প্রেরণা
‘ঝুঁকিহীন জীবনে সাফল্য ধরা দেয় না’

স্টিভ জবস ছবি : অনলাইন
ইমাম হোসেন মানিক
প্রকাশ: ১১ মে ২০২৫ | ০০:৫৩
স্টিভ জবস। আমেরিকান প্রযুক্তিবিদ। মাইক্রোকম্পিউটার বিপ্লবের অন্যতম অগ্রদূত। সর্বকালের অন্যতম সেরা এই প্রযুক্তিবিদের বিভিন্ন সাক্ষাৎকার থেকে অনুপ্রেরণামূলক কথা তুলে এনেছেন ইমাম হোসেন মানিক
রিড কলেজ তখন ছিল সম্ভবত দেশের সেরা ক্যালিগ্রাফি ইনস্টিটিউট। ক্যাম্পাসজুড়ে ভরে থাকা পোস্টারগুলো ছিল হ্যান্ড-ক্যালিগ্রাফির চমৎকার সব নমুনা। যেহেতু আমি পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছি, ফলে আমাকে নরমাল ক্লাসগুলো আর করতে হচ্ছে না; তাই বিষয়টি শেখার জন্য একটি ক্যালিগ্রাফি ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। সেরিফ ও স্যান-সেরিফ টাইপফেস শিখলাম আমি; শিখলাম অসাধারণ টাইপোগ্রাফিকে, যা সৃষ্টি করে, বিভিন্ন বর্ণের কম্বিনেশনের মধ্যে সেই শূন্যস্থানটিকে শনাক্ত করা।
ম্যাক সৃষ্টি
জীবনে এসবের কোনোটি কাজে লাগাতে পারব– এমন আশা ছিল না। দশ বছর পর, আমরা যখন প্রথম ম্যাকিনটোস কম্পিউটারের নকশা করছিলাম, এই পাঠ তখন কাজে দিল। তার সবটাই কাজে লাগালাম ‘ম্যাক’-এর নকশায়। কলেজে একমাত্র কোর্সটিতে যদি ভর্তি না হতাম, তবে মাল্টিপল টাইপফেস বা আনুপাতিক স্পেসের ফন্টসমৃদ্ধ ‘ম্যাক’-এর সৃষ্টি হতো না! ভাবি, যদি কলেজের পাঠ ছেড়ে না দিতাম, তাহলে হয়তো কোনোদিনই ক্যালিগ্রাফি ক্লাসে ভর্তি হওয়া হতো না আমার; আর পারসোনাল কম্পিউটারে চমৎকার টাইপোগ্রাফিরও উদ্ভাবন হতো না।
জন্মের আগেই দত্তক
এবার একটু পেছনে ফিরে যাই। আসলে আমার মা ছিলেন অবিবাহিত, কলেজপড়ুয়া তরুণী। জন্মের আগেই আমাকে দত্তক দিয়ে দেন এক আইনজীবী পরিবারের কাছে। আমি যখন জন্মালাম, সেই দম্পতি বেঁকে বসলেন; কেননা, তারা নাকি একটা কন্যার প্রত্যাশা করেছিলেন। ফলে আমাকে দত্তক নিতে আরও যারা আগ্রহী ছিলেন, তাদের তালিকা বের করে ফোন করা হলো মাঝরাতে : ‘অপ্রত্যাশিতভাবে সন্তানটি ছেলে হয়েছে; আপনারা কি ওকে নেবেন?’ তারা বললেন, ‘হ্যাঁ, নিশ্চয়ই।’ যদিও পরে আমার জন্মদাত্রী মা জানতে পেরেছিলেন আমার দত্তক মা কখনোই কলেজ পাস করেননি।
টাকার অভাবে কলেজ ছেড়ে দেওয়া
জন্মের ১৭ বছর পর কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেলাম আমি। এমন একটি কলেজকে আমি বেছে নিলাম, যেখানে পড়াশোনার খরচ স্ট্যানফোর্ডের মতোই ব্যয়বহুল। পড়ার খরচ জোগাতে গিয়ে আমার খেটে খাওয়া বাবা-মার জমানো সব টাকা ফুরিয়ে গেল। ছয় মাস এভাবে যেতেই আমার মনে হলো, পড়াশোনার কোনো মূল্য নেই। তাহলে জীবনে আমি করবটা কী– এ নিয়ে কোনো ধারণা ছিল না আমার; ধারণা ছিল না কলেজ কীভাবে আমাকে জীবনের লক্ষ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করবে, সে ব্যাপারেও। অথচ বাবা-মার সারাজীবনের জমানো সব টাকা আমি কলেজেই খরচ করে বসে আছি! এ কারণে ঠিক করলাম, কলেজ ছেড়ে দেব। মনে হলো, এতে সব ঠিক হয়ে যাবে।
বন্ধুর রুমের ফ্লোর ও নতুন পথের খোঁজ...
সে সময় ব্যাপারটা বেশ আতঙ্কদায়ক ছিল। এখন যখন অতীতে ফিরে তাকাই, তখন টের পাই, সেটি ছিল আমার জীবনের অন্যতম সেরা সিদ্ধান্ত। পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার মুহূর্ত থেকেই ক্লাসসংক্রান্ত সব ব্যস্ততা ফুরিয়ে গেল আমার। নজর দিলাম নতুন কোনো পথ খুঁজে নেওয়ার। ব্যাপারটা পুরোপুরি রোমান্টিক ছিল না। আমার নিজের জন্য কোনো রুম ছিল না। ফলে বন্ধুদের রুমের ফ্লোরে আমাকে ঘুমাতে হতো। ৫ সেন্ট মূল্যে কোকের বোতল রিটার্ন দিয়ে পাওয়া টাকায় খাবার কিনতাম আমি। সপ্তাহে একদিন ভালো খাবার পাওয়ার জন্য
প্রতি রোববার সাত মাইল হেঁটে শহরে,
হরে কৃষ্ণ মন্দিরে যেতে হতো আমাকে। ব্যাপারটা আমার ভালোই লাগত। এই যেতে যেতে পথে যে কৌতূহল ও ভাবনাগুলো খেলে যেত মাথায়, তার ফল আমি পরে পেয়েছি।
- বিষয় :
- প্রেরণার কথা