সাক্ষাৎকার: ফরহাদ মজহার
ছাত্র-তরুণরা জনগণের জন্য শহীদ হতে রাজপথে নেমে এসেছিল

ফরহাদ মজহার
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইফতেখারুল ইসলাম
প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৫ | ০৪:২০ | আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৫ | ১৬:২৪
কবি, প্রাবন্ধিক ও গবেষক ফরহাদ মজহার দেশের অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক তাত্ত্বিক। তিনি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন বিকল্পের নীতিনির্ধারণী গবেষণা-উবিনীগ এবং নয়াকৃষি আন্দোলনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। সম্পাদনা করছেন ‘চিন্তা’। ১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঔষধশাস্ত্রে স্নাতক এবং পরে যুক্তরাষ্ট্রের দ্য নিউ স্কুল ফর সোশ্যাল রিসার্চ থেকে অর্থশাস্ত্রে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘গণঅভ্যুত্থান ও গঠন’, ‘মোকাবিলা’, ‘এবাদতনামা’, ‘সাম্রাজ্যবাদ’, ‘মার্কস, ফুকো ও রুহানিয়াত’, ‘ক্ষমতার বিকার’ ইত্যাদি। ফরহাদ মজহারের জন্ম ১৯৪৭ সালে নোয়াখালীতে। এই সাক্ষাৎকারের প্রথম অংশ বুধবার প্রকাশ হয়েছে; আজ প্রকাশিত হলো দ্বিতীয় অংশ। সমকালের পক্ষে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সহসম্পাদক ইফতেখারুল ইসলাম।
সমকাল: বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছে। তাদের নেতৃত্বে এখন একাধিক রাজনৈতিক দল ও সংগঠন ক্রিয়াশীল। এই ছাত্র-তরুণদের ভবিষ্যৎ কী দেখেন?
ফরহাদ মজহার: ইতিবাচকই দেখি। কিন্তু ৫ আগস্ট থেকে ৮ তারিখ প্রমাণ করেছে– তাদের দুর্দমনীয় ভূমিকা ও সাহসী নেতৃত্বের পরও বাংলাদেশের মতো একটি জটিল উত্তর-ঔপনিবেশিক দেশের জনগণের নেতৃত্ব দেবার মতো পড়াশোনা, প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা তারা এখনও অর্জন করতে পারেনি। কিন্তু বিপ্লবী সংকল্পের শক্তি বিপুল। আশা করি, তারা দ্রুত দুর্বলতা কাটিয়ে উঠবে।
সমকাল: প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে ছাত্র-তরুণদের চ্যালেঞ্জ কী কী?
ফরহাদ মজহার: সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, তারা তত্ত্ব ও চর্চার মধ্যে সম্পর্ক অনুধাবন করতে ব্যর্থ। কীভাবে বাস্তবতা থেকে, এমনকি ব্যর্থতা থেকে শিখতে হয়, সেটা তারা রপ্ত করেনি এবং এখনও করতে জানে, সেই ভরসা পাই না। ফলে আগামী দিনে কী ঘটবে তার জন্য আগাম প্রস্তুতি নেবার দূরদর্শিতা তাদের মধ্যে এখনও দেখছি না। এখন যা ঘটছে, সেটা তো ৮ আগস্টের পরই আন্দাজ করা উচিত ছিল। সবচেয়ে প্রকট সমস্যা হচ্ছে, তাদের পড়াশোনার ঘাটতি রয়েছে। তাই প্রাগম্যাটিক, অর্থাৎ সম্মুখস্থ সমস্যা সমাধানকেই রাজনীতি ভাবছে– বাংলাদেশকে নতুনভাবে গড়বার বুদ্ধিবৃত্তিক প্রস্তুতি ও কর্মপরিকল্পনার ভয়াবহ অভাব আছে। গণঅভ্যুত্থান ও গাঠনিক রাজনীতির প্রধান শত্রু তথাকথিত প্রাগম্যাটিজম– প্রায়োগিকতাবাদ, উপযোগিতাবাদ, দরকারবাদ ইত্যাদি। আসলে সহজ ভাষায় এর নাম সুবিধাবাদ। অর্থাৎ বাস্তব পরিস্থিতিতে যেটা নিজেদের জন্য সুবিধা, সেই পথ গ্রহণ করা। ৫ আগস্টের পর ছাত্র-তরুণদের একাংশের মধ্যে এই সুবিধাবাদই সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লবে সরাসরি ভূমিকা রেখেছে।
সমকাল: এখন আপনি তাদের কাছে কী আশা করেন?
