ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

‘মেসি জেনারেশন’

‘মেসি জেনারেশন’

গোল করে মেসির কাছে ছুটে যান লাওতারো মার্টিনেজ। ছবি: এএফপি

নাজমুল হক নোবেল

প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৪ | ১২:৩৮ | আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২৪ | ১৪:১৪

চোট পেয়ে লিওনেল মেসি যখন মাঠ ছাড়েন, তখন স্টেডিয়ামে আর্জেন্টাইন সমর্থকদের চোখ ছলছল করে উঠেছিল। কোপা আমেরিকা জেতার জন্য যিনি তাদের ভরসা ছিলেন, সেই তিনিই তো মাঠ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন! নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি মেসিও। বেঞ্চে বসে শিশুর মতো কেঁদেছেন; অনেকটা ২০১৬ সালে চিলির বিপক্ষে ফাইনালে পেনাল্টি মিস করে কোপার শিরোপা হারানোর মতো। 

তবে এবার হারের বোঝা মাথায় নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়নি তাঁকে। মেসি ফুলে ঢোল হয়ে ওঠা পা নিয়ে ডাগআউটে বসে থাকলেও শিরোপা আর্জেন্টিনা ঠিকই জিতেছে। অতিরিক্ত সময়ে লাওতারো মার্টিনেজ দারুণ এক গোল করে কোপার রেকর্ড ১৬ নম্বর শিরোপা এনে দেন আর্জেন্টিনাকে।

কোপা-বিশ্বকাপ-কোপা... যেন একটি বৃত্ত পূরণ। লাতিন আমেরিকার প্রথম দেশ হিসেবে এই নজির গড়ল আর্জেন্টিনা। তিন বছরে ৩টি মেজর ট্রফিজয়ী লিওনেল মেসির নেতৃত্বাধীন দলকে অনেকেই আর্জেন্টিনার ইতিহাসের সেরা দলের মর্যাদা দিচ্ছেন। কেউ কেউ আবার এই দলটিকে ‘মেসি জেনারেশন’ বলছেন। এই দলের ফুটবলাররা নাকি মেসির জন্য খেলেন! মেসিকে ভালোবেসে খেলেন! এর প্রমাণ মেলে রোববার গোলের পর। ১১২ মিনিটে লে সেলসোর পাস ধরে কোনাকুনি শটে কলম্বিয়ার জালে বল পাঠানোর পর সোজা ডাগআউটে বসা মেসির দিকে ছুটে যান লাওতারো। জড়িয়ে ধরেন তাঁকে। ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফুটবলারের প্রতি সতীর্থদের ভালোবাসা ও সম্মান হলো এই দলের ভিত্তি।

তবে এখন সাফল্যের সাগরে ভাসলেও এই দলটির শুরুটা কিন্তু ছিল ভীষণ হতাশার। বিশ্বকাপ ও কোপাসহ বেশ কয়েকটি ফাইনালে হেরেছিল তারা। এর মধ্যে ২০১৬ সালে কোপার ফাইনালে হারের পর হতাশা-যন্ত্রণায় অবসরই নিয়ে ফেলেছিলেন মেসি। যদিও দুই মাস পরই সিদ্ধান্ত পাল্টে ফিরে এসেছিলেন তিনি। ২০২১ সালে ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। 

কোপা জিতে প্রথমবারের মতো আকাশি-সাদা জার্সিতে প্রথম কোনো শিরোপায় চুমু খান মেসি। দূর হয় আন্তর্জাতিক ট্রফি ছাড়া তাঁর ক্যারিয়ার শেষ হওয়ার শঙ্কা। সে সঙ্গে ঘোচে আর্জেন্টিনার ২৮ বছরের শিরোপা খরা। পরের বছরই কাতারে ধরা দেয় সেই আরাধ্য বিশ্বকাপ। মরুর বুকে সেই কাঙ্ক্ষিত ট্রফি উঁচিয়ে ধরে দিয়েগো ম্যারাডোনার মতো ফুটবল ইতিহাসে আর্জেন্টিনার আরও একজন আইকন হিসেবে প্রতিষ্ঠা পান মেসি। 

আর গত রোববার তিন ট্রফির বৃত্ত পূরণ করে বিরল এক রেকর্ডের মালিক বনে গেছেন তিনি। এই কৃতিত্ব আছে কেবল জাভি-ইনিয়েস্তার স্পেনের। ২০০৮ থেকে ২০১২ সালে তারাও ইউরো-বিশ্বকাপ-ইউরো জিতেছিলেন। 
আর্জেন্টিনার এই দলটির প্রশংসায় সবচেয়ে উচ্চকণ্ঠ কোচ লিওনেল স্কালোনির। 

কলম্বিয়াকে হারিয়ে কোপা জয়ের পর তিনি বলেন, ‘এই দলটি ধারাবাহিকভাবে সবাইকে চমক দিয়ে যাচ্ছে। ভীষণ কঠিন এক প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সব বাধা তারা অতিক্রম করে এসেছে প্রথমার্ধটা ভালো না খেলেও। আমার মনে হয়, দ্বিতীয়ার্ধে আমরা বেশ উন্নতি করেছি এবং জয়টা আমাদের প্রাপ্য ছিল। অতিরিক্ত সময়ে গিয়ে আমরা মাটি কামড়ে পড়ে থেকে লড়াই করেছি, যার পুরস্কার আমরা পেয়েছি।’ 

এই ফাইনালে আর্জেন্টিনার সোনালি প্রজন্মের শেষের শুরুও হয়ে গেছে। জাতীয় দলের পক্ষে এটাই হয়তো বা মেসির শেষ ফাইনাল। অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া ও নিকোলাস ওটামেন্ডি তো শেষের ঘোষণা দিয়েই ফাইনালে নেমেছিলেন। এই দলটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন ডি মারিয়া। মেসির কারণে পুরো ক্যারিয়ারজুড়েই তিনি কিছুটা আড়ালে ছিলেন বলেও আক্ষেপ করেন অনেকে। 

কোচ স্কালোনি ৩৬ বছর বয়সী এ উইঙ্গারের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন, ‘অ্যাঞ্জেল অসংখ্য অসাধারণ ম্যাচ খেলেছে। তবে আজকের ম্যাচটি ছিল তার ক্যারিয়ার সেরা। সে ভালো খেলেছে। চাপের মুখে নিজেকে দারুণভাবে তুলে ধরেছে। সে একজন কিংবদন্তি। এমন সিনেমার মতো বিদায় তাঁর প্রাপ্য।’ তবে কোচ বলেছেন, মেসির কিন্তু এটা শেষ ম্যাচ নয়। অচিরেই তিনি মেসির সঙ্গে আলোচনায় বসবেন। যে কোনো মূল্যে আগামী বিশ্বকাপ পর্যন্ত তাঁকে রেখে দেওয়ার চেষ্টা করবেন।

মেসি, ডি মারিয়াকে পেছনে ফেলে লাওতারো মার্টিনেজের পা থেকে আসা জয়সূচক গোলটি প্রজন্মের ব্যাটন বদলও। বেঞ্চ থেকে ইন্টার মিলানের এই স্ট্রাইকার কেবল ফাইনালেই গোল করেননি, আসরের সেরা গোলদাতাও হয়েছেন। তাঁর সঙ্গে জুলিয়ান আলভারেজ, জিওভান্নি লে সেলসো, নিকোলাস গঞ্জালেস, আলেকজান্ডার গার্নাচো এখন মেসি-ডি মারিয়ার ব্যাটন বহন করে নিয়ে যাবেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দিকে।

আরও পড়ুন

×