ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

সাক্ষাৎকার : জেড আই খান পান্না

মোবাইলে তল্লাশি মানবাধিকার লঙ্ঘন

সহিংসতাকে কেন্দ্র করে পুলিশ যা করছে, মোটেই আইনসম্মত নয়

মোবাইলে তল্লাশি মানবাধিকার  লঙ্ঘন

জেড আই খান পান্না

 ওয়াকিল আহমেদ হিরন

প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২৪ | ০০:৪৮

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চেয়ারপারসন এবং সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জহিরুল ইসলাম (জেড আই) খান পান্না বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কোনো অধিকার নেই সাধারণ মানুষের মোবাইল চেক করার। এটা মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং ব্যক্তিগত তথ্য অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পুলিশ যা করছে, তা মোটেই আইনসম্মত নয়। গতকাল শনিবার সমকালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

সমকাল : কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গভীর রাতে বাসায় বাসায় অতর্কিত তল্লাশি চালিয়ে লোকজনকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে, এটি কতটা আইনসম্মত?

জেড আই খান পান্না : কোটা সংস্কার নিয়ে প্রথমে ছাত্রদের আন্দোলন ছিল শান্তিপূর্ণ। সেটাকে বিনষ্ট করার জন্য সরকার ও কতিপয় দুষ্কৃতকারী সংঘাত সৃষ্টি করে জনমনে গভীর আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। ছাত্ররা আন্দোলন শুরু করেছে হোয়াটসঅ্যাপ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। লক্ষ্য করেছি, শিক্ষার্থীরা সুনির্দিষ্ট একটি ধারায় আন্দোলন করে যাচ্ছিল। হঠাৎ করে একটা রাজনৈতিক দলের সাধারণ সম্পাদক বললেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দমন করার জন্য ছাত্রলীগই যথেষ্ট। যে ছাত্রলীগ স্বাধীনতা অর্জনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে, সেই ছাত্রলীগকে আন্দোলন দমন করার জন্য লেলিয়ে দেওয়া খুবই অন্যায়। এর পরিণতিতে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে আমরা কেউই স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছি না। এখন বলতে হয়, সহিংস ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশ যা করছে, তা মোটেই আইনসম্মত নয়। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময়ও এভাবে গভীর রাতে দরজায় নক করা হতো। কখনও কখনও দরজা ভেঙে হামলা চালিয়ে নিরীহ মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সে সময় পাকিস্তানি সেনারা আমাদের দেশীয় রাজাকারদের সহায়তায় কাজগুলো করেছিল। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর আমরা সেটা আবার দেখছি। কিন্তু এখন যারা এ কর্মকাণ্ড করছে, তারা জন্মগতভাবে বাংলাদেশের শাসকদের লাঠিয়াল বাহিনী। এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড বাহাত্তরের সংবিধান ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিরোধী।

সমকাল : সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া পুলিশ কারও বাড়িতে তল্লাশি করতে পারে কিনা?

জেড আই খান পান্না : কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া পুলিশ কারও বাড়িতে প্রবেশ বা তল্লাশি করতে পারে না। এটা সম্পূর্ণ বেআইনি। বিনা কারণে ঢুকে পড়লে অবশ্যই তাকে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ ফোন করে জানাতে হবে। তাহলে সেখানে একটা রেকর্ড থাকবে। তার পরও বলছি, এ ধরনের যথাযথ প্রমাণসহ অভিযোগ পাওয়া গেলে বিনা ফিতে তাদের আদালতে আইনগত সহায়তা করব।

সমকাল : অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, রাস্তায় চলাচলরত মানুষের মোবাইল ফোন চেক করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। কোনো ধরনের আপত্তিকর ছবি পেলেই থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

জেড আই খান পান্না : আন্দোলনের এক পর্যায়ে সরকার মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দিয়েছে। এতে বোঝা যায়, দেশের গণতন্ত্র সুসংহত নয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কোনো অধিকার নেই সাধারণ মানুষের মোবাইল চেক করার। এটা সুস্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং ব্যক্তিগত তথ্য অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ ও বাধা প্রদান। এ রকম কোনো সুনির্দিষ্ট ঘটনা নিয়ে কেউ যদি আমাদের কাছে আসেন, তাহলে উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হবো এবং অধিকারের ন্যায্যতা অর্জন করব।

সমকাল : কেউ কেউ অভিযোগ করছেন, রাস্তায় সিসিটিভি ক্যামেরায় কাউকে দেখার পর সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

জেড আই খান পান্না : এ ধরনের কর্মকাণ্ড দিয়ে প্রমাণ হয়, তদন্তকাজে যারা দায়িত্বে আছেন, তারা  অকর্মণ্য। সিসিটিভি কেন, কোনো টিভিতে কোনো ব্যক্তিকে দেখা গেলেই তাকে গ্রেপ্তার বা আটক করা যায় না। যে কোনো ব্যক্তিকে আটক বা গ্রেপ্তার করতে হলে তাঁর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকতে হবে এবং তিন ঘণ্টার মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে কী অভিযোগ, তা জানাতে হবে। ওই ব্যক্তির আত্মীয়স্বজন এবং তাঁর আইনজীবীকেও বিষয়টি জানাতে হবে। তার পর পর্যায়ক্রমে আইনগত পদক্ষেপ নিতে হবে। কিন্তু কাউকে সন্দেহভাজন অপরাধী হিসেবে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা যাবে না। এমন অভিযোগ থাকলে সেটা মানবাধিকার ও সংবিধান লঙ্ঘন এবং মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি।

সমকাল : কখনও কখনও ১৮ বছরের কম বয়সীদের গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে।

জেড আই খান পান্না : এটা ঘোরতর অন্যায়। কোনো শিশু বা কিশোরকে গ্রেপ্তার করে সিএমএম আদালতে পাঠানো হলে ওই বিচারক যদি আসামিকে না দেখে কারাগারে পাঠান, সেটা হবে প্রশ্নবিদ্ধ ও বেআইনি। এ ধরনের অভিযোগ সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণিত হলে সেই বিচারকের বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দাখিল করা যেতে পারে। কারণ, আটককৃতকে শিশু আদালতে পাঠাতে হবে। প্রয়োজন বোধে সংশ্লিষ্ট আদালত তাদের কিশোর সংশোধনাগারে পাঠাতে পারেন। ফৌজদারি অভিযোগে সিএমএম আদালতের শিশু-কিশোরদের বিরুদ্ধে আনা অপরাধের বিচার করার কোনো এখতিয়ার নেই। এ বিষয়ে হাইকোর্ট বিভাগের দেওয়া একটি রায়ে সুনির্দিষ্টভাবে বিস্তারিত উল্লেখ আছে। 


      

আরও পড়ুন

×