ফরহাদ মজহার: ছাত্র-তরুণদের মধ্যে যারা গণআকাঙ্ক্ষা ধারণ করে এগিয়ে যেতে চায়, আশা করি তারা সুবিধাবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে শিখবে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে তারা যে অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গিয়েছে, সেই অভিজ্ঞতা ছাত্র-তরুণদের আত্মসমালোচনা করতে এবং তাদের অভাবের জায়গাগুলো শনাক্ত করতে শেখাবে। অভাবের জায়গাগুলো ক্রমশ স্পষ্ট হবে এবং ছাত্র-তরুণদের নেতৃত্বে শক্তিশালী গণরাজনৈতিক ধারা বাংলাদেশে গড়ে উঠবে। তাহলে এখনকার প্রতিবিপ্লবী পরিস্থিতির বিরোধিতা ক্রমশ বাড়বে।
সমকাল: তরুণদের নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলোর সম্ভাবনা কতখানি?
ফরহাদ মজহার: ৮ তারিখের শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে জনগণের যে গাঠনিক শক্তি বা ‘কনস্টিটুয়েন্ট পাওয়ার’ এবং তা বাস্তবায়নের সম্ভাবনা ছিল, তা পুরোপুরি নষ্ট করে ফেলার প্রক্রিয়া আমাদের চোখের সামনেই চলছে। তারপরও গণক্ষমতা আবারও পুনর্গঠনের একটা আশু সম্ভাবনা ছিল, যদি এনসিপি গণঅভ্যুত্থানের রাজনীতির মধ্যে থাকত, লুটেরা ও মাফিয়া শ্রেণির সহযোগী হিসেবে যদি তারা নির্বাচনী রাজনীতির মধ্যে এখনই প্রবেশ না করত। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা তো তাদের হাতেই আমানত হিসেবে জনগণ সমর্পণ করেছিল। তারা সেই আমানত রক্ষা না করে ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত’ অর্থাৎ নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মাফিয়া, লুটেরা ও স্বার্থান্বেষী শ্রেণির সঙ্গে ক্ষমতার ভাগবাটোয়ারার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ল। একে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার অভাব বলে ক্ষমা করে দিতে পারেন, কিন্তু এর ফল তো আমাদের ভোগ করতে হবে।
সমকাল: ফল ভোগের এই বিষয়টি আরেকটু ব্যাখ্যা করবেন?
ফরহাদ মজহার: প্রথমত, এই ছাত্র-তরুণদের মধ্যেও দুটো পরস্পরবিরোধী ধারা অনিবার্যভাবেই আগামীতে হাজির হবে। যারা গণঅভ্যুত্থানকে পূর্ণ বিজয়ের দিকে নিয়ে যাবার লড়াই চালিয়ে যাবে। যাকে আমরা গণরাজনৈতিক ধারা বলতে পারি। আরেক ধারাকে বলতে পারি সংস্কারবাদী বা বন্দোবস্তবাদী ধারা।
দ্বিতীয়ত, ছাত্র-তরুণরা যেহেতু ৫ আগস্টের জনগণের গাঠনিক ক্ষমতাকে পুরোনা সংবিধান বাতিল করে নতুন গঠনতন্ত্র প্রণয়ন ও নতুনভাবে বাংলাদেশ গঠনের ধারায় রূপ দিতে পারল না; সেই কর্তব্য বাদ দিয়ে নির্বাচনী রাজনীতিতে এসেছে। তাই তাদের মূল গণমুখী রাজনৈতিক চেতনার সঙ্গে বিদ্যমান মাফিয়া রাষ্ট্রের বিরোধ যাবে না। সেটা কী রূপ নেবে, আমরা এখনও জানি না।
গণঅভ্যুত্থান তরুণদের মনের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতি; তাদের গৌরবের জায়গা। কিন্তু বাস্তব রাজনৈতিক চর্চার মধ্যে তারা নিজেদের স্বেচ্ছায় লুটেরা মাফিয়া শ্রেণির নির্বাচনী রাজনীতি ও কালো টাকার খেলার অধীনস্থ করেছে। নির্বাচনী রাজনীতি করতে হলে লুটেরা মাফিয়া শ্রেণির কাছ থেকেই তাদের চাঁদা নিতে হবে। টাকা ছাড়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা যাবে না। এই দ্বন্দ্ব তারা কাটিয়ে উঠতে পারবে না। এখনই সতর্ক না হলে এটাই তাদের জন্য আগামী দিনে বড় ধরনের রাজনৈতিক সংকট তৈরি করবে।
সমকাল: গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের একটি বড় অংশ আপনার চিন্তা ও তৎপরতার সঙ্গেও যুক্ত ছিল। গণঅভ্যুত্থানের পর তাদের মধ্যে কী ঘটেছে?
