অটুট থাকুক বন্ধুত্ব
বন্ধু দিবস

ফাইল ছবি
মৌ মণি পুষ্প
প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২৪ | ২২:০০ | আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২৪ | ১১:৩৬
‘হঠাৎ রাস্তায় আপিস অঞ্চলে/হারিয়ে যাওয়া মুখ চমকে দিয়ে বলে/বন্ধু, কী খবর বল?/কত দিন দেখা হয়নি’ কবীর সুমনের এ গানটি নিশ্চয়ই অনেকের মনে দোলা দেয়। অনেক বছর পর হঠাৎ করে হারিয়ে যাওয়া কোনো বন্ধুর সঙ্গে পথে দেখা হলে এমনই অনুভূতি কাজ করে।
বন্ধু মানেই বুকের গভীরে বিশেষ এক অনুভূতি। বন্ধুত্ব মানে না কোনো জাতি, কোনো বয়স, কোনো ধর্ম। বন্ধুত্ব হলো পারস্পরিক মনের বন্ধন। শৈশবে স্বার্থ নামক অনুভূতি কিংবা জাগতিক হিসাব-নিকাশ থাকে না। তাই এ সময়ে বন্ধুত্ব হয় শর্তহীনভাবে। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের পরিসরও বাড়তে থাকে। শৈশবের বন্ধু বা স্কুল-কলেজের বন্ধুর সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। জীবনে বেড়ে ওঠার পথে ছাত্রজীবন, কর্মক্ষেত্র, সংসার ও সমাজ জীবনে নানা মানুষের সঙ্গেও গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব।
পরিবারের পরেই সবচেয়ে ভরসার জায়গা হলো আমাদের বন্ধুরা। বন্ধুত্বকে সম্মান দিতে ও বিশেষভাবে উদযাপনে ২০১১ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ৩০ জুলাইকে বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক বন্ধু দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। যদিও বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আগস্টের প্রথম রোববার বন্ধু দিবস উদযাপিত হয়।
কীভাবে এলো বন্ধু দিবস
শোনা যায়, ১৯৩৫ সালে আমেরিকা সরকার এক ব্যক্তিকে হত্যা করে। বন্ধু হারানোর দুঃখ সইতে না পেরে তার প্রতিবাদে পরের দিন তাঁর বন্ধু আত্মহত্যা করেন। দিনটি ছিল আগস্টের প্রথম রোববার। এরপর আমেরিকার কংগ্রেস থেকে ১ আগস্টকে বন্ধু দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
এ ছাড়া ১৯৫৮ সালের ২০ জুলাই র্যামন আর্তেমিও ব্রাচো নামের প্যারাগুয়ের এক চিকিৎসকের বিশ্বব্যাপী বন্ধুত্ব দিবস উদযাপনের চিন্তা মাথায় আসে। এ ধরনের একটি ঘটনাও শোনা যায়। প্যারাগুয়ের একটি শহর পুয়ের্তো পিনাস্কোয় বন্ধুদের সঙ্গে নৈশভোজে বসেছিলেন তিনি। সেই সময়ই ওয়ার্ল্ড ফ্রেন্ডশিপ ক্রুসেড নামে একটি সংগঠনের কথা প্রথম আসে। এ সংগঠনের মাধ্যমে জাতি, বর্ণ, ধর্ম, ভাষা, লিঙ্গ নির্বিশেষে বন্ধুত্ব ছড়ানো ও উদযাপনের কাজ করা হয় বলেই জানা গেছে।
তবে এ সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত হলো জয়েস হলের গল্পটি। জয়েস হল হচ্ছেন হলমার্ক কার্ডের প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৩০ সালে আগস্টের প্রথম রোববার বন্ধুত্ব দিবস উদযাপনের পক্ষে জয়েস হল প্রস্তাব দেন। কথিত আছে, তাঁর এ প্রস্তাবনা ছিল পুরোপুরিই ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তোলা। কার্ড ও গিফট বিক্রি বাড়ানোর জন্য কেবল নতুন একটি উৎসব হিসেবেই ফ্রেন্ডশিপ ডে’কে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন জয়েস। তবে এতে কমে যায়নি বন্ধুত্বের আবেদন। উৎপত্তি যেভাবেই হোক না কেন, দেশে দেশে বিভিন্নভাবে নিজেদের বন্ধুদের সঙ্গে দিনটি স্মরণীয় করে রাখেন সবাই।
যেভাবে উদযাপিত হয় বন্ধুত্ব দিবস
বিভিন্নভাবে আনন্দমুখর পরিবেশে সারাবিশ্বে উদযাপিত হয় ফ্রেন্ডশিপ ডে। বাচ্চাদের স্কুল, ডে কেয়ার সেন্টার অথবা নিজেদের মধ্যেই বন্ধু দিবস উপলক্ষে বিশেষ আয়োজন করা হয়। ছোটদের মধ্যে বন্ধু দিবসের সবচেয়ে জনপ্রিয় উপহার হচ্ছে ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ড বা ব্রেসলেট। প্রায়ই বন্ধুদের মধ্যে এ বিশেষ দিন উপলক্ষে ব্রেসলেট আদান-প্রদান করতে দেখা যায়। এ ছাড়াও নিজের হাতে বানানো কার্ড, চকলেট, ফুল ইত্যাদি উপহার হিসেবে প্রচলিত।
বড়দের বন্ধুত্বটা এর চেয়ে ভিন্ন; তাই অনেক ক্ষেত্রে উদযাপনও ভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। ব্যবহারের জিনিসপত্র যেমন বই, কফি মগ, নোটবুক, গহনাগাটি বা ঘড়ি এ ধরনের জিনিসপত্র উপহারের তালিকায় এগিয়ে থাকে। অনেক সময় বন্ধুরা মিলে গ্রুপ করে কোথাও ঘুরতে যাওয়া, পিকনিক করা অথবা নিজেদের মধ্যে প্ল্যান করে কিছু করার মাধ্যমেও এ দিনটি বিশেষভাবে উদযাপন করা হয়।
বন্ধু দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট, রিসোর্ট আর এমিউজমেন্ট পার্কে বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়, কখনও কখনও আলাদাভাবে বিশেষ আয়োজনই করতে দেখা যায়। গিফট শপগুলোয় এ সময় আলাদা রকমের ব্যস্ততা থাকে। অনেক শপেই বিশেষ এ দিবস উপলক্ষে গিফট আইটেমের ওপর ছাড় দেওয়া হয়; থাকে বিশেষ অফার। অনেকেই বলে
বন্ধুদের জন্য বিশেষ দিবস কীসের, সব দিনই স্পেশাল। কিন্তু এখনকার কর্মব্যস্ত জীবনে
একটা দিন বিশেষভাবে তোলা থাকতেই পারে প্রিয় বন্ধুর জন্য।
- বিষয় :
- বন্ধুত্ব