ঢাকা মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫

প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন

ইতিহাস ও ঐতিহ্যের পুঠিয়া রাজবাড়ি

ইতিহাস ও ঐতিহ্যের পুঠিয়া রাজবাড়ি

.

সাদিয়া আক্তার শর্মিলা

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫ | ০০:৪১

বাংলার প্রত্নতত্ত্ব ঐতিহ্যের মধ্যে বরেন্দ্র অঞ্চলখ্যাত রাজশাহীর পুঠিয়া রাজবাড়ি অন্যতম। বাড়িটি হয়ে উঠেছে রাজশাহীর অনন্য পর্যটনকেন্দ্র। কেবল রাজশাহী নয়, দেশ-বিদেশের পর্যটকরাও প্রতিদিন ছুটে আসছেন বাড়িটির চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্যের টানে। শুধু সৌন্দর্য নয়, এ অঞ্চলের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের গুরুত্ব বিবেচনায় অনেকেই স্থানটিকে বেছে নেন ভ্রমণ ও  গবেষণার ক্যানভাস হিসেবে। এক সময় স্থানটি মহারানী হেমন্ত কুমারীর বাসভবন বা পাঁচআনি জমিদারবাড়ি নামে পরিচিত ছিল। ঢাকা থেকে দূরত্ব প্রায় ২২০ কিলোমিটার। রাজবাড়ির চত্বরটি বিস্তৃত ৪ দশমিক ৩১ একর আয়তনের জমির ওপর। ২০২১ সালের ২০ নভেম্বর সরকারিভাবে ইতিহাস ও ঐতিহ্যসমৃদ্ধ রাজবাড়িটি জাদুঘর হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। তাই পুঠিয়া রাজবাড়িটি এখন জনপ্রিয় ও তাৎপর্যপূর্ণ পর্যটনকেন্দ্রের পাশাপাশি একটি অনন্য জাদুঘরও। এর আশপাশে ছয় একর আয়তনের ছয়টি ঐতিহাসিক দিঘি রয়েছে। রাজাদের স্মৃতিবিজড়িত বড় গোবিন্দ মন্দির, ছোট গোবিন্দ মন্দির, বড় শিবমন্দির, ছোট শিবমন্দির, ছোট আহ্নিকমন্দির, জগদ্ধাত্রীমন্দির, দোলমন্দির, রথমন্দির, গোপালমন্দির, সালামের মঠ, খিতিশচন্দ্রের মঠ, কেষ্ট খেপার মঠ, হাওয়া খানাসহ ১৫টি প্রাচীন স্থাপনার দেখা মিলবে এই রাজবাড়ির চারপাশে। কথিত আছে, সতেরো শতকের শুরুর দিকে জনৈক নীলাম্বর মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে ‘রাজা’ উপাধি লাভের পর পুঠিয়া রাজবাড়ি রূপে পরিচিতি লাভ করে। 
রাজবাড়িতে ঘুরতে আসা স্থানীয় তরুণ ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই এখানে আমাদের পদচারণা। কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে পুঠিয়ার এই রাজবাড়ি। দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিনই মানুষ এখানে আসেন। এটি আমাদের গর্বের, যা পুঠিয়াকে সমৃদ্ধ করেছে।’
সময়ের আবর্তে জমিদারি বিলুপ্ত হলেও প্রাসাদ, মন্দির ও অন্যান্য স্থাপনা এখনও টিকে রয়েছে। অপরূপ এ প্রাসাদটি ১৮৯৫ সালে মহারানী হেমন্ত কুমারী দেবী তাঁর শাশুড়ি মহারানী শরৎ সুন্দরী দেবীর সম্মানে ইন্দো-ইউরোপীয় স্থাপত্য রীতিতে নির্মাণ করেছিলেন। অপূর্ব সব পোড়ামাটির ফলকের কারুকাজ, রানীর স্নানঘাট, অন্দর মহলসহ রাজবাড়ি প্রাঙ্গণ অলংকরণ, চিত্রকর্ম চমৎকার নির্মাণশৈলীর পরিচয় বহন করে। রাজবাড়ির সমতল ছাদে লোহার বিম, কাঠের বর্গা এবং টালি ব্যবহৃত হয়েছে। 
নিরাপত্তার জন্য বাড়ির চারপাশে পরিখা খনন করা হয়েছিল। বর্তমানে পর্যটকরা ২০ টাকা মূল্যের টিকিট কেটে ভেতরে প্রবেশ করেন। রাজবাড়িটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা করছে। রাজবাড়িটি এখন জাদুঘর হিসেবে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। v
সুহৃদ, পুঠিয়া (রাজশাহী)

আরও পড়ুন

×