ফরহাদ মজহার: আমার নিজের অবস্থান হচ্ছে, আমি তরুণদের সঙ্গেই থাকব। কারণ ৫ আগস্ট বাংলাদেশের মতো উত্তর-ঔপনিবেশিক এবং পুঁজিতান্ত্রিক গোলকায়নের প্রান্তিক রাষ্ট্রে ঘটে যাওয়া দুর্দান্ত ঘটনা। এর রেশ উপমহাদেশে তো বটেই, এমনকি বৈশ্বিক পর্যায়েও পড়বে। বাংলাদেশ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রাজনীতির, অর্থাৎ আগামী দিনে বড়সড় পরিবর্তনে ভূমিকা রাখবে। তার জমিন তৈরি হয়ে গেল। ছাত্র-তরুণদের বিপ্লবী অংশই সেটা ঘটাবে। অন্যদিকে যেহেতু ৮ আগস্টের সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লব ছাত্র-তরুণদের জীবনের ওপর বড় ধরনের হুমকি হয়ে হাজির হতে পারে, তাই তাদের পাশে থাকা আমি আমার নৈতিক ও রাজনৈতিক কর্তব্য মনে করি।
সমকাল: তাহলে আগামীর রাজনীতিতে তরুণদের শরিকানা থাকবে?
ফরহাদ মজহার: অবশ্যই থাকবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। তার প্রভাব উপমহাদেশেও পড়বে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রাজনৈতিক পরিণতি কী দাঁড়াবে, সেটা আমি স্পষ্ট করে না বললেও পশ্চিম বাংলা, ত্রিপুরা, মণিপুর– বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী সকল রাজ্যেই পড়বে। মিয়ানমারও বাদ যাবে না। জুলাই গণঅভ্যুত্থান কোনো জাতীয় ঘটনা ছিল না। এটা একটা আন্তর্জাতিক ঘটনা ছিল। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক তাৎপর্য তরুণরা এখনও বুঝতে পারছে না। যখনই তারা বুঝবে তখনই তারা স্বভাবত এ অঞ্চলে নতুন রাজনৈতিক আদর্শ ও শক্তি আকারে হাজির হওয়ার চেষ্টা করবে।
সমকাল: তরুণরা বিদ্যমান এই লুটেরা প্র্যাকটিস থেকে কীভাবে বেরিয়ে আসবে?
