ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

আর্জেন্টিনা-কলম্বিয়া

কোপার শেষ দৃশ্যে মেসি-ডি মারিয়া

সোমবার সকাল ৬টায়

কোপার শেষ দৃশ্যে মেসি-ডি মারিয়া

মেসি-ডি মারিয়া

 সঞ্জয় সাহা পিয়াল

প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৪ | ০১:২৯ | আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২৪ | ০৮:৫১

আরাধ্যের বিশ্বকাপ তিনি দু’বছর আগেই স্পর্শ করেছেন। তারও আগে কোপা জিতে আত্মদীপ জ্বালিয়েছেন। ক্লাবের হয়ে সব ধরনের ট্রফি, সারি সারি ব্যালন ডি’অর, আর্জেন্টিনার হয়ে গায়ে গায়ে দু-দুটি বৈশ্বিক শিরোপা– প্রতিটির আবেশে মেসির পূর্ণতা। নিজের জন্য ফুটবল ঈশ্বরের কাছে তাঁর চাওয়ার আর কিছু নেই, সে কথা তিনি দোহায় সেই রাতেই বলে দিয়েছেন। বিশ্বকাপের সেই অমৃত সুধা পান করে একটি প্রজন্মের কাছে তিনি শান্তি-সুখের বাকি জীবন; আর নতুন প্রজন্ম, যারা তাঁর মুগ্ধতায় বশ হয়েছে মাত্র, তারা যে আরও ‘একবার’ চায় মেসির মাথায় ত্রিমুকুট দেখতে। উত্তর প্রজন্মের সেই দ্রোহে, কোলাহলে, লাস্যেই নিজের শেষ কোপার ফাইনালে (সোমবার সকাল ৬টা) কলম্বিয়ার বিপক্ষে নামছে আর্জেন্টিনা। শেষবারের মতো একসঙ্গে তারা দু’জন– সামনে মেসি, তাঁর একটু পিছে ডি মারিয়া। বেলা শেষের গান তাই কোপার ফাইনালে।

সলিড ডিফেন্স, সেরা মিডফিল্ড, সেরা অ্যাটাকিং, গোলপোস্টের নিচে আস্থার গ্লাভস– সব কিছুতেই কলম্বিয়ার চেয়ে এগিয়ে আর্জেন্টিনা। কিন্তু কোথায় গিয়ে যেন এই দলটির একটি তাড়না লাগে, সুখের মাঝেও কান্নার দরকার পড়ে! গত বিশ্বকাপ ফাইনালের আগে যেমন গোটা দল মেসির জন্য আবেগে আন্দোলিত ছিল, ফ্রান্সের বিপক্ষে মর্যাদার লড়াই তাদের ক্ষিপ্ত করে তুলেছিল। হামেস রদ্রিগেজদের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে সেই ঝাকুনিটা এবার বোধ হয় তারা নিজেরাই দিয়ে রেখেছে। ১৬টি বছর ধরে আর্জেন্টিনা দলের হয়ে ১৪৪ ম্যাচ খেলে যাওয়া উইঙ্গার অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার আজই শেষ ম্যাচ। বন্ধু ‘মারিয়ার জন্য আমাদের ফাইনালে উঠতেই হবে’– কিছুদিন আগে লকার রুমে মেসির এই স্পর্শী বার্তায় চোখের জল পড়েছিল মারিয়ার। কালও নিশ্চয় সেই মারিয়ার জন্যই টানা দ্বিতীয়বারের মতো কোপা জিততে চাইবে আলবিসেলেস্তেরা। রোজারিওর কিছু মিডিয়ায় এমনও খবর বের হয়েছে, বন্ধু মারিয়ার মতো মেসিরও হতে পারে আর্জেন্টিনার হয়ে শেষ ম্যাচ। খবরটি তিনি আগে জানাননি এই কারণে, তাহলে মারিয়ার শেষের মঞ্চটা মলিন হয়ে যেতে পারে। তবে নির্ভরযোগ্য কোনো মিডিয়ায় অবশ্য এ খবর আসেনি।

