ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

ক্রীড়াঙ্গনে সার্চ কমিটি

ব্যক্তি নয়, সিস্টেমে পরিবর্তন

ব্যক্তি নয়, সিস্টেমে পরিবর্তন

ছবি- সংগৃহীত

ক্রীড়া প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০২৪ | ১২:৫৫

কেউ এক যুগেরও বেশি, আবার কেউ বা ৪০ বছর ধরে ফেডারেশন বা অ্যাসোসিয়েশন আঁকড়ে ধরে আছেন। প্রভাব খাটিয়ে ক্রীড়াঙ্গনে ঢুকে রাজনৈতিক পরিচয়ে নানা ফায়দা লুটে নিচ্ছেন সুবিধাবাদী ওই সব কর্মকর্তা। সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসে যতটা না ক্রীড়ামোদি হওয়ার কথা, সেটা না করে ওই সব ব্যক্তি পদটাকে করেছেন কুক্ষিগত। সরকার পতনের পর তাদের অনেকেই এখন লাপাত্তা। বেশির ভাগ ফেডারেশনের সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক এখন আত্মগোপনে। 

তরুণ প্রজন্মের হাত ধরে যে নতুন বাংলাদেশের সূচনা হয়েছে, তার ছোঁয়া লেগেছে দেশের ক্রীড়াঙ্গনেও। অন্য সব প্রতিষ্ঠানের মতো ক্রীড়াঙ্গনেও সংস্কার আনার পদক্ষেপ নিয়েছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। তারই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার পাঁচ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করেছে সংস্থাটি। যে কমিটির প্রধান হলেন সাবেক জাতীয় ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়ন জোবায়েদুর রহমান রানা। সার্চ কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন– সাবেক হকি খেলোয়াড় মেজর (অব.) ইমরোজ আহমেদ, প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, ক্রীড়া সংগঠক মহিউদ্দিন আহমেদ বুলবুল ও জ্যেষ্ঠ ক্রীড়া সাংবাদিক এম এম কায়সার।

সার্চ কমিটি বিভিন্ন ফেডারেশন, ক্রীড়া সংস্থার গঠনতন্ত্র, নির্বাচন প্রক্রিয়া, প্রতিনিধি মনোনয়ন বা নির্বাচন; সার্বিক কর্মকাণ্ড, বিদেশে যাওয়ার নীতিমালা ইত্যাদি বিষয়ে পর্যালোচনাপূর্বক প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাব পেশ করবে। কমিটিকে সহায়তা করবেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (ক্রীড়া-১) এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব। দেশের পঞ্চাশের বেশি ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ছিলেন আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদরাই। তাই প্রতিটি ফেডারেশনে সংস্কার আনতেই গঠন করা হয়েছে এই কমিটি। এ সপ্তাহেই সার্চ কমিটির মিটিং হওয়ার কথা। কমিটির কর্মপরিকল্পনা কী হতে পারে কিংবা কাজটা কতদূর পর্যন্ত যেতে পারে, সেটা নিয়ে আলোচনা করবেন সদস্যরা। 

এর পরই কর্মপরিধির চূড়ান্ত ধাপে হাঁটতে পারেন বলে শুক্রবার সমকালের কাছে বলেছেন সার্চ কমিটির অন্যতম সদস্য জ্যেষ্ঠ ক্রীড়া সাংবাদিক এম এম কায়সার। তবে সংস্কার মানেই ব্যক্তি বদল নয়, সিস্টেমের সংস্কারের পক্ষে নিজের ব্যক্তিগত মত দিয়েছেন তিনি, ‘কেবল ব্যক্তি বদল করলেই যে লাভ হয়ে যাবে, তা কিন্তু না। ব্যক্তি পরিবর্তনের বদলে আমি চাচ্ছি কাঠামোগত একটা পরিবর্তন। সংস্কার মানেই সবকিছু শেষ করে দেওয়া না। সংস্কার মানে সিস্টেমটাকে সুন্দর করা। একটা সুন্দর সিস্টেমের মধ্যে যদি আপনি কোনো কিছুকে দাঁড় করাতে পারেন, তাহলে দেখবেন পরবর্তী সময়ে যারা আসবেন, তখন লোক বদলের দরকার হবে না। নতুন সিস্টেম অনুযায়ী সবাই কাজ করতে পারবে। নতুন কমিটি এসে যেন বারবার গঠনতন্ত্র পরিবর্তন না করে ওই সিস্টেমের মধ্যে থেকেই যেন কাজ চালিয়ে যেতে পারে।’ 

অনেকে যুগের পর যুগ ফেডারেশন আঁকড়ে ধরাতে নতুন নেতৃত্ব উঠে আসছে না বলে মনে করেন এম এম কায়সার, ‘আমরা দেখেছি, কোনো ফেডারেশন কিংবা অ্যাসোসিয়েশনগুলোতে লম্বা সময় ৩০ থেকে ৪০ বছর ধরে আঁকড়ে আছেন একই লোক। তার মানে নতুন নেতৃত্বের সংকট। লিডারশিপটা সৃষ্টি হয়নি বলেই হয়তো অনেকে বাধ্যতামূলকভাবে দায়িত্বটা পালন করছেন। এটা তো কোনো সিস্টেম হতে পারে না। আমরা এই সিস্টেমে একটা বদল আনতে চাচ্ছি।’

দেশের ক্রীড়া ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশনে যারা আছেন, তাদের বেশির ভাগই রাজনৈতিক দলের। তাই অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, ফেডারেশনকে নিজের ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক স্বার্থে ব্যবহার করেছেন। এই বিষয়গুলোতে কঠোরভাবে দৃষ্টি দেওয়া হবে বলে জানান এম এম কায়সার, ‘রাজনৈতিকভাবে কেউ যেন ফেডারেশন বা অ্যাসোসিয়েশনকে ব্যবহার করে সুবিধা আদায় করতে না পারে, সেই ব্যবস্থাটুকু করার অন্তত আমার চিন্তা-ভাবনা আছে। স্পোর্টসের মানুষ, স্পোর্টসের উন্নতি করতে আসছেন– এটাই যেন হয়। আমার প্রশ্ন হলো– এসব অ্যাসোসিয়েশন বা ফেডারেশনে যারা আছেন, তাদের পালাতে হবে কেন? মানুষ তো রাজনীতির বাইরে না। একেকজন একেকটা দল করতেই পারেন। কিন্তু আপনি যখনই কোনো সংস্থা বা অ্যাসোসিয়েশনের দায়িত্ব নেবেন, তখন কিন্তু আপনাকে মনে করতে হবে যেন আমার রাজনৈতিক পরিচিতিটা এই সংগঠনে ব্যবহার করতে না পারি। সেটা হলে প্রতিটি ফেডারেশন, অ্যাসোসিয়েশন এগিয়ে যেতে পারবে।’

আরও পড়ুন

×