ফরহাদ মজহার: এর শর্ত তো গণঅভ্যুত্থানের রাজনীতির মধ্যেই বর্তমান। ছাত্র-তরুণরা যদি নির্বাচনী রাজনীতিতে নিজেদের বিসর্জন না দিত, তাহলে কি আপনি মনে করেন যে বাংলাদেশের লাখ লাখ কোটি কোটি মানুষ তাদের সমর্থন দিত না? ছাত্র-তরুণরা তো জনগণের জন্যই শহীদ হতে রাজপথে নেমে এসেছিল। তাহলে জনগণের জন্য যারা জালিমের বিরুদ্ধে লড়ে শাহাদাত কবুল করে, তারা তো আল্লাiর সবচেয়ে মহব্বতের মানুষ। মজলুমের পক্ষে জালিমের বিরুদ্ধে লড়া– এটাই ইসলাম। এটাই
ইনসাফের রাজনীতি। তাহলে জনগণ তো ছাত্র-তরুণদের পেছনেই তাদের জীবন, অর্থ ও সম্পদ ঢালবে। এটাই তো ইতিহাস বলে। লুটেরা মাফিয়া শ্রেণির কাছে হাত পাততে হবে কেন? এটা তো আমরা ’৬৯-এ দেখেছি। ভাসানী কীভাবে আন্দোলন করেছিলেন? মাটির ঘরে বসে! আমরাই-বা জনগণ ছাড়া টিকে থাকব কী করে?
সমকাল: গণঅভ্যুত্থানের তরুণদের নেতৃত্বে গঠিত রাজনৈতিক দল এনসিপি এ ক্ষেত্রে কী করতে পারে?
ফরহাদ মজহার: জনগণই গাঠনিক শক্তি। এই পরিস্থিতি আবার ফিরিয়ে আনতে আমাদের সামনে বাধা কী? এনসিপি যে নির্বাচনী রাজনীতি অনুসরণ করছে, সেটা লুটেরা-মাফিয়াদের ক্ষমতা বৈধকরণের রাজনীতি। আমরা তরুণদের পক্ষে। কিন্তু আমরা তো এই রাজনীতি চাই না। ফলে তারা যখন এই রাজনীতি করছে তাহলে বোঝা যাচ্ছে, বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে সমাজে গণমুখী রাজনৈতিক চিন্তার বিকাশ ঘটেনি। সেই কাজটা করতে হবে। জনগণের কাছে যেতে হবে। তরুণদের বোঝাতে হবে- নির্বাচনী রাজনীতি জনগণের কোনো মুক্তি আনে না। গণঅভ্যুত্থানের যে নেতৃত্ব, যে সাংগঠনিক শক্তি আমরা তরুণদের মধ্যে দেখেছি তার প্রতি আমাদের আনুগত্য রয়েছে।
সমকাল: তরুণরা কি তাহলে নির্বাচনে যাবে না?
ফরহাদ মজহার: নীতিগতভাবে নির্বাচন এই মুহূর্তে সমর্থন না করলেও কৌশলগতভাবে আমরা সমর্থন করতে পারি। কৌশল এই অর্থে যে, এনসিপির পক্ষে জনমত তৈরি করাটাও এক ধরনের কাজ হতে পারে। এনসিপি নীতিগতভাবে সঠিক কাজ না করলেও দলটি যেন নির্বাচনবাদী বা নির্বাচনসর্বস্ব না হয়, সেই চেষ্টা আমাদের করতে হবে। আমাদের এখান থেকে বের হতে হবে এবং আগামী দিনের রাজনীতি সম্পর্কে ভাবতে হবে।
সমকাল: এটা তো লম্বা একটা প্রক্রিয়া?
ফরহাদ মজহার: গণঅভ্যুত্থান তো ঘটে গেল। সকলে তো তখন আমাকে নিয়ে তামাশা করছিল। এখন আবার সকলে বলে, এটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া। আমি তা মনে করি না। নিঃসন্দেহে জনগণ রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী হিসেবে পরিগঠিত হওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে ঢুকে পড়েছে। ফলে এটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া হবে না। সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।
আরেকটি দিক। বাইনারি রাজনীতির সংকট। সেটা কাটিয়ে উঠতে হবে। বাঙালি না বাঙালি মুসলমান– এই দ্বন্দ্বে আমরা ভুগি। ইসলাম বনাম সেক্যুলারিজম। এই বাইনারিতে আমরা এখনও রয়ে গিয়েছি। বাইনারি বানিয়ে এক পক্ষ অপর পক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছে।
সমকাল: বাইনারি অতিক্রম করা বলতে রাজনীতিতে কী বোঝায়?
