প্রেরণা
গায়ের ঘাম না ঝরিয়ে সফলতা পাওয়া যায় না

ইফতেখার আহমেদ টিপু
ইফতেখার আহমেদ টিপু
প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৪ | ২৩:৫০ | আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২৪ | ১১:২৭
ইফতেখার আহমেদ টিপু। দেশের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী এবং ইফাদ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। সরকারি চাকুরে বাবার বদলির সুবাদে শৈশব কেটেছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। মিশেছেন নানামুখী মানুষের সঙ্গে। ঢাকা কলেজ থেকে ডিগ্রি শেষ করে ভর্তি হবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তখনই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। যুদ্ধে যোগ দিলেন তিনিও। ৯ মাস যুদ্ধ শেষে স্বাধীন দেশে শুরু করেন ইফাদের কার্যক্রম। এরপর একে একে বাড়তে থাকে প্রতিষ্ঠানের পরিধি। বর্তমানে প্রায় সাত হাজার কর্মীর বিশাল প্রতিষ্ঠান ইফাদ গ্রুপ। খ্যাতিমান এ ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে অনুপ্রেরণামূলক কথা তুলে এনেছেন আশিক মুস্তাফা
নোয়াখালীতে আমার শিকড়। আমার দাদা-বাবা সবার বেড়ে ওঠা নোয়াখালী। তবে সেখানে বেশি দিন থাকা হয়নি। বাবা জালাল আহমেদ সরকারি চকরিজীবী হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে থেকেছি। চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছি রংপুরে। ১৯৫৩ সালে বাবা চলে আসেন ঢাকায়। সঙ্গে আমরাও। পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হই ঢাকার তেজগাঁও পলিটেকনিক হাইস্কুলে। এখান থেকেই এসএসসি শেষ করি। ভর্তি হই ঢাকা কলেজে। এইচএসসির পর ডিগ্রিও করি সেখান থেকে। এরপর এমএ ভর্তি হবো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ; আর তখনই শুরু হলো যুদ্ধ। সহপাঠীদের সঙ্গে চলে গেলাম যুদ্ধে। ৯ মাস যুদ্ধ শেষে ফিরে এসে ব্যবসার সিদ্ধান্ত নিই।
মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীন দেশ ও ইফাদের যাত্রা
ছোটবেলা থেকেই আমি চাকরিবাকরি না করে ব্যবসার কথা ভাবতাম। তো নতুন দেশ। সেই সঙ্গে আমার ঢাল নেই তলোয়ার নেই, নিধিরাম সর্দার। বাবার কাছেও তেমন টাকা নেই দেওয়ার মতো। সামান্য রোজগার। তার ওপর আমরা সাত ভাই, দুই বোন। তবু আমি সাহস করে ব্যবসায় নেমে পড়লাম। বলতে পারেন টাকা ছাড়াই; শুরু করলাম টেন্ডার ব্যবসা। দেখলাম টাকা ছাড়া কেবল এ ব্যবসাই করা যায়। মোটামুটি সফলও হলাম। সেই সঙ্গে টাকা জমাতে থাকলাম। কিছু টাকা জমানোর পর থ্রি-হুইলার, মানে বেবিট্যাক্সি অ্যাসেমব্লিং কারখানা বানালাম। প্রচুর বিক্রি করেছি। তখন অবশ্য পাশাপাশি একটা গ্রুপের সঙ্গেও যুক্ত ছিলাম। একসময় চিন্তা করলাম, আরেকজনের সঙ্গে কেন; নিজেই প্রতিষ্ঠান বানাব। এরপর ১৯৮৫ সালে আমি আমার নাম–ইফতেখারের আই-এফ এবং আহমেদের এ-ডি এই চার বর্ণ নিয়ে ইফাদ নাম দিয়ে প্রতিষ্ঠানের নাম দিলাম ইফাদ এন্টারপ্রাইজেস লিমিটেড। যাত্রা শুরু হলো ইফাদের।
