ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

ইগো থেকে বের হোন

ইগো থেকে বের হোন

ফাইল ছবি

নুরুল্লাহ আলম নুর

প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৪ | ২৩:১৯

প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব ব্যক্তিত্ব, আত্মসম্মান ও আত্মমর্যাদা থাকে, যা তাঁর নিজেকে মূল্যায়ন করতে সহায়তা করে। তবে কিছু ক্ষেত্রে এই মূল্যায়ন বাড়াবাড়ি পর্যায়ে পৌঁছায় এবং ইগোতে রূপান্তরিত হয়। বিশেষ করে পুরুষের মধ্যে এই ইগো প্রবণতা বেশি দেখা যায়। মেল ইগো বলতে বোঝায় এমন এক মানসিক অবস্থা, যেখানে ব্যক্তি নিজের ব্যক্তিত্বকে অতিরিক্তভাবে গুরুত্ব দেয় এবং নিজেকে সবার ঊর্ধ্বে মনে করতে শুরু করে। এই প্রবণতা শুধু তাঁর ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনেই ক্ষতি করে না, বরং পেশাগত জীবনেও বিভিন্ন বাধার সৃষ্টি করে। 
মেল ইগো থেকে বেরিয়ে সঠিক আত্মবিশ্বাস অর্জনের কিছু কার্যকরী উপায়
আত্মজিজ্ঞাসা এবং নিজের সীমাবদ্ধতা মেনে নেওয়া
প্রথমেই প্রয়োজন নিজের সঙ্গে খোলামেলা আলাপ করা এবং সীমাবদ্ধতাগুলো মেনে নেওয়া। যখন আমরা স্বীকার করি যে আমরা অপরিপূর্ণ, তখন অহংবোধ অনেকটা কমে আসে। আত্মজিজ্ঞাসার মাধ্যমে নিজের শক্তি ও দুর্বলতা যাচাই করা উচিত। নিজের সীমাবদ্ধতাগুলো মেনে নিলে নিজেকে সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু ভাবার প্রবণতা অনেকটাই কমে যায় এবং অন্যের দৃষ্টিকোণও উপলব্ধি করতে শুরু করা যায়। 
সহানুভূতিশীল হওয়া
সহানুভূতি বাড়ানো মেল ইগো থেকে বেরিয়ে আসার কার্যকর উপায় হতে পারে। অন্যের অনুভূতি ও দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে যত বেশি সচেতন হবেন, ততই মেল ইগো থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হবেন। বিভিন্ন সমস্যায় অন্যের অবস্থানকে বোঝা, তাদের অনুভূতি উপলব্ধি করা এবং তাদের সম্মান করা ব্যক্তিত্বের পরিপক্বতা বাড়ায়। এতে অহংবোধ কমে আসে এবং আমরা অন্যের মঙ্গল কামনায় আগ্রহী হই।
নিজের ভুল স্বীকার করতে শেখা
মেল ইগোর কারণে অনেক সময় আমরা নিজেদের ভুল স্বীকার করতে চাই না। এতে মানসিক চাপ বাড়ে এবং সম্পর্কের অবনতি ঘটে। নিজের ভুল স্বীকার করা এবং তা থেকে শেখার মানসিকতা গড়ে তোলা মেল ইগো থেকে মুক্তির অন্যতম উপায়। এতে শুধু আমাদের ব্যক্তিত্বই আরও গ্রহণযোগ্য হয় না, বরং অন্যদের সঙ্গেও সম্পর্কের উন্নতি হয়। ভুল স্বীকার করতে পারা এমন একটি শক্তি, যা আত্মবিশ্বাসকে সঠিক পথে পরিচালিত করে।
শুদ্ধ আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলা
আত্মবিশ্বাস ও ইগোর মধ্যে পার্থক্য বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। আত্মবিশ্বাস নিজেকে জানার মাধ্যমে আসে। আর ইগোতে আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভাবেন। প্রকৃত আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলার জন্য সাফল্যের পাশাপাশি ব্যর্থতা থেকেও শিক্ষা নিতে হবে। সাফল্যের ক্ষেত্রে নিজেকে ধন্যবাদ জানানো যেমন জরুরি, তেমনই ব্যর্থতার ক্ষেত্রে নিজেকে প্রশ্ন করা প্রয়োজন– কোথায় উন্নতি করা যায়। এভাবে ধীরে ধীরে প্রকৃত আত্মবিশ্বাস অর্জন করা যায়, যা অহংবোধের চেয়ে কার্যকর।
অন্যের প্রশংসা করা ও স্বীকার করা
মেল ইগো থেকে বেরিয়ে আসার আরেকটি সহজ উপায় হলো অন্যের প্রশংসা করা এবং তাদের সফলতা বা গুণাবলি স্বীকার করা। অন্যের গুণাবলি ও কাজের প্রশংসা করতে পারলে নিজে থেকে ইগোর আসক্তি কমে যায়। এর মাধ্যমে মেল ইগোর প্রভাব থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া যায়। এই প্রশংসা ও স্বীকৃতির ব্যাপারটা শুধুই মৌখিক নয়, এতে আন্তরিকতা ও সৎ অনুভূতিও রাখা উচিত। 
মননশীল ও ইতিবাচক চিন্তা গড়ে তোলা
ইগো থেকে বের হতে চাইলে মননশীল ও ইতিবাচক চিন্তা গড়ে তোলা জরুরি। মেল ইগো প্রায়ই নেতিবাচক চিন্তাভাবনা ও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। নিজের চিন্তাধারাকে ইতিবাচক দিকে চালিত করলে অহংবোধের জায়গায় আত্মসম্মান ও অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মনোভাব গড়ে তোলা যায়। এজন্য প্রয়োজন, নিয়মিত ধ্যানচর্চা এবং ব্যক্তিগত বিকাশের জন্য ভালো বই পড়া।
সম্পর্কের প্রতি মনোযোগী হওয়া
অহংবোধ সম্পর্কের মধ্যে একটি দেয়াল তৈরি করতে থাকে এবং একসময় তা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মেল ইগো থেকে বের হয়ে হওয়ার জন্য প্রয়োজন কাছের মানুষদের প্রতি মনোযোগী হওয়া। তাদের অনুভূতি ও কথার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া। ছোটখাটো বিষয়েও তাদের সঙ্গে আন্তরিকভাবে কথা বলা সম্পর্ককে মজবুত করে। এতে নিজের অহংবোধ কাটে এবং অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার মানসিকতা গড়ে ওঠে। v
সূত্র: ভেরি অয়েল মাইন্ড 
 

আরও পড়ুন

×