ঢাকা মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫

পরিবেশ সুরক্ষায় সচেতনতা

পরিবেশ সুরক্ষায় সচেতনতা

নওগাঁ শহরের চকবাড়িয়া সিও অফিস মোড়ে সুহৃদ সমাবেশের আয়োজনে মানববন্ধনে সুহৃদরা

কাজী কামাল হোসেন

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫ | ০০:৪৩

জীববৈচিত্র্য, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলাসহ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপদ পৃথিবীর জন্য পরিবেশ সুরক্ষা অপরিহার্য। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ‘রক্ষা করি পরিবেশ, গড়ি সুন্দর বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যে সুহৃদ সমাবেশ শুরু করেছে ‘পরিবেশ সুরক্ষায় সচেতনতা’ কার্যক্রম। কর্মসূচির আওতায় ৬ জুলাই বিকেলে নওগাঁয় সুহৃদরা আয়োজন করে মানববন্ধন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম।


‘প্রকৃতির প্রতি যত্ন নাও, সে তোমাকে ভালোবাসবে। উপেক্ষা কর, সে রুষ্ট হবে।’ এই প্রবাদ এখন আর কাব্য নয়, হয়ে উঠেছে কঠিন বাস্তবতা। নওগাঁ শহরে নিরুপদ্রব দুপুরে হঠাৎ করেই যেন বদলে গেল বাতাসের সুর। শহরের সিও অফিস চকবাড়িয়া এলাকার প্রশিকা বিদ্যানিকেতন প্রাঙ্গণে জড়ো হতে শুরু করেন সুহৃদরা। কারও হাতে ঝাঁটা, কারও ব্যানার, আবার কারও হাতে ঝুড়ি। চোখেমুখে প্রত্যয় প্রকৃতি সুরক্ষার আহ্বান নিয়ে নেমে এসেছেন তারা। নিঃশব্দে নিরুচ্চার তবে হৃদয় থেকে উৎসারিত এক প্রতীকী আন্দোলন গড়ে তোলার প্রবল প্রচেষ্টা। পরিবেশ সুরক্ষায় নানা কর্মসূচি আজ তাদের প্রসঙ্গ। 
সচেতনতায় মানববন্ধন
ব্যস্ত শহরের কোলাহলের মাঝে এক মুহূর্তের জন্য থমকে যায় সময়। যেন শহরও কৃতজ্ঞতায় মাথা ঝুঁকিয়ে বলে তোমরা সত্যিই ভিন্ন কেউ। পরিবেশ সুরক্ষায় প্রাণবন্ত কর্মসূচির নেতৃত্ব দেন সুহৃদ সমাবেশের নওগাঁর সভাপতি মৌদুদুর রহমান কল্লোল। আয়োজন সমন্বয় করেন সুহৃদ সমন্বয়ক কাজী কামাল হোসেন। পরিবেশের প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় অংশ নেন সহসভাপতি মুরাদ হাসান, সুবল চন্দ্র মণ্ডল, পুতুল রানী ব্যানার্জি এবং সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী চন্দন কুমার দেব। চন্দন কুমার দেব বলেন, নদী শুকিয়ে যায়, গাছ হারিয়ে যায়, বাতাস বিষিয়ে ওঠে এই গল্প আমাদের নয়, আমরা লিখতে চাই ভিন্ন ইতিহাস।’
এই আয়োজনে আশার উৎস ছিলেন প্রশিকা বিদ্যানিকেতনের শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা। শিক্ষক উজ্জ্বল কুমার, মুনিরা আক্তার, রুমা পারভীন, খাইরুন নাহার খুশি, তনুকা আক্তার, ফারজানা আক্তার তাদের চোখে ছিল আগামীর স্বপ্ন। শিশুরাও এ কাজে সহযোগিতা করেছে প্রাণ খোলে। এ যেন এক জীবন্ত পাঠশালা, যেখানে শিক্ষার্থীরা পাঠ নিচ্ছে সচেতনতার, দায়িত্ববোধের এবং সহমর্মিতার।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান
মানববন্ধনের পর হঠাৎ করেই দেখা গেল দৃশ্যপটের পরিবর্তন। মানুষগুলো এবার তুলে নিল ঝাড়ু ও ঝুড়ি। কেউ রাস্তা ঝাড়ছেন, কেউ ডাস্টবিনে ফেলছেন ময়লা। পথচারীদের অনুরোধ করা হচ্ছে ‘আপনার একটুখানি সচেতনতা অনেক দূষণ বাঁচাতে পারে।’
সদস্যদের কেউ কেউ নিজের হাতেই আবর্জনা তুলে ফেলেন ডাস্টবিনে, যেন কথাকে কাজে রূপ দেওয়ার এক নিঃশব্দ ঘোষণা। শিশুরা দেখছে আর শিখছে। ‘আমরা নদীর ওপর শহর গড়েছি, বন উজাড় করে বাসাবাড়ি বানিয়েছি। অথচ ভুলে গেছি এই গাছ, এই পানি, এই মাটি ছাড়া আমরা কেউই টিকে থাকতে পারব না। এখনই যদি সচেতন না হই, হয়তো আমরা আমাদের সন্তানদের জন্য একটি বিষাক্ত পৃথিবী রেখে যাব।’ তারা জানান, পরিবেশদূষণের সবচেয়ে বড় কারণ প্লাস্টিকের অব্যবস্থাপনা, সচেতনতার অভাব এবং নাগরিক দায়িত্বে গাফিলতি। আমাদের সচেতন হতে হবে। পরিবেশ রক্ষা করতে হবে।
বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি
কর্মসূচির অন্যতম পর্ব হচ্ছে বৃক্ষরোপণ। স্কুলভিত্তিক সচেতনতামূলক সেমিনার, শহরের বিভিন্ন এলাকায় পরিচ্ছন্নতা অভিযান, গাছের চারা রোপণ এবং পরিবেশবান্ধব পণ্য ব্যবহার ও কাজে মানুষকে সচেতন করা। পরিবেশ রক্ষার অন্যতম নিয়ামক গাছ। তাই দেশজুড়ে সুহৃদদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নওগাঁর সুহৃদরাও বৃক্ষরোপণ শুরু করেছেন। এই কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন স্থানে বনজ, ফলদ ও ঔষধি গাছের চারা রোপণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। 
আসুন, নিঃশব্দে নিজের কাছে নিজেকে প্রশ্ন করি– ‘আমি কী করছি পরিবেশ রক্ষার জন্য, আমরা কি চারপাশ পরিষ্কার রাখছি, বৃক্ষরোপণ করছি পর্যাপ্ত, প্লাস্টিক ব্যবহারে সংযমি হয়েছি? এমন প্রশ্নের উত্তর যদি হয় ‘না’ তবে আজ থেকেই শুরু করি।’ এমন আহ্বানের মধ্য দিয়ে শেষ হয় আয়োজন। v
সমন্বয়ক, সুহৃদ সমাবেশ, নওগাঁ

আরও পড়ুন

×