ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

জেমির হৃদয়ে এখনও বাংলাদেশ

জেমির হৃদয়ে এখনও বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক, লন্ডন থেকে

প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১৩ আগস্ট ২০২২ | ০০:২৮

বার্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমস কাভার করতে আসার পর থেকেই জেমি ডের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। সরাসরি সাক্ষাৎকার নেওয়ার কথা থাকলেও সুইন্ডন টাউনের সহকারী কোচের দায়িত্ব পালন করা জেমি সময় দিতে পারেননি। বার্মিংহাম ও লন্ডন শহর থেকে প্রায় ৮ ঘণ্টার দূরত্বে থাকায় শেষ পর্যন্ত মোবাইল ফোনে কথা বলার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। গত বছরের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের কোচের পদ হারানো জেমি ডে ভোলেননি জামাল ভূঁইয়াদের। সময় পেলেই বাংলাদেশের খেলার হাইলাইটস দেখেন। র‌্যাঙ্কিংয়ে তলানির দিকে যাওয়া বাংলাদেশ দল নিয়ে যেমন হতাশা, তেমনি করে সুযোগ পেলে আবারও কাজ করতে চান বাংলাদেশের ফুটবলে।

সমকাল: কেমন কাটছে নতুন চাকরিতে?

জেমি: খুবই ভালো আছি। আমি এখন সুইন্ডন টাউন দলের সহকারী কোচের দায়িত্ব পালন করছি। এই ক্লাবটি লিগ টুতে খেলে। এখানে কয়েক মাসে সবার সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক হয়েছে। আমি খুব উপভোগ করছি।

সমকাল: আমি যতদূর জানি বাফুফের বিরুদ্ধে আপনি ফিফার কাছে অভিযোগ দাখিল করেছেন।

জেমি: হ্যাঁ। আমার সঙ্গে যা করা হয়েছে, সেটা তো ঠিক হয়নি। আলোচনাতেও কোনো সমাধান হয়নি। তাই উপায় না দেখে আমি ফিফার কাছে গিয়েছি। এখন বিশ্বফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাই সিদ্ধান্ত দেবে।

সমকাল: অনেকেই মনে করছেন আপনার হাত ধরেই বাংলাদেশের ফুটবলে কিছুটা সফলতা এসেছিল। শেষ পর্যন্ত দল নিয়ে আপনার পরীক্ষা-নিরীক্ষা পছন্দ হয়নি ফেডারেশনের। তাই আপনাকে অপসারণ করেছিল।

জেমি: আমি বিশ্বাস করি, আমার সময়ে শক্তিশালী একটা জাতীয় দল হওয়ার পথে ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু শুরুর ধারাটা ধরে রাখতে হলে আপনাকে অনেক কিছুই করতে হয়। আমার লক্ষ্য ছিল ভবিষ্যতের জন্য দলকে সাজানো। সে জন্যই তো আমি পরীক্ষা করেছি। আর এটি কিন্তু প্রেসিডেন্টও জানেন।

সমকাল: কোন বিষয়ে বাফুফে আপনার ওপর নাখোশ ছিল?

জেমি: এটা ফুটবল ফেডারেশনের কর্মকর্তাদেরই জিজ্ঞেস করেন। আমি তো বলতে পারব না। কারণ, আমি কোনো কারণ খুঁজে পাইনি যে আমাকে সরিয়ে দেওয়া হবে।

সমকাল: গত বছর বাংলাদেশ ছেড়েছেন, এখন অন্য একটি দলের সঙ্গে আছেন। বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের সঙ্গে কি যোগাযোগ আছে?

জেমি: আমি এখনও বাংলাদেশের ফুটবলারদের সঙ্গে কথা বলি। তাদের সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করি। শুধু ফুটবলারদের সঙ্গে কথাই বলি না, আমি বাংলাদেশের খেলাগুলোর হাইলাইটস দেখি।

সমকাল: নিশ্চয়ই বাংলাদেশকে মিস করছেন?

