ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

মানি লন্ডারিং কী এবং কীভাবে হয়

মানি লন্ডারিং কী  এবং কীভাবে হয়

প্রতীকী ছবি

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৩:৩৫ | আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১০:২৪

অপরাধমূলক কার্যকলাপ থেকে প্রাপ্ত অর্থের উৎস গোপন বা গোপন করার চেষ্টা করার প্রক্রিয়া হিসেবে বা বৈধ বা অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ বা সম্পত্তি বিদেশে পাচার করার কার্যকলাপকে সাধারণভাবে ‘মানি লন্ডারিং’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। অপরাধের অর্থ বিদেশ থেকে বাংলাদেশে পাঠানো বা আনা যদি তার অবৈধ উৎস লুকানোর উদ্দেশ্যে করা হয়, তা-ও মানি লন্ডারিংয়ের অন্তর্ভুক্ত হয়।

বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বা বিএফআইইউ হলো বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সংস্থা, যা মানি লন্ডারিং, সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন এবং গণবিধ্বংসী অস্ত্রের প্রসারণে অর্থায়ন প্রতিরোধে কাজ করে। বিএফআইইউ সন্দেহজনক লেনদেন এবং সন্দেহজনক কার্যকলাপ রিপোর্ট (এসটিআর/এসএআর), নগদ লেনদেন রিপোর্ট (সিটিআর) এবং মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন সম্পর্কিত তথ্য রিপোর্টিং সংস্থা ও অন্যান্য উৎস থেকে গ্রহণ করে। এ ইউনিটের মূল কাজ হলো প্রাপ্ত রিপোর্ট বিশ্লেষণ করা এবং মানি লন্ডারিং, সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন বা গণবিধ্বংসী অস্ত্রের প্রসারণের সন্দেহ থাকলে সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কাছে গোয়েন্দা প্রতিবেদন পাঠানো, যাতে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯ ও সংশ্লিষ্ট বিধিমালার অধীনে তদন্ত এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া যায়।

তিন ধাপে হয় মানি লন্ডারিং

মানি লন্ডারিং প্রক্রিয়া সাধারণত তিনটি ধাপে সম্পন্ন হয়: স্থানান্তর, স্তরায়ণ এবং একীকরণ। স্থানান্তর হলো প্রথম ধাপ, যেখানে অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ বৈধ আর্থিক ব্যবস্থায় প্রাথমিকভাবে জমা বা প্রবেশ করানো হয়। স্তরায়ণ হলো অর্থের উৎস গোপন করার প্রক্রিয়া, যা একাধিক লেনদেনের মাধ্যমে করা হয়, যার মধ্যে বেশির ভাগই অপ্রয়োজনীয় এবং হিসাবনিকাশের কারসাজি। কখনও কখনও স্তরায়ণ লেনদেনের কাঠামোগত পদ্ধতির মাধ্যমে হয়। একীকরণ হলো চূড়ান্ত ধাপ। এ ধাপে বৈধ মনে হওয়া অর্থ তখন অ্যাকাউন্ট থেকে তুলে নেওয়া হয় এবং অপরাধীরা তাদের উদ্দেশ্য অনুযায়ী এর ব্যবহার করে, যা ওই অর্থকে দৃশ্যত বৈধ করে তোলে।

অর্থ পাচার কী
মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অর্থ পাচারের সংজ্ঞা রয়েছে। দেশের বিদ্যমান বিধি ও আইন লঙ্ঘন করে অর্থ বা সম্পত্তি দেশের বাইরে স্থানান্তর করা বা ধারণ করা অর্থ পাচারের একটি ধরন। দেশের স্বার্থে বা দেশে ফেরত আসার প্রাপ্য অর্থ বা সম্পত্তি বিদেশ থেকে ফেরত না আনা এবং বিদেশ থেকে প্রকৃত পাওনা দেশে না আনা বা প্রকৃত পাওনার অতিরিক্ত অর্থ বিদেশে পরিশোধ করাও অর্থ পাচার। 

কারা তদন্ত করে
মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে ৬টি সংস্থাকে মানি লন্ডারিং অপরাধের তদন্ত করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এসব সংস্থা হলো– অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বাংলাদেশ পুলিশ, দুর্নীতি দমন কমিশন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। সংস্থাগুলো তাদের নিজ নিজ এখতিয়ারভুক্ত মানি লন্ডারিং সম্পর্কিত অপরাধের তদন্ত করে। মুদ্রা জালিয়াতি, দলিল ও নথি জালিয়াতি, চাঁদাবাজি, প্রতারণা, জালিয়াতি, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা, অপহরণ, অবৈধ আটক এবং জিম্মি করা, হত্যা, গুরুতর শারীরিক আঘাত, নারী ও শিশু পাচার, চুরি, ডাকাতি বা দস্যুতা, বিমান ছিনতাই, মানব পাচার, যৌতুক, মেধাস্বত্ব ও অধিকার লঙ্ঘন, সন্ত্রাসবাদ ও সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রমের অর্থায়ন, শিরোনাম লঙ্ঘন করে পণ্য নকলকরণ বা উৎপাদন, যৌন শোষণ, সংগঠিত অপরাধ ও সংগঠিত অপরাধী দলের সঙ্গে অংশগ্রহণ, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি ও ঘুষ, কর সম্পর্কিত অপরাধ, মূলধন বাজার সম্পর্কিত অপরাধ, মাদকদ্রব্য এবং নেশাজনক পদার্থের অবৈধ ব্যবসা, চুরি এবং অন্যান্য পণ্যের অবৈধ ব্যবসা, কালোবাজারি, দেশি ও বিদেশি মুদ্রা পাচার, শুল্ক এবং আবগারি শুল্ক সম্পর্কিত অপরাধ এবং পরিবেশ সম্পর্কিত অপরাধ। 


শাস্তি ও জরিমানা
মানি লন্ডারিংসংক্রান্ত অপরাধে ব্যক্তির ৪ থেকে ১২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। অপরাধের সঙ্গে জড়িত সম্পত্তির দ্বিগুণ মূল্য বা ১০ লাখ টাকার মধ্যে যা বেশি হবে, সেই পরিমাণ জরিমানা এবং জরিমানা পরিশোধে ব্যর্থ হলে অতিরিক্ত কারাদণ্ডের বিধান হয়েছে। এছাড়া আদালত দোষী ব্যক্তির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে তা রাষ্ট্রের অনুকূলে দিতে আদেশ দিতে পারে। প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে অপরাধের সঙ্গে জরিমানার পরিমাণ জড়িত সম্পত্তির দ্বিগুণ মূল্য বা ২০ লাখ টাকার মধ্যে যা বেশি হবে এবং নিবন্ধন বাতিল হবে। জরিমানা পরিশোধে ব্যর্থ হলে প্রতিষ্ঠানের মালিক, চেয়ারম্যান বা পরিচালকের অতিরিক্ত কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। 

আরও পড়ুন

×