গোল আটকানোতেই তার আনন্দ

ক্রোয়েশিয়াকে কোয়ার্টারে তুলে নেন গোলরক্ষক ডমিনিক লিভাকোভিচ
সাদিক শাহরিয়ার
প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২২ | ২১:৪৩
ছেলেটার জন্ম ক্রোয়েশিয়ার জাদারের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। পরিবারের সবাই উচ্চ শিক্ষিত; যাঁর যাঁর পেশায় ভীষণ সফল। বাবা সাবেক মন্ত্রী। দাদা চিকিৎসক আর দাদি শিক্ষক। স্বাভাবিকভাবেই এমন পরিবারের সন্তানের ওপর সবার বাড়তি প্রত্যাশা। ছোট্ট এই ছেলেও একদিন বাপ-দাদার মতোই পরিবারের নাম উজ্জ্বল করবে। অথচ সেই ছেলে কিনা সবকিছু ছেড়ে-ছুড়ে বেছে নিল ফুটবল! তবে ফুটবল মাঠেও সে ব্যতিক্রম। ছোটবেলায় বন্ধুদের মনোযোগ যখন গোল করায়, ছোট্ট সেই ছেলেটি নিজের সবটুকু আনন্দ খুঁজে পায় গোল আটকানোতে। সেই গোল আটকেই আজ ছেলেটি পুরো দেশের হিরো। গল্পটা জাপানের বিপক্ষে পেনাল্টি শুট আউটে তিন গোল আটকে ক্রোয়েশিয়াকে কোয়ার্টার ফাইনালে নেওয়া গোলকিপার ডমিনিক লিভাকোভিচের।
অথচ ক্যারিয়ারের শুরুতেই যেন মুদ্রার ওপিঠ দেখেছিলেন লিভাকোভিচ। ২০১৭ সালে চীন কাপে চিলির বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ক্রোয়েশিয়ার জার্সিতে অভিষেক হয় এই গোলরক্ষকের। অভিষেকের সেই ম্যাচেই টাইব্রেকারের মুখোমুখি হন লিভাকোভিচ। টাইব্রেকারে তাঁর হাত গলে সহজ বল বেরিয়ে যায় কয়েকবার। গোলরক্ষকের হাস্যকর ভুলেই সেই ম্যাচটি হারে ক্রোয়েশিয়া। তবে বিশ্বকাপের মতো বড় এক মঞ্চে কী দারুণভাবেই না পুরোনো ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করলেন লিভাকোভিচ। সম্পূর্ণ একক নৈপুণ্যে ক্রোয়েশিয়াকে নিয়ে গেলেন বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে। ২০১৮ বিশ্বকাপে রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়ার বিশ্বকাপ দলেও ছিলেন ৬ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতার বিশালাকায় এই গোলকিপার। কিন্তু সেই সময়ের ক্রোয়াট গোলরক্ষক ড্যানিয়েল সুবাসিচের দুর্দান্ত ফর্মের কারণে মাঠে নামার সুযোগ হয়নি লিভাকোভিচের। তবে ২০২০ এর ইউরো কাপে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দিয়ে ক্রোয়েশিয়ার প্রথম পছন্দের গোলরক্ষক হন দিনামো জাগরেবের এই গোলকিপার। আর পরশু জাপানের বিপক্ষে অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স তো লিভাকোভিচকে নিয়ে গেছে রেকর্ডেরই পাতায়। পাঁচটি পেনাল্টি শুট আউটের মধ্যে তিনটিই আটকে দিয়েছেন তিনি, যা বিশ্বকাপের ইতিহাসেই যৌথভাবে সর্বোচ্চ। এর আগে এই কীর্তি গড়েছিলেন কেবল ২০১৮ বিশ্বকাপে লিভাকোভিচের ক্রোয়েশিয়ান সতীর্থ ড্যানিয়েল সুবাসিচ ও ২০০৬ বিশ্বকাপে পর্তুগাল গোলরক্ষক রিকার্ডো।
নিজের এমন পারফরম্যান্সে দারুণ খুশি লিভাকোভিচও। ম্যাচ-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'এটা সত্যিই দারুণ অনুভূতি। দলের জন্য, দর্শকের জন্য এটা বিশেষ কিছু। নিঃসন্দেহে এটা এখন পর্যন্ত আমার ক্যারিয়ারে খেলা সেরা ম্যাচ এবং নিজের জীবনেরও সেরা এক মুহূর্ত।' এদিকে লিভাকোভিচের ওপর পূর্ণ বিশ্বাস ছিল ক্রোয়েশিয়ান অধিনায়ক লুকা মডরিচের। মডরিচ বলেন, 'এটা কঠিন এক ম্যাচ ছিল। তবে তিনটি দুর্দান্ত সেভ করে লিভাকোভিচ আমাদের কাজটি সহজ করে দিয়েছে। হেরে গেলে হয়তো এটাই ক্রোয়েশিয়ার হয়ে আমার শেষ ম্যাচ হতে পারত। তবে খেলা যখন পেনাল্টিতে গড়াল, একবারের জন্যও আমার এমনটা মনে হয়নি। বরং শুট আউটের আগে আমি সবাইকে বলছিলাম, তোমরা চিন্তা করো না; লিভাকোভিচ নিশ্চিত আটকে দেবে।'
বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়া আর পেনাল্টি শুট আউটের মধ্যে যেন এক মধুর সম্পর্ক রয়েছে। বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত নিজেদের তিনটি ম্যাচ পেনাল্টিতে গড়িয়েছে ক্রোয়েশিয়ার। আর তিন ম্যাচের তিনটিতেই জিতেছে ক্রোটায়রা। পরশু জাপানের বিপক্ষে শেষ ষোলোর ম্যাচ ছাড়াও, ২০১৮ বিশ্বকাপের শেষ ষোলো ও কোয়ার্টার ফাইনালের দুটি ম্যাচ পেনাল্টি শুট আউটে জিতেছিল ক্রোয়েশিয়া। স্বাভাবিকভাবেই সামনের নকআউট ম্যাচগুলোতেও পেনাল্টি শুট আউটে নিজেদের এই দুর্দান্ত ফর্ম ধরে রাখতে চাইবে ক্রোয়েশিয়া। সে ক্ষেত্রে সামনে আরও বড় দায়িত্ব চাপবে গোলরক্ষক ডমিনিক লিভাকোভিচের কাঁধেই।