জেমি: অবশ্যই। জাতীয় দলে কাজ করতে গিয়ে বাংলাদেশে আমার অনেক বন্ধু হয়েছে। তাদের মিস করার সঙ্গে পুরো বাংলাদেশকেই মিস করছি। আমি বাংলাদেশে কয়েক বছর ছিলাম। বলতে পারেন সেটি আমার দ্বিতীয় বাড়ি। তবে যখন ছিলাম, তখন তো প্রথম বাড়িই ছিল বাংলাদেশ। সেখানে আমার অনেক সুখকর স্মৃতি আছে। স্মৃতিগুলো তো চাইলেই মুছে যাবে না। কারণ, বাংলাদেশ আছে আমার হৃদয়ে।

সমকাল: বর্তমান বাংলাদেশ দল নিয়ে আপনার অভিমত কী?

জেমি: সত্যি বলতে কী, আমি এখন নতুন একটা দলের সঙ্গে যুক্ত আছি। তাই বাংলাদেশের খেলা দেখার মতো সময় খুব একটা পাইনি। দলের পারফরম্যান্স নিয়েও মন্তব্য করা সমীচীন নয়। তবে আমি দূরে থাকলেও সবসময় বাংলাদেশের জন্য শুভকামনা থাকবে। দলের প্রতি আমার ভালোবাসা এবং সমর্থন সবসময় ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। যে কোচই আসুক না কেন, বাংলাদেশ যেন ভালো করে, সেই কামনা করছি।

সমকাল: যদি কখনও বাংলাদেশে কাজ করার প্রস্তাব আসে? যদি সেটা হয় ক্লাব থেকে?

জেমি: আমি মনে করি, একদিন আবারও বাংলাদেশে কাজ করব। আমি চাই লিগে কোনো ক্লাবে কাজ করতে। চ্যালেঞ্জ নিয়ে দলকে সাফল্য এনে দিতে। এমনকি আমি আবারও বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের কোচ হতে চাই। বাংলাদেশ না হলে অন্য কোনো জাতীয় দলেরও কোচ হওয়ার ইচ্ছা আছে।

সমকাল: দেনা-পাওনা নিয়ে তো আপনার সঙ্গে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে?

জেমি: হ্যাঁ। আপনি ঠিক বলেছেন। বাফুফের সঙ্গে আমার একটু দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। ভবিষ্যতে আমি বাংলাদেশ দলের কোচ হব ভিন্ন সভাপতি এবং ভিন্ন কমিটির অধীনে।

সমকাল: তার মানে আপনি বর্তমান কমিটির অধীনে কাজ করবেন না?

জেমি: সেটা সম্ভব নয়। আমি আপনাকে সবই বলেছি। আসলে বর্তমান কমিটি আমার সঙ্গে এমনটা না করলেও পারত।

সমকাল: তাহলে আপনি মনে করেন বিদায়টা আরেকটু ভালো হতে পারত?

জেমি: সুন্দর সমাপ্তি হতে পারত। আপনি দেখেছেন, আমি আসার পর প্রথমে যে কাজ করেছি, ছেলেদের ফিটনেস লেভেলটা বাড়িয়েছি। এই দলটি তো নব্বই মিনিট পর্যন্ত টানা খেলতে পারত না। আমার দীর্ঘ পরিশ্রমে তারা একদমে পুরো ম্যাচ খেলতে পারছে। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে আমাকে বিদায় নিতে হয়েছে। একজন কোচের চাকরি কখনোই চিরস্থায়ী নয়। আজকে এখানে তো কালকে ওখানে। এটাই ফুটবল। কিন্তু বাফুফের সঙ্গে আমার শেষটা হতে পারত মধুর। যেটা আমি চেয়েছিলাম।

সমকাল: বর্তমানে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৯২।

জেমি: বাংলাদেশ যেভাবে র‌্যাঙ্কিংয়ে তলানির দিকে যাচ্ছে, তা খুবই লজ্জাজনক। আসলে এটার পরিবর্তন হবেও না, যদি আপনার মূল জায়গা ঠিক না থাকে।

আরও পড়ুন

×