ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে পরিবর্তন আসছে

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে পরিবর্তন আসছে

কোলাজ

মেসবাহুল হক

প্রকাশ: ৩০ মে ২০২৫ | ২৩:৪৪ | আপডেট: ৩১ মে ২০২৫ | ০৭:২৬

জাতীয় বাজেট হলো সরকারের এক বছরের আর্থিক পরিকল্পনা। আগামী ২ জুন সোমবার­­ অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে, ­যা কার্যকর হবে ১ জুলাই থেকে। সমৃদ্ধির এবারের আয়োজন সাজানো হয়েছে বাজেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে

অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি নতুনভাবে সাজানোর পরিকল্পনা করছে। মূলত এসব কর্মসূচিতে স্বচ্ছতা আনতে এই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এতে উপকারভোগীর সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ বাড়ানো হবে, তবে বিদ্যমান প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কর্মসূচি বাতিল হতে পারে।

বর্তমানে যেখানে ১৪০টি কর্মসূচি আছে, সেখানে নতুন ব্যবস্থায় ১০০টির নিচে নামিয়ে আনা হবে। এর মধ্যে ৩৮টি কর্মসূচিকে ‘দরিদ্রবান্ধব’ হিসেবে ধরা হবে, যা ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীর পরামর্শ অনুযায়ী করা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এই ৩৮টি কর্মসূচির সহায়তা মূলত অতিদরিদ্রের জন্য নির্ধারিত থাকবে।

মূলত নিম্ন আয়ের মানুষকে সহায়তা দিতে সামাজিক কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়। রাজনৈতিক সরকারগুলো বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানোর জন্য সামঞ্জস্যহীন অনেক কর্মসূচি এর আওতায় নিয়ে আসে। সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়; কিন্তু সামাজিক নিরাপত্তার অন্তর্ভুক্ত খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো অবসরভোগী সরকারি কর্মচারীর পেনশন, কৃষি খাতে ভর্তুকি ও সঞ্চয়পত্রের সুদ পরিশোধ। এমন ২১টি কর্মসূচিকে গরিব মানুষের সুরক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে মনে করছে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণে গঠিত টাস্কফোর্স। এসব কর্মসূচিতে চলতি অর্থবছর বরাদ্দ রয়েছে ৭২ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা; যা এ খাতে মোট বরাদ্দের ৫৩ শতাংশ।

সরকারের জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্রের (এনএসএসএস) সঙ্গে এ কর্মসূচিগুলোর মিলও নেই। তাই সামঞ্জস্যহীন কর্মসূচি বাদ দিয়ে প্রকৃত অর্থে সামাজিক সুরক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানোর সুপারিশ করে টাস্কফোর্স। গত ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত বৈষম্যহীন টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় সম্পদ আহরণবিষয়ক টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে এসব সুপারিশ করা হয়। শুধু টাস্কফোর্সই নয়, বিভিন্ন দাতা সংস্থা, দেশি-বিদেশি গবেষণা প্রতিষ্ঠানসহ অর্থনীতিবিদরা বহুদিন থেকে সামাজিক সুরক্ষা খাতকে ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দিয়ে আসছে। এ পরামর্শের আলোকে এ খাতে ব্যাপক পরিবর্তন আনছে সরকার।

অর্থ বিভাগ বলছে, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অসুপাতে সামাজিক নিরাপত্তায় বরাদ্দ বেশি দেখানোর জন্য তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার প্রতি অর্থবছরে এ খাতের বরাদ্দ ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখিয়ে আসছিল। বর্তমানে ২৬টি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১৪০টি কর্মসূচির মাধ্যমে সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এ জন্য চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ১ লাখ ৩৬ হাজার ২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে, যা জাতীয় বাজেটের ১৭ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ।

