ইউরোতে ইংলিশ সামার

ওলি ওয়াটকিনের কোলে চড়ে হ্যারি কেনের গোল উদযাপন। ছবি: এএফপি
স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৪ | ১৪:০৮ | আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৪ | ১৬:৫৯
বছরের এই সময়টার জন্য তীর্থের কাকের মতো প্রতীক্ষায় থাকেন ইংলিশরা। ঝলমলে রোদ উঠবে, হিম হিম ভাবটা কেটে গিয়ে একটু উষ্ণতার ছোঁয়া পাওয়া যাবে বাতাসে, ফুলে ফুলে সেজে উঠবে প্রকৃতি। দারুণ আবহাওয়ায় ছুটি কাটাতে কোনো সমুদ্রসৈকত, পাহাড় কিংবা উইম্বলডনে সবুজ কোর্টে টেনিস দেখতে চলে যাবেন তারা।
সেই কাঙ্ক্ষিত ঋতুটি এবার কেবল প্রকৃতিতেই আসেনি, ইংলিশ ফুটবলেও ‘সামার’ এসেছে। গ্যারেথ সাউথগেট শিষ্যদের টানা দ্বিতীয়বারের মতো ইউরোর ফাইনালে ওঠা প্রমাণ করে সেরা সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ইংল্যান্ডের ফুটবল।
ইংল্যান্ডের সাধারণ শ্রমিক থেকে শুরু করে রাজা তৃতীয় চালর্স পর্যন্ত উপভোগ করছেন কেইন-সাকাদের এই সাফল্য। ফাইনালে ওঠার পর সাউথগেট শিষ্যদের অভিনন্দন জানিয়ে রাজা চার্লস একটু মজাও করেছেন। শেষ মুহূর্তের নাটকীয়তা বাদ দিয়ে ফুটবলারদের দাপটের সঙ্গে ফাইনাল জেতার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। আগামী রোববার স্পেনের বিপক্ষে ফাইনালের জন্যও শুভকামনা জানিয়ে জাতির রক্তচাপ আর না বাড়ানোর অনুরোধ করেছেন।
মজার ছলে হলেও রাজার এই কথার পেছনে যথেষ্ট কারণ আছে। শেষ ষোলোর ম্যাচে স্লোভাকিয়ার কাছে হারতে হারতে ইনজুরি টাইমে গিয়ে সমতা ফেরানোর পর অতিরিক্ত সময়ে জয় আসে। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে টাইব্রেকারে জয় এসেছে। গত বুধবার রাতে ডাচদের বিপক্ষে সেমিতে ২-১ গোলের জয়ে ৯০ মিনিটে জয়সূচক গোলটি করেন ওলি ওয়াটকিনস। ফাইনালেও কি এমন রুদ্ধশ্বাস কিছু হবে? সে যাই হোক, যেভাবেই হোক না কেন, জয় চায় ইংলিশরা। তাহলেই এই ‘সামার’ পূর্ণতা পাবে।
সেই ১৯৬৬ বিশ্বকাপ জেতার পর আর কোনো ট্রফি ইংল্যান্ড জেতেনি। তবে ট্রফি না জিতলেও সাউথগেটের আমলে চমৎকার ধারাবাহিকতা দেখাচ্ছে ইংল্যান্ড। ২০১৬ সালে ইংল্যান্ড জাতীয় দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০১৮ বিশ্বকাপের সেমিতে উঠেছিল ইংল্যান্ড, ২০২১ ইউরোর ফাইনাল, ২০২২ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল এবং টানা দ্বিতীয়বারের মতো ইউরোর ফাইনালে উঠেছে তারা। এর মধ্যে এবারের ফাইনালকে সেরা অর্জন মনে করছেন সাউথগেট।
এর আগে বিদেশের মাটিতে ইংল্যান্ড কোনো মেজর টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠতে পারেনি বলেই এগিয়ে রাখছেন কোচ, ‘হ্যাঁ, এটাই আমাদের সেরা অর্জন। এটা আরও একটি ল্যান্ডমার্ক। একটা টুর্নামেন্টের টানা দ্বিতীয় ফাইনাল সত্যিকার অর্থেই স্পেশাল। বিশেষ করে দেশ থেকে এত অর্থ ব্যয় করে অনেক সমর্থক এসেছেন আমাদের সাপোর্ট করতে। তাদের এই দায়বদ্ধতার জন্য হলেও কিছু করতে হবে।’ অথচ আসরের শুরুতে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল সাউথগেটকে। অতিসতর্ক ফুটবল খেলার জন্য গ্রুপ পর্বে স্লোভেনিয়ার বিপক্ষে গোলশূন্য ড্রর পর তাঁর দিকে বিয়ারের কাপও ছুড়ে মেরেছিলেন ইংলিশ সমর্থকরা। এখন সে সমালোচকরাই প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন তাঁকে।
এবার ইংল্যান্ডকে ফাইনালে নেওয়াটা সত্যিকার অর্থেই সাউথগেটের জন্য ভীষণ চ্যালেঞ্জিং ছিল। কারণ, আসরের আগে তাদের হট ফেভারিট ভাবা হলেও আচমকাই ছন্দ হারিয়ে বসেন তারকারা। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে অসামান্য এক মৌসুম কাটানো জুড বেলিংহাম, প্রিমিয়ার লিগের সেরা হওয়ার ম্যানসিটির ফিল ফোডেন, বায়ার্ন মিউনিখে প্রথম মৌসুমেই রেকর্ড করা হ্যারি কেইনরা সবাই একসঙ্গে ছন্দ হারিয়ে বসেন।
তবে এই কঠিন সময়েও দলের অভ্যন্তরে কোনো অস্থিরতা তৈরি হতে দেননি ৫৩ বছর বয়সী এ কোচ। তারকারা ছন্দে না থাকলেও শুরুর একাদশ থেকে তাদের কাউকে বাদ দেননি। তাই বলে কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতেও পিছ পা হননি। এই যেমন সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে টাইব্রেকারে তারকাদের বাদ দিয়ে আইভান টনি, আলেকজান্ডার আর্নল্ড, কোল পারমাদের মতো তরুণদের শট নিতে পাঠান। বুধবারও খেলা শেষ হওয়ার ১০ মিনিট আগে হ্যারি কেইনকে উঠিয়ে নিয়ে তরুণ স্ট্রাইকার ওয়াটকিনসকে মাঠে নামান। আর এই চালেই কিস্তিমাত!
- বিষয় :
- ইউরো-২০২৪
- হ্যারি কেন