তবে যে খবর এসেছে, তাতে মায়ামির হার্ডরক স্টেডিয়ামে কলম্বিয়ার সমর্থকদের হলুদের আধিক্য থাকবে। প্যারিস থেকে মায়ামিতে থিতু হলেও ফাইনালে নাকি প্রবাসী কলম্বিয়ানদের উপস্থিতিই বেশি থাকবে। তা ছাড়া ২৩ বছর পর কোপার ফাইনাল খেলতে নামছে এসকোবারের দেশের ছেলেরা। এই আন্দ্রেজ এসকোবারের কথা মনে আছে কি? ১৯৯৪ বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আত্মঘাতী গোল করার পর দেশে ফিরে আততায়ীদের বন্ধুক হামলায় মারা গিয়েছিলেন  এসকোবার। ৩০ বছর আগের এই কষ্ট আর্জেন্টাইনদের হৃদয়েও গেথে আছে। সেবার এই যুক্তরাষ্ট্র থেকেই ড্রাগ নেওয়ার অভিযোগে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন দিয়েগো ম্যারাডোনা। সেই মার্কিন মুল্লুক থেকেই এবার ১৬তম কোপার শিরোপা জয়ের সুযোগ আর্জেন্টিনার সামনে। অন্যদিকে কলম্বিয়ার সামনে দ্বিতীয় কোপা শিরোপা জয়ের হাতছানি।

১২ নম্বর র‍্যাঙ্কিংয়ে থাকা লাতিনের এই দলটি গত ২৮ ম্যাচ অপরাজিত। দলের আর্জেন্টাইন কোচ নেস্তর লরেনজো কিন্তু আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলাতে পছন্দ করেন। আর এভাবেই তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর কলম্বিয়া ২২ ম্যাচে জয় পেয়েছে। ব্রাজিল, উরুগুয়ের মতো দলকে হারিয়ে তারা ফাইনালে এসেছে। তবে কাল দলের অন্যতম ভরসা রাইট-ব্যাক ড্যারিয়েল মুনোজ কার্ড নিষেধাজ্ঞা থাকায় খেলতে পারছেন না। ৪-২-৩-১ ফরমেশনে করডোভা, দিয়াজ, রদ্রিগেজ রয়েছেন দারুণ ফর্মে। ২০২১ সালের কোপাতে এই কলম্বিয়াকে সেমিতে টাইব্রেকারে (নির্ধারিত সময়ে ১-১ গোলে ড্র) হারিয়েছিল মেসির আর্জেন্টিনা। তার পর ২০২২ সালের জানুয়ারিতেও কলম্বিয়ানরা হেরেছিল মেসিদের কাছে। রেকর্ড বলছে ৪২ বারের মুখোমুখিতে আর্জেন্টিনা ২৫ এবং কলম্বিয়া জিতেছে ৯ বার।

তবে মায়ামির ফাইনালে কলম্বিয়া যে আর্জেন্টিনাকে কঠিন চ্যালেঞ্জে ফেলবে, তা বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন ইএসপিএনের সাংবাদিক লিজি বেকারানো। তাঁর যুক্তি– আর্জেন্টিনা এ পর্যন্ত গ্রুপ পর্ব থেকে শুরু করে কানাডা, চিলি, পেরুর মতো কমশক্তির দলগুলোর বিপক্ষে জিতেছে। একমাত্র ইকুয়েডরের সঙ্গে যা একটু পরীক্ষা দিতে হয়েছে মেসিদের। সেখানে কলম্বিয়ার সঙ্গেই তাদের হাডাহাড্ডি লড়াই দিতে হবে। যে দলগুলো আক্রমণাত্মক খেলে, তাদের সামনে শেষ দিকে আর্জেন্টিনা দলের কিছু দুর্বলতা চোখে পড়েছে এই সাংবাদিকের। কাতার বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস ও ফ্রান্সের কাছে শেষ দিকে আর্জেন্টিনার ডিফেন্স আলগা হয়ে পড়েছিল। সেটা ধরেই হয়তো সতর্ক আর্জেন্টিনার কোচ ৪-৪-২ ফরমেশনেই দলকে সাজাচ্ছেন। যেখানে শুরুর একাদশে মেসির পাশে আলভারেজকে রাখতে পারেন তিনি। মাঝ মাঠে ডি মারিয়া, ডি পল, ফার্নান্দেজ ও ম্যাক অ্যালিস্টার থাকতে পারেন। ডিফেন্সে মন্টিয়েল, রোমেলো, তাগলিয়াফিকো ও লিসান্দ্রো।

আর্জেন্টিনার এই ‘মেসি-মারিয়া’ ফাইনালে ছড়িয়ে পড়ুক মায়া, পড়ন্ত বেলার সূর্যের আলোয় ম্লান হয়ে যাক বাকিরা। আকাশি-সাদা প্রতিটি প্রজন্মের তো এটাই চাওয়া।

আরও পড়ুন

×