টিকটক থেকে ঠিকঠাক

হামীম রায়হান
প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২১ | ১২:০০ | আপডেট: ২৫ জুন ২০২১ | ১৫:৫৫
সেন্টু ভাই আর আমরা মহা ব্যস্ত সময় পার করছিলাম। দম ফেলার সময় পর্যন্ত নেই! সারাদিন কাজ আর কাজ! নানা জায়গায় শুটিং, নানা বিষয়ে ভাবনা। নানা জায়গায় ফ্যান মিটআপ, আরও কত কী!
বলছি আমাদের বেকার জীবনে আশীর্বাদ হয়ে আসা টিকটক নামের অমূল্য পরশ পাথরতুল্য অ্যাপের কথা। পরশ পাথরের ছোঁয়ায় যেমন লোহা সোনা হয়, তেমনি আমরা এই চাইনিজ অ্যাপের ছোঁয়ায় খাঁটি সরিষায়, দুঃখিত মানুষে পরিণত হচ্ছিলাম! আমরা বুঝতে পারলাম, সব চাইনিজ জিনিস চাইনিজ মোবাইলের মতো না! চাইনিজ করোনা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে, তেমনি এই টিকটকও সারা পৃথিবীতে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে! পৃথিবীজুড়ে সেন্টু ভাই, আমি, সুবেল, পিবলু, বারিক্কা রাজত্ব করছিলাম। আমরা চাইনিজ মাল দিয়ে দেশকে রিপ্রেজেন্ট করছিলাম!
সেন্টু ভাই আমাদের সবার চেয়ে এগিয়ে। তিনি এখন টিকটক সেলিব্রিটি! লাখ লাখ ফলোয়ার তার আইডিতে। সারাদেশে তার ফ্যান-ফলোয়ার। ভাই চুলে নীল রং করে দেশ কাঁপিয়ে দিলেন। চুলের রং নীল করার কারণ নীল মানে আভিজাত্য। নিন্দুকেরা আবার বলবেন, বেদনার রংও নীল!
সে যাই হোক, আমাদের সারাদিন বিভিন্ন কনটেন্ট নিয়ে ভাবতে হয়। আমরা চাই, যেন সমাজের উপকার হয়। আমাদের তৈরি কয়েকটি সেরা কনটেন্টের কথা বলি। এই যে করোনার সময় কোরবানির ঈদ গেল। সবাই মাস্ক ব্যবহার করে, সবাই নিজের কথা ভাবল, অথচ যাদের দিয়ে এই কোরবানি তাদের কথা কেউ ভাবল না! তাদের কথা ভাবলেন সেন্টু ভাই। আমরা নিজের টাকা খরচ করে গরুর জন্য মাস্ক কিনে তাদের পরিয়ে দিলাম। যদিও একটা গরুকে মাস্ক পরাতে গিয়ে গরুচোর বলে মার খেতে খেতে বেঁচে গেছি। আরেক গরুর লাথিতে সুবেল এখন অবধি খুঁড়িয়ে হাঁটে। এত ত্যাগ স্বীকার করেছি আমরা সবাই!
সেদিন আমরা বজা কাকার চায়ের দোকানে শিঙ্গাড়া নিয়ে টিকটক ভিডিও বানাচ্ছিলাম। এই টিকটক হবে আরও বিনোদনময়। হঠাৎ আকাশ থেকে যেন গজব নাজিল হলো। একটা পুলিশের গাড়ি থামল দোকানের সামনে। দু'জন পুলিশ নেমেই সেন্টু ভাইকে গাড়িতে তুলে নিয়ে গেল। আমরা কোনোমতে নিজেদের বাঁচালাম।
এর অনেক দিন ভাইয়ের দেখা নেই। অনেক দিন পর হঠাৎ সেন্টু ভাইকে দেখলাম রাস্তায়। এ যেন অন্য কেউ, চেনার উপায় নেই। আগের সেই উজ্জ্বলতাও নেই মুখে।
-'ভাই! কবে ছাড়া পেলেন?'
-'এই তো কাল।'
-'একটা মিটআপের আয়োজন করি?'
-'এসব কথা বলবি তো মেরে হালুয়া টাইট করে দেব। শালারা, কেউ আমার খবরটা পর্যন্ত নিলি না!'
-'ভয়ে ছিলাম ভাই! চলেন, আবার শুরু করি?'
-'ও কথা মুখেও আনবি না। পুলিশের যে মারগুলা খাইসি, বলসে এবার দেখলে গুলি করে মারবে। আর টিকটক না, এখন থেকে ঠিকঠাক হয়ে চলতে হবে!'
সেন্টু ভাইয়ের এই কথার পর আমরাও টিকটক ছেড়ে ঠিকঠাক হয়ে চলতে থাকি।