ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

সাক্ষাৎকারে সালাউদ্দিন

‘কোচরাও স্বাধীনতা পেয়েছে’

‘কোচরাও স্বাধীনতা পেয়েছে’

ছবি- সংগৃহীত

সেকান্দার আলী

প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১১:৩২

জাতীয় দলের সহকারী ও ফিল্ডিং কোচ হিসেবে ২০০৬ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত কাজ করেছেন মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। বিসিবি একাডেমির কোচ হিসেবেও নিয়োগ পেয়েছিলেন। লম্বা বিরতি দিয়ে জাতীয় দলের সিনিয়র সহকারী কোচ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন তিনি। ফিল সিমন্সের সহকারী হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দারুণ কিছু সাফল্যের সঙ্গী হতে পেরেছেন সালাউদ্দিন। জাতীয় দলে এবারে তিনি কাজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন সেকান্দার আলীকে

সমকাল: অনেক বছর পর জাতীয় দলে কাজ করে কেমন লাগল?
সালাউদ্দিন:
আমার কাছে ভালোই লেগেছে, অনেক দিন পর জাতীয় দলের সঙ্গে ছিলাম। খুব বেশি নতুনও লাগেনি। মনে হয়েছে পুরোনো সম্পর্ক। ছেলেদের সবাইকে যেহেতু চিনি-জানি, তাই ভালো সময় কেটেছে।

সমকাল: ক্রিকেটাররা বলছিলেন– আপনি সবার সবল-দুর্বল দিকগুলো জানায় হেড কোচকে সহজে বোঝাতে পেরেছেন। তারা স্বাধীনভাবে খেলার সুযোগ পেয়েছেন। বিষয়টি কি তাই?
সালাউদ্দিন:
হ্যাঁ, কারণ হলো আমাদের হেড কোচ অনেক ইতিবাচক। তিনি ছেলেদের ইতিবাচক দিকগুলো খেয়াল রাখেন। আমরা যারা কোচিং স্টাফ ছিলাম, তারাও স্বাধীনতা পেয়েছি। আমরা ছেলেদের কাছে জানতে চেয়েছি, তারা কীভাবে খেলতে চায়। তাদের পরিকল্পনা কী। আমার মনে হয়, হেড কোচের এই পরিকল্পনাটা ছেলেদের ভালো খেলতে সাহায্য করেছে।

সমকাল: সব সময় শুনে এসেছি, বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা পাওয়ার হিটিং পরেন না। এবার দেখা তো বেশি চার-ছক্কা বাংলাদেশের। এই পরিবর্তন কীভাবে সম্ভব হলো?
সালাউদ্দিন:
টেকনিক্যালি আমরা ভালো হচ্ছি। সেই সঙ্গে মানসিক চিন্তা-ধারায় পরিবর্তন এসেছে। টেস্ট থেকে আমরা উপলব্ধি করেছি, কীভাবে ক্রিকেটা খেলতে হবে। প্রতিপক্ষের বোলার অনুযায়ী ব্যাটিং কৌশল ঠিক করা হয়েছে। আমরা প্রতিপক্ষের সবল-দুর্বল দিক মাথায় রেখে কৌশল অনুযায়ী খেলতে পারছি কিনা, সেটা নিয়ে কাজ করেছি।

সমকাল: বাংলাদেশের ওপেনিং ধারাবাহিক ফেল করায় মিডল অর্ডার থেকে ওপেন করতে হয়। যেটা চাপ এবং বড় স্কোর করায় অন্তরায়। এই জায়গায় কীভাবে পরিবর্তন আনতে চান?
সালাউদ্দিন:
এটা কারও একার পক্ষে সম্ভব না। দলের সবারই চাইতে হবে। খেলোয়াড় এবং কোচিং স্টাফ সবারই চাইতে হবে। খেলোয়াড়রা যখন চাইবে, তখনই পরিবর্তন হবে। তবে আমি ছেলেদের অনেক মানসিক পরিবর্তন দেখেছি। সামনে হয়তো ভালো করবে। আশা করা যায় ধারাবাহিক হবে।

সমকাল: ক্রিকেট জেনারেশন বদলে গেছে। প্রথম মেয়াদে পেয়েছিলেন সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, মাশরাফিদের। এখন নতুন প্রজন্ম। এই জেনারেশন কি আগের জেনারেশনকে ছাড়িয়ে যেতে পারবে?
সালাউদ্দিন:
না পারার তো কোনো কারণ নেই। আমরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অনেক বছর ধরে খেলছি। আমার মতে, এখন সবার চিন্তা-ভাবনা অনেক পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন এবং হচ্ছেও। আমার মনে হয়, তারা অনেক ভালো ক্রিকেট খেলবে।