২৮ কর্মী নিয়ে শুরু করা ইফাদের কর্মী সাত হাজার ছাড়িয়েছে
শুরুতে ইফাদের কর্মী ছিল ২৮ জন। তখন বিআরটিসির বিল্ডিংয়ে ভাড়া থাকতাম। কিছুদিন আগে তেজগাঁওয়ে ইফাদের নিজস্ব ভবনে এলাম। এখন আমাদের কর্মী সংখ্যা প্রায় সাত হাজার। আমার ছেলেরাও ইফাদের সঙ্গে যুক্ত। বড় ছেলে তানভীর আহমেদ ও মেজো ছেলে তাসকীন আহমেদ যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সি থেকে পড়াশোনা শেষ করেছে। ছোট ছেলে তাসফিন আহমেদও যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি থেকে পড়াশোনা শেষ করে ইফাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।
যে জন্য আনলাম রয়্যাল এনফিল্ড
দেশের প্রায় সব গাড়ি প্রতিষ্ঠানেরই মোটরসাইকেল আছে। কেবল আমাদের ছিল না! আমার ছেলেরা বলল, আমরাও মোটরসাইকেল আনতে চাই। তখন আমি বললাম, ঠিক আছে, তোমরা ব্যবস্থা নাও। তবে সবার চেয়ে আলাদা এবং সেরাটাই করতে হবে। কোনোভাবেই যেন মানুষ না ঠকে, সেটিও মাথায় রাখতে হবে। শুরুতে আমরা বিশ্বের এক নম্বর বাইক হার্লি ডেভিডসন আনার চেষ্টা করলাম। সেখানে সফল না হয়ে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করা রয়্যাল এনফিল্ড নিয়ে এলাম। আনার আগে যখন কথাবার্তা চলছিল তখন অনেকে বলাবলি করতে থাকলেন, এত বেশি সিসির গাড়ি, নিশ্চয়ই এর অনুমোদন পেলে দেশে বাইক অ্যাক্সিডেন্টের সংখ্যা বেড়ে যাবে। আসলে তারা এটা বুঝে না যে, বেশি সিসি মানে অতিরিক্ত স্পিড নয়। ধরুন, আমার গাড়ি ৪০০০ সিসি। তার মানে কি আমার গাড়ি ৪০০০ মাইলে চলবে? এটা চলবে ৮০ কিংবা ৯০ কিলোমিটার গতিতে। বেশি সিসির সুবিধা হচ্ছে, এতে গাড়ির স্থায়িত্ব বেশি হয়। গাড়ি মজবুত হয়। অ্যাক্সিডেন্টের ঝুঁকিও থাকে কম। মানে এই গাড়ি বাবা কিনলে সন্তানও চালাতে পারবে। তবে আমরা আনার সময় ভাবিনি যে, এই গাড়ির এমন ক্রেজ হবে বাংলাদেশে। আমরা ভেবেছি শুরুতে ৮০০ থেকে ১০০০ গাড়ি যাবে। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, প্রথম ছয় দিনে ৬ হাজার অর্ডার পেরিয়ে গেছে।
তরুণদের উদ্দেশে…
আপনি যে কাজই করেন না কেন, তা সততার জায়গা থেকে করতে হবে। সেই সঙ্গে করতে হবে কঠোর পরিশ্রম। গায়ের ঘাম না ঝরিয়ে যদি সব পেয়ে যান, তাতে কোনো আনন্দ থাকবে না। কোনো কিছু আস্তে আস্তে গড়লে যদি কখনও ভাঙে তবে আস্তে আস্তেই ভাঙবে। হুট করে ভেঙে পড়বে না। আস্তে আস্তে গড়লে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হয়ে প্রতিনিয়ত নতুন কিছু শিখবেন। অন্য কেউ কোনো কিছুতে ভালো করছে বা লাভবান হচ্ছে, তা দেখে সে পথে নেমে যাবেন না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। আপনি বরং আপনার জায়গা থেকে সেরা চেষ্টাটা করুন।
- বিষয় :
- প্রেরণার কথা