ফরহাদ মজহার: উদাহরণ দিচ্ছি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মধ্যেই জনগণকে পরিগঠিত করার সব উপাদান রয়েছে। সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার। এটা সেক্যুলাররা যেমন, তেমনি ইসলামপন্থিদের কাছেও গ্রহণযোগ্য। কিন্তু পরে আমরা জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা চাপিয়ে দিয়ে দেশকে দুই ভাগে ভাগ করে ফেললাম। এলিট শ্রেণিই বাংলাদেশের স্বাধীনতা নস্যাৎ করে দিয়েছে। আমরা ৫০ বছরের গহ্বরে পড়ে গেলাম।
সমকাল: তাহলে এই সংকট মোকাবিলা কীভাবে সম্ভব?
ফরহাদ মজহার: প্রথম কাজ সংকটকে স্বীকার ও তাকে বুঝতে শেখা। দ্বিতীয় কাজ নির্বাচনী রাজনীতি, না কৌশল হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ ভিন্ন তর্ক। কিন্তু দরকার গণরাজনৈতিক ধারা বিকাশের জন্য কাজ করা। জনগণকে সচেতন করা এবং গণসার্বভৌমত্ব কায়েমের রাজনীতি শক্তিশালী করাই আগামীতে আমাদের কাজ।
সমকাল: যদি তরুণরা সেটা করতে না পারে?
ফরহাদ মজহার: তরুণরা যদি গণঅভ্যুত্থানকে সামনে এগিয়ে নিতে না পারে, তাহলে এটা তাদের জন্য মৃত্যুফাঁদ। নিজেরাই নিজেদের জন্য মৃত্যুফাঁদ তৈরি করছে। সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লবকে বৈধতা দিয়ে পরবর্তী সময়ে যারাই আসুক, তাদের প্রধান কাজ হবে– যে গণশক্তি সমাজের মধ্যে ইতোমধ্যে হাজির আছে, তা নির্মূল করা। তরুণদের এই সকল আসন্ন বিপদ নিয়ে ভাবতে হবে। রাজনৈতিকভাবে ভাবতে শিখতে হবে এবং প্রতিরোধ কৌশলের দিক থেকেও ভাবতে শিখতে হবে। কারণ আগামী দিনে বিদ্যমান লুটেরা ব্যবস্থার প্রতিনিধি শক্তি এটা মোকাবিলা করবেই। সেই মোকাবিলাই বিভিন্নরূপে সমাজে ইতোমধ্যে দেখা যাচ্ছে; বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বক্তব্যের মধ্যে। তরুণদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার দেখলেই তো বোঝা যায় গণঅভ্যুত্থানকে নস্যাৎ করার প্রক্রিয়া প্রবলভাবেই হাজির আছে। তার জন্য কিছু তরুণই দায়ী। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, তরুণরা শেষ হয়ে গেছে।
সমকাল: রাজনীতি করতে অর্থের প্রয়োজন হয়। সেটা কোথা থেকে মিটবে?
ফরহাদ মজহার: আমি মনে করি, এটা ভুল ধারণা যে ছাত্র-তরুণদের লুটেরাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে রাজনীতি করতে হবে। সারাদেশের মানুষ তাদের ডাকে জীবন দিয়েছে। গণরাজনৈতিক ধারা শক্তিশালী করা ছাড়া অর্থের বিনিময়ে নির্বাচনী রাজনীতির কোনো মূল্য আছে? জনগণকে বাদ দিয়ে লুটেরা-মাফিয়া শ্রেণির নির্বাচনী রাজনীতি গণরাজনীতির পথ হতে পারে না। এই রাজনীতি তো টিকবে না। তারা সাধারণ মানুষের হৃদয় থেকে আশা করি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে না। নির্বাচনী রাজনীতি প্রধান হয়ে পড়লে তাদের সঙ্গে একমাত্র টাউটরা বিভিন্ন জেলায় সংযুক্ত হবে।
সমকাল: জুলাই গণঅভ্যুত্থান মূল্যায়নে দুই কিস্তির সাক্ষাৎকারের জন্য আপনি দীর্ঘ সময় দিয়েছেন। আপনাকে ধন্যবাদ।
ফরহাদ মজহার: সমকালকেও ধন্যবাদ।
- বিষয় :
- ফরহাদ মজহার