯ নম্বরে থাকা জ্যামাইকার আকিম ব্লেক, ৩৮ নম্বরে থাকা স্লোভাকিয়ার জ্যান ভোলকো, ৯৪ নম্বরে থাকা ফিনল্যান্ডের স্যামুলি স্যামুয়েলসন। আর বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে ইমরানুরের অবস্থান ১৬৩তম। হিটে মোট অংশ নেন আটজন। তবে সেমিফাইনালে আলো কাড়তে পারেননি ইমরানুল। ফাইনালের মুখ না দেখে বিদায় নিলেন সেমিফাইনাল থেকেই।
২০২২ সালে বেলগ্রেডে বিশ্ব ইনডোরের সর্বশেষ আসরেও সেমিফাইনালে খেলেছিলেন বাংলাদেশের দ্রুততম এই মানব। সেবারও হিটে সময় নেন ৬.৬৪ সেকেন্ড। তবে সেবার সেমিফাইনালে দৌড়ই শেষ করতে পারেননি। এবার দৌড় শেষ করলেও টাইমিং ভালো হয়নি। ফলে বিশ্ব ইনডোর অ্যাথলেটিকসে ফাইনাল অধরাই রইল তাঁর। তবে তিনি নিজেকে প্রস্তুত করছেন নতুন করে। ফাইনালের ট্র্যাকে ওড়াতে চান লাল-সবুজের পতাকা।
জন্ম, বেড়ে ওঠা, লাল-সবুজে ফেরা ও অ্যাথলেটিকসের
সেরা সাফল্য
ইংল্যান্ডে জন্ম নেওয়া ইমরানুল সেই এটুকুন বয়সে প্রেমে পড়েন ফুটবলের। দেশটির সাবেক ফুটবলার ওয়েন রুনি-ডেভিড বেকহামের মতো তারকা হওয়ার স্বপ্নও বুনতেন মনে। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছোট হয়ে আসে তাঁর ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন। আস্তে আস্তে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডের প্রতি ভালোলাগা জন্মাতে থাকে।
ইমরানুল বলেন, ‘১৯ বছর বয়সে অ্যাথলেটিকস শুরু করি। যদিও এই ভূতটা মাথায় ঢোকে ছোটবেলা থেকেই। তখন অবশ্য ফুটবল খেলতাম। লন্ডনের একটি ক্লাবে ট্রেনিংও করতাম। মূলত সেই ক্লাব থেকেই অ্যাথলেটিকসের প্রেমে পড়া। এরপর স্প্রিন্টকে ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নেওয়া।’
এখানেই শেষ হতে পারত। কিন্তু হলো না। ইমরানুল স্প্রিন্টকে যেমন ভালোবাসেন, তার চেয়েও একটু বেশি ভালোবাসেন মা-বাবার জন্মস্থান বাংলাদেশকে। ইংল্যান্ডের উন্নত সুযোগ-সুবিধা ছেড়ে বাংলাদেশে কেন ফিরলেন– এমন এক প্রশ্নের জবাবে ইমরানুল সমকালকে বলেন, ‘বাংলাদেশে আমার মা-বাবা জন্মগ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশের প্রতি আমার টান থাকার বড় কারণ হলো মা-বাবা। আর ইংল্যান্ডে যে বাংলাদেশি কমিউনিটি আছে, সেখানেও তাদের অনেক সমর্থন পাই। এ দেশের মানুষের ভালোবাসার কথা তো না বললেই চলে। বলতে পারেন, শিকড়ের টানেই আমার বাংলাদেশকে বেছে নেওয়া।’
এর ফলেই শিকড়ের টানে বাংলাদেশের ঘরোয়া অ্যাথলেটিকসে ফিরেই গড়েন রেকর্ড। কেবল তাই নয়, ২৯ বছর বয়সী এই স্প্রিন্টার ২০২২ সালে কাজাখস্তানের আস্তানায় অনুষ্ঠিত এশিয়ান ইনডোর অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপের ৬০ মিটার স্প্রিন্টে স্বর্ণ জিতে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের অ্যাথলেটিকসে সেরা সাফল্য ছিনিয়ে আনেন।
‘আমার সোনার বাংলা’র অনুভূতি
কাজাখস্তানের আস্তানায় অনুষ্ঠিত এশিয়ান ইনডোর অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপের ৬০ মিটার স্প্রিন্টে স্বর্ণ জিতে গলায় সোনার পদক পরার সময় সাউন্ডবক্সে ‘আমার সোনার বাংলা’ জাতীয় সংগীত বেজে ওঠার অনুভূতির কথা স্মরণ করে ইমরানুল বলেন, ‘সেই মুহূর্তটি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। অবিশ্বাস্য এবং অন্য রকম এক অনুভূতি। আমি স্বর্ণ জেতাতেই অ্যাথলেটিকসে বিদেশের মাটিতে লাল-সবুজ পতাকা উড়েছে। যখন জাতীয় সংগীত বেজে উঠেছে, তখন খুব আবেগপ্রবণ হয়ে যাই। কিছুক্ষণ চুপ হয়ে গিয়েছিলাম। আমি ১০ বছর ধরে অ্যাথলেটিকস খেলছি। এই স্বর্ণপদক বাংলাদেশের মানুষের জন্য। আশা করি, ভবিষ্যতে আরও সফল হতে পারব।’
যত সাফল্য
আলোচিত এই স্প্রিন্টার একাধিক আন্তর্জাতিক আসরে নিজের সামর্থ্যের জানান দিয়েছেন। গত জুলাইয়ে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত এশিয়ান অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে অংশ নিয়ে সেমিফাইনালে ওঠেন। তবে প্রথম রাউন্ডে ১০.২৫ সেকেন্ডে দৌড় শেষ করে চমক দেখান। আগস্টে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে বিশ্ব অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপেও চমক অব্যাহত রাখেন তিনি। প্রথম রাউন্ডে হিটে প্রথম হওয়ার কৃতিত্ব দেখান। এগুলো আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিকসে বাংলাদেশের অবস্থান বিবেচনায় বড় সাফল্যই। সেপ্টেম্বরে লন্ডনের এক ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় ১০.১১ সেকেন্ডে দৌড়ান ইমরানুর, যা এখন তাঁর ব্যক্তিগত সেরা টাইমিং।
যেভাবে পারফর্ম করছিলেন ইমরানুর, তাতে এশিয়ান গেমসেও তাকে নিয়ে বড় আশা তৈরি হয়েছিল। তবে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে হাংজুতে অনুষ্ঠিত আসরে সেমিফাইনালে উঠলেও ইমরানুর পারেননি ফাইনালে উঠতে। ২০২২ সালের শুরুতে প্রথমবার জাতীয় অ্যাথলেটিকসে অংশ নিয়ে ১০০ মিটারে শুধু স্বর্ণই জেতেননি ইমরানুর, ভেঙে দেন ২২ বছরের পুরোনো রেকর্ড। এরপর সামার ও জাতীয় অ্যাথলেটিকস মিলিয়ে আরও দুটি আসর বসে ওই বছর। সেখানেও শ্রেষ্ঠত্ব অক্ষুণ্ন রাখেন তিনি।
বর্তমান ব্যস্ততা
বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ে স্পোর্টস সায়েন্স অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশনে ব্যাচেলার্স করেছেন ইমরানুল। দুটো চাকরিও করছেন। তারপরও সময় বের করে নেন অ্যাথলেটিকসের জন্য। u
- বিষয় :
- অ্যাথলেটিকস