মা ও মাটির টান

অলংকরণ:: দেওয়ান আতিকুর রহমান
মুহিতুল ইসলাম মুন্না
প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৫ | ০০:২৭
গ্রামের নাম দিগন্তপুর। এখানকার মানুষের জীবিকা ধান, পাট আর প্রকৃতি। আষাঢ় এলে আশার হাওয়া বইতে শুরু করে। এই এলাকার রহিম শেখ একজন দরিদ্র কৃষক। সারাবছর মাটি চষে, কাজ করে। তার ছোট ছেলে লিয়ন, শহরে পড়ে সরকারি কলেজে। বাবার স্বপ্ন, ‘ছেলেটা যেন হাল চাষ না করে, কলম চাষ করে।’
আষাঢ়ের শুরুর দিনেই চারদিক মেঘে ছেয়ে যায়। রহিম শেখ ক্ষেতে নেমেছে বীজ ছিটাতে, মাথার ওপর গাঢ় মেঘ। সঙ্গে ছেলে লিয়নও এসেছে, বাবার পিছু পিছু।
হঠাৎ মেঘ গর্জে ঝেঁপে নামে বৃষ্টি। কাজ ফেলে সবাই গাছের নিচে, ঘরের ভেতরে। কিন্তু রহিম শেখ তখনও ক্ষেতে। লিয়ন চিৎকার করে– বাবা, চলো। ভিজে যাবে, ঠান্ডা লাগবে।
রহিম হেসে বলে, এ বৃষ্টিই আমার স্বপ্ন রে। এ জলের ওপরেই তোর লেখাপড়ার ভরসা।
সেদিন সন্ধ্যায়, ছাপরা ঘরের মাটিতে পা মুছে ঢুকে লিয়ন চুপচাপ বসে। মা জিজ্ঞেস করে, ‘কি রে, কথা বলছিস না কেন?’
ছেলে বলে, ‘আমার মনে হয়, আমার পড়াশোনা যদি তোমাদের কষ্টকে কমাতে না পারে, তাহলে এ লেখাপড়ারই কী দাম?’
তারপর থেকে লিয়ন কৃষিতে আগ্রহী হয়ে ওঠে।
পড়াশোনা শেষে সে গ্রামে ফিরে আসে। একসঙ্গে ক্ষেতে নামে বাবা-ছেলে, কিন্তু এবার আধুনিক পদ্ধতি নিয়ে।
আষাঢ় আসে প্রতি বছর। কিন্তু সেই বছরের আষাঢ়ই বদলে দিয়েছিল ভবিষ্যৎ একজন কৃষক পিতার আর একজন শিক্ষিত পুত্রের।
আষাঢ় শুধু প্রকৃতির ঋতু নয়, এটি পরিশ্রম, অপেক্ষা আর আশার মাস। পরিবার, মাটি আর শিক্ষা তিনটিকেই সমান ভালোবাসা দিতে শিখলে তবেই আসে সত্যিকারের বদল। v
সুহৃদ তিতুমীর কলেজ
- বিষয় :
- সুহৃদ সমাবেশ