ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

সাক্ষাৎকার: অহিদুল ইসলাম তুষার

দেশ অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র এ আন্দোলন

দেশ অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র এ আন্দোলন

অহিদুল ইসলাম তুষার

 আবু সালেহ রনি

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৪ | ০০:২৫ | আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৪ | ০১:১৯

মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের দাবি সামনে রেখে দেশ অস্থিতিশীল করার গভীর চক্রান্ত হচ্ছে বলে মনে করছেন মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল চেয়ে হাইকোর্টে রিটকারী ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্মে’র সভাপতি অহিদুল ইসলাম তুষার। তাঁর মতে, এ আন্দোলনের নেপথ্যে গভীর ষড়যন্ত্র আছে বলে স্পষ্টতই দৃশ্যমান। তারা মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের ধারাকে সমাজে হেয়প্রতিপন্ন করে ফায়দা লুটতে চায়। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দেশ অস্থিতিশীল করাই তাদের  উদ্দেশ্য। 

গতকাল রোববার সমকালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তুষার আরও বলেন, বিশ্বের সব দেশেই কোটা ব্যবস্থা কার্যকর আছে। রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে সমতা আনার জন্য কোটা ব্যবস্থার বিকল্প নেই। 

সমকাল: মুক্তিযোদ্ধা কোটা কখন এবং কী কারণে প্রবর্তন হয়েছিল?

অহিদুল ইসলাম তুষার: ১৯৭২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা চালু হয়। বঙ্গবন্ধু সরকারের উদ্দেশ্য ছিল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বপূর্ণ অবদানকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মানিত করার পাশাপাশি তাদের পুনর্বাসন এবং প্রশাসনকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের ধারায় প্রতিষ্ঠা করা। তখন সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ সংরক্ষিত কোটা ছিল ৮০ শতাংশ। আর সাধারণ কোটা ছিল মাত্র ২০ শতাংশ, যাকে আমরা মেধা কোটা বলছি।

সমকাল: স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও কেন মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের দাবি উঠেছে? 

অহিদুল ইসলাম তুষার: মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বঙ্গবন্ধু সরকার ৩৫০ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সরকারি চাকরিতে অফিসার পদে নিয়োগ দিয়েছিল। এর পর কী হয়েছে সেটা দেশবাসী জানে। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় এবং স্বাধীনতাবিরোধী চক্র রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে। এ সময় মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের কোটা নিয়োগের ব্যবস্থা থাকলেও বীর মুক্তিযোদ্ধারা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হন। অনেকে ভাইভা দিলেও অকৃতকার্য দেখিয়ে তাদের চাকরি দেওয়া হয়নি। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সরকার গঠন করলে ফের মুক্তিযোদ্ধা কোটা কার্যকর হয়। ২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ক্ষমতায় আসে। তারা আবারও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের কৌশলে চাকরিতে নিয়োগ থেকে বাদ দেয়। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ফের সরকারে এলে মুক্তিযোদ্ধা কোটা কার্যকর হয়। পরে ২০১৮ সালে তা সম্পূর্ণরূপে বাতিল করা হয়। আমাদের প্রশ্ন এখানেই। এটি যথাযথ হয়নি।

সমকাল: কেন যথাযথ হয়নি বলে মনে করছেন?

অহিদুল ইসলাম তুষার: মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে যড়যন্ত্র চলছে। কারণ প্রশাসনযন্ত্র কখনও চায়নি মুক্তিযোদ্ধা কোটা কার্যকর হোক। কারণ ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৪৬ বা ৪৭ বছরে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগের তথ্যাদি পর্যালোচনায় দেখা যায়, এ কোটায় নিয়োগ হয়েছে মাত্র ১০ থেকে ১২ বছর। কোটা ব্যবস্থা থাকলেও তা ছিল ‘কাগুজে’। এ জন্য মুক্তিযোদ্ধা কোটার প্রয়োজনীয়তা আছে। 

সমকাল: কোটার মাধ্যমে মেধাহীনদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন এর বিরোধিতাকারীরা। এ বিষয়ে আপনি কী মনে করেন? 

অহিদুল ইসলাম তুষার: এটি একদম অসত্য। প্রত্যেক চাকরিপ্রত্যাশীকে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পর্যন্ত একসঙ্গে পরীক্ষা দিয়ে সমানভাবে উত্তীর্ণ হতে হয়। এখানে সবাই মেধার ভিত্তিতেই উত্তীর্ণ হন। তাহলে কাদের মেধাহীন বলা হচ্ছে? 

সমকাল: কোটার বিপক্ষে আন্দোলনকারীরা বলছে, ৫৬ শতাংশ কোটা ফিরেছে, আপনি কী মনে করেন?

অহিদুল ইসলাম তুষার: আমরা মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালে রিট করেছি। হাইকোর্ট আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছেন। বিস্তারিত পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর বলা যাবে।

সমকাল: কোটার বিপক্ষে আন্দোলনকারীরা বলছে, ‘কোটা’ বৈষম্য সৃষ্টি করে, আসলে কি তাই?

অহিদুল ইসলাম তুষার: আন্দোলনকারীরা সংবিধান অনুযায়ী সাম্য বা সমতা চায়। কিন্তু সাম্য বা সমতা কীভাবে আসবে, সেটা বলছে না। কোটার মাধ্যমেই বরং সাম্য বা সমতা আনতে হবে। 

সমকাল: বিশ্বের কোনো দেশে কি কোটা ব্যবস্থা আছে? এ নিয়ে কোনো পর্যালোচনা করেছেন কখনও? 

অহিদুল ইসলাম তুষার: বিশ্বের সব দেশেই কোটা ব্যবস্থা আছে। সাম্যের মাধ্যমে রাষ্ট্র সৃষ্টি করতে হলে কোটা থাকতে হবে। আমাদের তথ্য অনুযায়ী ভারতে ৫৯ দশমিক ৫ শতাংশ, পাকিস্তানে ৯২ দশমিক ৫ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় ৬০+৪০ শতাংশ কোটা, ইউরোপীয় ইউনিয়নে ৪০ শতাংশ নারী কোটা, ভিয়েতনাম ও আলজেরিয়ায় সেনা, নৌ, বিমান বাহিনীতে শতভাগ এবং সিভিল সার্ভিসে ৮০ শতাংশ কোটা বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের জন্য সংরক্ষিত আছে। বাংলাদেশেও সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনসহ নানাক্ষেত্রে কোটা কার্যকর রয়েছে। আপনি হজ করতে যাচ্ছেন সেখানেও কোটা, আপনি ইতালি, গ্রিস মালয়েশিয়ায় লোক পাঠাচ্ছেন সেটাও কোটা, জাতিসংঘের মহাসচিব নিজেই কোটায় নিয়োগ পাওয়া। তাহলে কোটা নেই কোথায়।

সমকাল: আপনাকে ধন্যবাদ।

অহিদুল ইসলাম তুষার: সমকালকেও ধন্যবাদ।

 

আরও পড়ুন

×