সুদহার কমানোর দিকে হাঁটছে বিশ্ব অর্থনীতি

.
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২২:২৭
বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো কয়েক বছর ধরে তাদের নীতি সুদহার বাড়িয়ে আসছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা। কভিড মহামারির পর অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের সময় সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাহত হয় এবং ভোক্তা চাহিদা বেড়ে যায়। এর ফলে বাড়ে মূল্যস্ফীতি। কভিড সংক্রমণ কমে যাওয়ার পর অর্থনীতিতে যখন পুনরুদ্ধার শুরু হয়, তখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আবার একই পরিস্থিতি তৈরি করে। তখন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং অর্থনীতি স্থিতিশীল করতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ, ব্যাংক অব ইংল্যান্ড, ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ বিশ্বের অনেক কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বাড়ায়।
এখন আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সুদের হার কমাচ্ছে। কমানোর প্রবণতা এবং ইঙ্গিত শুরু হয় এ বছরের শুরুতেই। কেননা মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা কমে আসতে থাকায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে নজর বাড়াচ্ছে বিভিন্ন দেশ। ফলে তারা সুদের হার কমাচ্ছে, যার উদ্দেশ্য ঋণগ্রহণ সহজ করা এবং বিনিয়োগ বাড়ানো, যাতে অর্থনীতির গতি বাড়ে।
সর্বশেষ গত ১৮ সেপ্টেম্বর ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ কমিয়ে ৪ দশমকি ৭৫ থেকে ৫ শতাংশে মধ্যে নিয়ে এসেছে। ২০২০ সালের পর প্রথমবার সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত নিল ফেড, যা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় । মূল্যস্ফীতি কমে আসায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফেড এখন শ্রমবাজার এবং সামগ্রিক অর্থনীতিকে সুরক্ষা দেওয়ার দিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
অবশ্য ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্তে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কিছু অর্থনীতিবিদ মনে করেন, মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসায় এ হার কমানো যুক্তিযুক্ত। কারণ শ্রমবাজার ও অর্থনীতি দুর্বল হচ্ছে। তারা আশা করছেন, এ সিদ্ধান্ত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে সমর্থন করবে। তবে অন্যরা বলছেন, এত বড় হারে কমানো প্রয়োজন ছিল না এবং কেবল জরুরি অবস্থাতেই তা করা উচিত। সুদের হার কমানোর জন্য মূল্যস্ফীতির গতিবিধিতে সামগ্রিক উন্নতি দেখা প্রয়োজন, শুধু এক মাসের ভালো ফলাফলে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়। বিভিন্ন খবরে বলা হয়েছে, ফেডারেল রিজার্ভ বছর শেষে আরও একবার সুদহার কমাতে পারে। কেননা সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ধীরে ধীরে কমছে। অন্যদিকে তাদের মূল্যস্ফীতি ২ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি নেমে এসেছে।
আরও যারা কমিয়েছে
ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক (ইসিবি) চলতি মাসে সুদের হার কমিয়েছে, যা চলতি বছরে দ্বিতীয়বার। ইসিবি সর্বশেষ ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়েছে। তারা মনে করছে, মূল্যস্ফীতি কমেছে এবং বাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এ পরিবর্তন দরকার ছিল। চীনও সাম্প্রতিককালে সুদের হার কমিয়েছে। কারণ তারা চায় দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়াতে এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ত্বরান্বিত করতে। চীনের অর্থনীতি কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ায়, সরকার বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে এবং বাজারকে সক্রিয় করতে এ পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটি।
কানাডার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকবার সুদের হার কমিয়েছে। চলতি মাস পর্যন্ত, ব্যাংক অব কানাডা তাদের মূল সুদের হার ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ পর্যন্ত নামিয়েছে। এটি ২০২৪ সালে তৃতীয়বার সুদের হার কমানোর ঘটনা। সামগ্রিকভাবে সে দেশ মূল্যস্ফীতি কমার প্রবণতায় রয়েছে।
ব্যাংক অব ইংল্যান্ড সম্প্রতি ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে সুদের হার ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নামিয়েছে। এটি ছিল গত চার বছরের মধ্যে প্রথম সুদহার কমানোর পদক্ষেপ। প্রধান কারণ হিসেবে যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, মূল্যস্ফীতির চাপ কিছুটা কমেছে এবং মূল্যস্ফীতি ২ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পৌঁছেছে। তবে ব্যাংকটি সতর্ক করেছে যে, দ্রুত সুদহার কমানোর ফলে মূল্যস্ফীতি পুনরায় বাড়তে পারে। তাই তারা ধীরে ধীরে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। গত জুলাই ও আগস্ট মাসে সে দেশের মূল্যস্ফীতি ২ দশমিক ২ শতাংশে স্থির ছিল, যা এ সিদ্ধান্তের পেছনে ভূমিকা রেখেছে।
অন্যান্য দেশও একই পথে হাঁটছে। বেশ কিছু উন্নয়নশীল দেশ, যেমন ব্রাজিল এবং চিলি, তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে সুদের হার কমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। মূলত, উচ্চ সুদের হার ধরে রাখার ফলে অর্থনৈতিক কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছিল। অর্থনীতিকে উজ্জীবিত করতে এখন আবার সুদের হার কমানো হচ্ছে।
- বিষয় :
- সুদ