২০২৫-২৬ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ১০০টির নিচে কর্মসূচিতে সরকার প্রায় ৯৫ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে পারে, যা মোট বাজেটের ১২ দশমিক ১৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দ ছিল ৯০ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা, যা ছিল মোট বাজেটের ১১ দশমিক ৩৫ শতাংশ। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অন্য কর্মসূচিগুলোও আগামী বাজেটেও অন্য খাতে বহাল রাখা হবে। সেগুলো একসঙ্গে যোগ করলে এ খাতে সর্বমোট বরাদ্দ দাঁড়াবে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা।
কিছু কর্মসূচিতে ভাতা ও উপকারভোগী বাড়ছে

নগদ সহায়তা কিছু কর্মসূচির অধীনে উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি আগামী অর্থবছরে মাসিক ভাতা মাত্র ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হবে। অতিদরিদ্রদের জন্য ৩৮টি প্রকল্পে সরকার আগামী বাজেটে প্রায় ৫২ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে পারে।

এ কর্মসূচিগুলোর মধ্যে ভাতার দিক থেকে সবচেয়ে বড় পরিসর বয়স্কভাতা কর্মসূচি, যা ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে চালু হয়েছিল দরিদ্র এবং আয়ক্ষমতা হারানো বৃদ্ধদের সামাজিক সুরক্ষা দেওয়ার জন্য। এই কর্মসূচির আওতায় আগামী অর্থবছরে মাসিক ভাতা ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৬৫০ টাকা করা হবে। ২০২৩ সালে এই ভাতা ছিল ৬০০ টাকা।

উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যেও যা বাড়ানো হয়নি। পরবর্তী বাজেটে বয়স্কভাতা কর্মসূচিতে নতুন করে ১ লাখ উপকারভোগী যুক্ত করা হবে। বর্তমানে এ কর্মসূচির উপকারভোগীর সংখ্যা ৬০ লাখ ১ হাজার।

বিধবা, স্বামী পরিত্যক্ত ও দুস্থ নারীদের মাসিক ভাতা আগামী বাজেটে ১০০ টাকা বাড়িয়ে ৬৫০ টাকা করা হবে এবং নতুন ১ লাখ ২৫ হাজার নারী এতে যুক্ত হবেন। বর্তমানে উপকারভোগীর সংখ্যা ২৭ লাখ ৭৫ হাজার। শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের মাসিক ভাতা ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৯০০ টাকা করা হবে। এ ছাড়া ২ লাখ নতুন উপকারভোগী যুক্ত হবেন। অন্যদিকে বেদে, হিজড়া ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীরা মাসে ৬০০ টাকার পরিবর্তে ৬৫০ টাকা করে ভাতা পেতে পারেন। মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচিতে মাসিক ভাতা ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৮৫০ টাকা করা হবে। এই কর্মসূচির উপকারভোগীর সংখ্যা ১৬ লাখ ৫০ হাজার থেকে বেড়ে ১৭ লাখ ৭১ হাজারে উন্নীত হতে পারে।

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় আগামী অর্থবছরে সরকার ৫৫ লাখ পরিবারকে স্বল্প মূল্যে চাল দেওয়ার পরিকল্পনা করছে, যেখানে ১০ লাখ টন চাল বিতরণ করা হতে পারে। চলতি অর্থবছরে ৫০ লাখ পরিবারের জন্য ৭ লাখ ৬০ হাজার টন চাল বরাদ্দ ছিল। পরিকল্পনা অনুসারে আগামী বছর পরিবারগুলো ৫ মাসের পরিবর্তে ৬ মাস ধরে ৩০ কেজি চাল স্বল্পমূল্যে কিনতে পারবে। 

অতিদারিদ্র্যপীড়িতদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচিতে উপকারভোগীরা বছরে সর্বোচ্চ ৪০ দিন দৈনিক ২০০ টাকা মজুরি পান। আগামী বাজেটে দৈনিক মজুরি ২৫০ টাকায় উন্নীত করা হতে পারে এবং উপকারভোগীর সংখ্যা ৫ লাখ ১৮ হাজার থেকে বেড়ে ৬ লাখে পৌঁছাতে পারে।

আরও পড়ুন

×