ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

ওজন কমান স্বাস্থ্যকর উপায়ে

ওজন কমান স্বাস্থ্যকর উপায়ে

ফাইল ছবি

জান্নাতুন নূর নাঈমা

প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫ | ২৩:০৭

বেশি ওজন এমন একটি রোগ, যা বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা, যেমন– অ্যাজমা, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা, স্ট্রোক এমনকি ক্যান্সারেরও কারণ হতে পারে। দৈনিক সুষম খাবার সঠিক পরিমাণে গ্রহণ, সঠিক জীবনযাত্রা বা লাইফস্টাইল মেনে চলা এবং ব্যায়ামকে যদি সমন্বয় করা যায়, তাহলে খুব সহজেই স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন কমানো সম্ভব।
প্রথমেই সঠিক জীবনযাত্রা এবং খাদ্যাভ্যাসের কথা যদি বলি, তাহলে বলতে হবে খাবার সময়মতো খাওয়া এবং পরিমিত পরিমাণে খাবার গ্রহণের চেষ্টা করতে হবে। খুব বেশি গ্যাপ দিয়ে খাবার খাওয়া যাবে না। অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকা যাবে না। সারাদিনের খাবার গ্রহণকে পাঁচ থেকে ছয় ভাগে ভাগ করে নিতে হবে এবং ঘন ঘন ফাস্টফুড, জাঙ্কফুড, কোল্ড ড্রিংকস, অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার, তেল জাতীয় খাবার, ভাজাপোড়া খাবার, প্রসেসড ফুড, ট্রান্স ফ্যাট, টেস্টিং সল্ট ও অতিরিক্ত লবণাক্ত জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। অতিরিক্ত পরিমাণে চা-কফি গ্রহণের অভ্যাস থাকলে তা থেকে বের হয়ে আসতে হবে এবং খাবারের পরপরই চা-কফি গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে– যেন আমাদের শরীরের আয়রন শোষণ ব্যাহত না হয়। 
খাবারের তালিকায় কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট, যেমন– লাল আটা, লাল চাল, গম বা ভুট্টা জাতীয় খাবারের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে ফাইবার জাতীয় খাবার শাকসবজি ও মৌসুমি টক ফল রাখতে হবে এবং উচ্চমানের প্রোটিন জাতীয় খাবার দুধ, ডিম, মাছ, চর্বিবিহীন সাদা মাংস রাখতে হবে। পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে পানি পানের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।  ক্যালোরিসমৃদ্ধ খাবার অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে। অল্প ক্যালোরির খাবার গ্রহণের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। তবে অবশ্যই যার যার শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী ও রক্তের পরীক্ষা অনুযায়ী খাবার গ্রহণে কিছুটা ভিন্নতা হতে পারে। যেমন যাদের ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স রয়েছে বা যাদের গ্লুটেন ফ্রি ডায়েট মেনে চলতে হয় তাদের ক্ষেত্রে দুধ এবং গম জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। যাদের রক্তে ইউরিক এসিড ও পটাশিয়াম বেশি, কিডনির সমস্যা বা গ্যাসট্রাইটিসের সমস্যা রয়েছে তাদের কিছু খাবার শাকসবজি, ফল বা অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণে কিছুটা নিষেধাজ্ঞা থাকে, সেগুলোর দিকে নজর দিতে হবে। ওজন কমাতে একটি মডিফায়েড এবং ব্যালান্সড খাবার তালিকা মেনে চলার পাশাপাশি শারীরিক ফিটনেসের জন্য ব্যায়াম করার চেষ্টা করতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ে কিছুটা ব্যায়ামের অভ্যাস আমাদের ওজন কমানো যেমন ত্বরান্বিত করে, তেমনি আমাদের শরীরের মেটাবলিজমের হারও বুস্ট আপ করতে সাহায্য করে। ব্যায়ামের মধ্যে যার যার শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী হাঁটা, সাইক্লিং বা জগিং বেছে নিতে পারেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে প্রথমেই অতিরিক্ত পরিমাণে ব্যায়াম করে কেউ যেন আঘাতপ্রাপ্ত না হন। অল্প অল্প করে শুরু করতে হবে এবং ধীরে ধীরে ব্যায়ামের সময় বাড়াতে হবে। ব্যায়াম করতে গিয়ে যদি কোনো শারীরিক অবস্থা খারাপের লক্ষণ প্রকাশ পায় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। 
সর্বোপরি দুপুরে না ঘুমিয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে রাতের ঘুমকে প্রাধান্য দিতে হবে এবং যথাসম্ভব স্ট্রেস থেকে নিজেকে দূরে রাখার চেষ্টা করতে হবে, তাহলেই স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন কমানো সম্ভব হবে। 
লেখক: পুষ্টিবিদ, এভারকেয়ার হাসপাতাল, ঢাকা

আরও পড়ুন

×