ইরার নীল রেইনকোট

অলংকরণ:: দেওয়ান আতিকুর রহমান
ইয়াসীন সেলিম
প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৫ | ০০:২৭
শ্রাবণের বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা। রোহান আজকে এলো ইরাদের ছাতাটা নিয়ে, যেটি গতদিন পড়াতে এসে বৃষ্টির কারণে নিয়ে গিয়েছিল। ফলে আজকে ভিজতে হয়নি। কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টি। এবার ঢাকায় এত বৃষ্টি ভাবা যায় না!
বৃষ্টি থেমে গেল। ইরা রোহানের হাতে একটা শপিংব্যাগ তুলে দিল। বলল, বাবা এটি আপনাকে দিতে বলেছেন। বাসায় গিয়ে খুলবেন।
রোহান নিতে না চাইলেও তার মামা কষ্ট পাবেন ভেবে নিল। রোহান ইরাকে পড়িয়ে কোনো টাকা নেয় না। আত্মীয়তা ও সম্পর্কের মধ্যে সে টাকা-পয়সা নিয়ে আসতে চায় না।
মেসে গিয়ে ব্যাগটা খুলে রোহান অবাক। নীল রঙের রেইনকোট এবং একটি চিরকুট। যেখানে লেখা, ‘রোহান ভাই, আর বৃষ্টিতে ভিজবেন না। অসুস্থ হলে আমাকে কে পড়াতে আসবে?’
ইতি– ইরা।
রোহান শুধু মুচকি হাসল। পুরো বর্ষায় এ রেইনকোটই তার সঙ্গী হয়ে গেল।
রোহান ইরার ফুফাতো ভাই। ইরা পদার্থবিজ্ঞানে অনার্স করছে, এবার ফাইনাল দেবে। রোহান একই সাবজেক্টে সদ্য পাস করে বেরিয়েছে। চাকরি না হওয়ায় মেসে থেকে টিউশনি করে। ইরার বাবার অনুরোধেই ইরাকে কয়েকদিন ধরে পড়াচ্ছে; ফাইনালে যাতে ভালো সিজিপিএ আসে। রোহানকে ইরার পছন্দ আগে থেকেই। রোহানও জানে। চাকরি না হওয়া পর্যন্ত পুরো বিষয়টা চেপে যাবে দু’জনেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ইরার পরীক্ষা শেষে রোহান গ্রামে যায়। মায়ের অসুস্থতা আর বাবার জমিজমা নিয়ে ঝামেলার জন্য বেশ কিছুদিন পর ফেরে। ইরাদের বাসায় গিয়ে শুনল, ইরার বিয়ে হয়েছে। স্বামীর সঙ্গে দেশের বইরে এখন। হঠাৎ বিয়ে হওয়ায় জানাতে পারেননি বলে ইরার বাবা দুঃখপ্রকাশ করলেন। হঠাৎ মনে হলো রোহান বাড়িতে যাওয়ার সময় রেইনকোট মেসে রেখে গিয়েছিল। এদিকে গ্রামের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় বৃষ্টির পানিতে তার মোবাইলটা ভিজে যায়।
এরপর থেকে আর নেটওয়ার্ক কাজ করে না। গ্রামের বাজারে ঠিক না হওয়ায় ঢাকায় এসে ঠিক করাবে বলে রেখে দিয়েছিল। ইরা হয়তো অনেক চেষ্টা করেছে ফোনে।
রোহান একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরি পায়। বাসা ও গাড়ির ব্যবস্থা হওয়ায় রেইনকোট পরার প্রয়োজন হয় না। বিভিন্ন রঙের অনেক রেইনকোট আছে এখন তার, মাঝেমধ্যে পরে। ইরার দেওয়া সেই প্রিয় নীল রেইনকোট এখন আর পরে না। শুধু আলমারিতে যত্নে সাজিয়ে রেখেছে আজীবনের জন্য। v
সুহৃদ মৌলভীবাজার
- বিষয় :
- সুহৃদ সমাবেশ