লিটনের আইপিএল ক্যারিয়ার কি শুরুতেই শেষ!

ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২৩ | ০৪:৪০ | আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৩ | ০৪:৪০
‘জীবনে কখনও আশা ছাড়তে নেই, প্রবল ঝড়ের পরেই রংধনু দেখা মেলে।’ ইনস্টাগ্রামে ঠিক এই কথাগুলোই লিখেছেন লিটন কুমার দাস। সেদিন কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে দিল্লির বিপক্ষে তাঁর ওপর দিয়ে যে ঝড় বয়ে গেছে, সেটা স্বীকার করছেন লিটন। সেদিন প্রথম বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়েও আর রান করতে পারেননি। সেই সঙ্গে ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দুই দুটি স্টাম্পিং মিস করেছেন লিটন। বাংলাদেশি এই ব্যাটারকে নিয়ে কলকাতায় যে উন্মাদনা ছিল, সেদিনের পর সেটা আর নেই। কলকাতার ক্রীড়া সাংবাদিক অরিন্দম ব্যানার্জি অন্তত তেমনই মনে করেন। ‘দেখুন লিটন দাসকে খেলানো নিয়ে ভীষণ একটা উন্মাদনা কাজ করেছিল এখনাকার সমর্থকদের মধ্যে। একজন বাঙালি ক্রিকেটারের সাফল্য সবাই কামনা করেছিল। কিন্তু সেদিন দুটি স্টাম্পিং মিসের পর ব্যাপারটা আর তেমন নেই। তার পরও আমরা আশা করছি, তাকে যেন আরেকটি সুযোগ দেওয়া হয়।’
আজ বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে কলকাতার ম্যাচ, এখানে কি সুযোগ মিলবে লিটনের? ‘আমরা নিশ্চত নই। যদিও পয়েন্ট তালিকায় কলকাতার অবস্থান ভালো নয়। মাত্র দুটি জয় রয়েছে তাদের। কোনোভাবেই কম্বিনেশন ঠিক করতে পারছে না তারা।’ উত্তরবঙ্গ সংবাদের ক্রীড়া সাংবাদিক অরিন্দম মনে করেন, আজ না হলেও আরেকটি ম্যাচে হয়তো সুযোগ মিলবে লিটনের। ৫ মে পর্যন্ত আইপিএলে থাকবেন লিটন। তার পর সেখান থেকেই ইংল্যান্ডে যাবেন আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ খেলতে। এই সময়ের মধ্যে কলকাতার ম্যাচ রয়েছে তিনটি। বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ আর পাঞ্জাবের বিপক্ষে।
তবে ইতিহাস বলছে, বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা অভিষেক ম্যাচে কিছু করে দেখাতে না পারলে আর সুযোগ মেলেনি। ২০০৮ সালে আব্দুর রাজ্জাক বেঙ্গালুরু রয়েলসের হয়ে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে একটি ম্যাচ খেলেছিলেন। যেখানে মাত্র দুই ওভার বোলিং করে ২৯ রান দিয়েছিলেন। এর পর মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স দলের সঙ্গে অনেক দিন ঘুরে মোহাম্মদ আশরাফুল সুযোগ পেয়েছিলেন একটিতে। সেই ম্যাচে ১০ বল মোকাবিলা করে আশরাফুল করেছিলেন ২ রান। দুটি ক্যাচ নিয়েছিলেন অবশ্য, তাতে আর পরের ম্যাচে সুযোগ মেলেনি। মাশরাফি বিন মুর্তজার আইপিএল অভিজ্ঞতা ছিল আর ভয়াবহ। দলের সঙ্গে দিনের পর দিন অনুশীলন করে সুযোগ পেয়েছিলেন একটি ম্যাচে। কিন্তু কলকাতার হয়ে সেই ম্যাচে ৪ ওভারে দিয়েছিলেন ৫৮ রান। ২০০৯ সালে জোহানেসবার্গের সেই ম্যাচে শেষ ওভারে ২১ রান দরকার ছিল ডেকান চার্জাসের। মাশরাফির হাতে বল তুলে দিয়েছিলেন কলকাতার অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম। নায়ক হওয়ার সুযোগ ছিল মাশরাফির সামনে। সেদিন রোহিত শর্মা চার ছক্কায় ম্যাচ বের করে আনেন। একবার পুনে দলের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে ম্যাচ খেলার কোনো সুযোগই মেলেনি তামিম ইকবালের।
এর পর আইপিএলে বাংলাদেশিদের ইমেজ বাড়িয়েছিলেন সাকিব আল হাসান আর মুস্তাফিজুর রহমান। সাকিব ২০১১ সালে কলকাতার হয়ে রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ২ উইকেট শিকার করেছিলেন। কলকাতার চ্যাম্পিয়ন দলেরও সদস্য ছিলেন। ২০১১ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সাকিব কলকাতার আর হায়দরাবাদের হয়ে মোট ৭১ ম্যাচ খেলেছেন। ৫২ ম্যাচে ব্যাটিং করে রান করেছেন ৭৯৩, স্ট্রাইক রেট ১২৪.৪৯। উইকেট শিকার করেছেন মোট ৬৩টি। ইকোনমি ৭.৪৪। যদিও এবার তাঁকে পূর্ণাঙ্গ সময় না পাওয়ায় কলকাতা ছেড়ে দিয়েছে। বয়স এবং ফর্ম বিচার করলে আগামী মৌসুমে তাঁর আইপিএল দল পাওয়া চ্যালেঞ্জিং।
সে ক্ষেত্রে মুস্তাফিজ অবশ্য ভালো অবস্থানে থাকবে। ২০১৬ সালে মুস্তাফিজ তাঁর আইপিএলের অভিষেক ম্যাচে হায়দরাবাদের হয়ে ২৬ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছিলেন এবং সেই উইকেট দুটি ছিল ডিভিলিয়ার্স আর ওয়াটসনের। তার পর আর কখনোই ম্যাচ পাওয়ার জন্য তাঁকে হাপিত্যেশ করতে হয়নি। এ পর্যন্ত হায়দরাবাদ, রাজস্থান, মুম্বাই আর দিল্লির হয়ে ৪৮ ম্যাচ খেলে ৪৭ উইকেট শিকার করেছেন। বোলিং ইকোনমি তাঁর ৭.৯৩।
তাই অভিষেক ম্যাচেই যাঁরা কেবল সুযোগ কাজে লাগাতে পেরছেন, তাঁরাই কেবল আইপিএলে স্থায়িত্ব পেয়েছেন। আপাতত সেই সুযোগ হাতছাড়া করে লিটন অপেক্ষায় থাকবেন দ্বিতীয় সুযোগের।