সমকাল: বোলিং ইউনিট কি পরিপূর্ণ?
সালাউদ্দিন:
শুধু পেস বোলার না, স্পিনাররাও ভালো বোলিং করেছে। দিনে দিনে তারা ভালো করবে। টি২০তে দুটি ইউনিট ভালো করাতে ফল এসেছে। বোলিং ইউনিট অনেক পরিণত। তারা নিজেরা পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যেটা ওয়ানডেতে হয়তো করতে পারিনি। টি২০তে খুব দ্রুত ধরতে পেরেছি। যত দিন যাবে, ছেলেরা আরও পরিণত হবে। নিজেদের বোলিং স্ট্রেন্থ অনুযায়ী বোলিং করবে। পিচ বুঝে বোলিং করা শিখে যাবে। এবার যেটা সবচেয়ে ভালো লেগেছে, উইকেট দেখে তারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কীভাবে বোলিং করবে। এ কারণেই আমি বলব, তারা আরও পরিণত হলে ভালো বোলিংয়ে উন্নতি হবে।

সমকাল: বাংলাদেশের বোলিং ইউনিটে বাঁহাতি স্পিনার শক্তির জায়গা ছিল। এখন সেখানে কিছুটা শূন্যতা তৈরি হয়েছে কি?
সালাউদ্দিন:
অনেক জায়গায় উন্নতি করার সুযোগ আছে। আমরা সেগুলো খুঁজে বের করেছি। কোন কোন জায়গায় উন্নতি করতে হবে, সেগুলো নিয়ে কাজ করা হবে। বিশেষ করে ওয়ানডে ক্রিকেটে কীভাবে বোলিং করতে হবে, তা নিয়ে পরিকল্পনা আছে। এ রকম অনেক কিছু আছে, যেগুলো বলা যাবে না। সেখানে উন্নতি করার জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে কাজ করব।

সমকাল: ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিপিএল মাঠে থাকে। টি২০ লিগ শেষেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রস্তুতি নিতে হবে। সেটা নিয়ে কোনো পরিকল্পনা?
সালাউদ্দিন:
প্রধান কোচ এলে হয়তো কীভাবে ক্যাম্প করব, সেটা নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে। যেহেতু ছেলেরা বিপিএল খেলবে, আমরা খেলা দেখব। তারা কীভাবে খেলছে বোঝার চেষ্টা করব। অবশ্যই ছেলেদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকবে। কে কী করছে, না করছে সেখানে নজর রাখার চেষ্টা করব।

সমকাল: দেশি কোচ হিসেবে আপনি কি প্রত্যাশামতো কাজ করতে পারছেন?
সালাউদ্দিন:
আমি যখন কাজে থাকি, তখন একটাই লক্ষ্য থাকে– খেলোয়াড়দের সঙ্গে যোগাযোগটা ঠিক রাখা। সঠিক ইনপুট দেওয়া। এই জিনিসগুলো নির্ভর করে নির্দিষ্ট খেলোয়াড়ের ওপর। আমার মনে হয়, খেলোয়াড়দের সঙ্গে যোগাযোগটা ভালো ছিল। সামনে কীভাবে আরও ভালো যোগাযোগ করতে পারি এবং কাজ বুঝে নিতে পারি, সেদিকে লক্ষ্য রাখব।

সমকাল: বিদেশি হেড কোচের সঙ্গে বোঝাপড়াটা ভালো হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। যেটা আগে জেমি সিডন্সের সঙ্গে আপনার ছিল। জানতে পেরেছি, বর্তমান কোচের সঙ্গেও সুসম্পর্ক রয়েছে।
সালাউদ্দিন:
তিনি আমাকে যথেষ্ট স্বাধীনতা দিয়েছেন। খেলোয়াড়দের চিন্তাধারা কেমন, তা জানতে চেয়েছেন। আমি মিটিংয়ে বলতাম ছেলেরা কীভাবে চিন্তা করছে। তিনি সব সময় ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরতেন, যেটা ছেলেদের ভালো খেলতে সহায়ক ছিল।

সমকাল: চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেমিফাইনাল খেলতে পারবেন?
সালাউদ্দিন:
আমি কোনো নির্দিষ্ট টুর্নামেন্ট নিয়ে ভাবছি না। আমাদের লক্ষ্য থাকবে ছেলেদের উন্নতি করা। তারা যেভাবে খেলছে, ইতিবাচক মানসিতা দেখাচ্ছে তাতে আশা করা যায় ভালো কিছু করবে। আমরা কীভাবে ভালো খেলব, কীভাবে বেটার ক্রিকেট খেলব; সেগুলো নিয়ে কাজ করা হবে।

সমকাল: জাকের আলী, শামীম হোসেনকে লড়াকু ক্রিকেটার বলা হচ্ছে। কেমন উপভোগ করলেন তাদের ব্যাটিং?
সালাউদ্দিন:
দেখুন, যখন আপনি ওই পজিশনে ব্যাট করবেন, তখন সেভাবেই ক্রিকেট খেলতে হবে। যারা মিডল অর্ডার বা স্লগে ব্যাটিং করে, তাদের মূল কাজই হচ্ছে রানের চাকা সামনের দিকে নিয়ে যাওয়া। তাদের রোলটাই ওই রকম থাকে। এ কারণে তাদের খেলাটা দেখতেও একসাইটিং লাগে। এক একটি পজিশনের রোল একেক রকম থাকে। তারা সেটা করতে পারছে কিনা, সেটাই জরুরি বিষয়।

আরও পড়ুন

×